
১.
ক্যানটিন চত্বর। কৌতূহলী মানুষের বড় রকমের জটলা। হইহল্লা ও ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকি। উট! আস্ত একটা উট মাটিতে শুয়ে! অনেকক্ষণ ধরেই মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করছে উটটি। একপর্যায়ে উঠে দাঁড়াল সে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাততালি, চিৎকার—‘উঠছে...উঠছে...উঠছে...।’ কিন্তু হঠাৎ এফডিসিতে উট কেন?
পাশ থেকে একজন বললেন, ‘আমরা তো সৌদি আরবে আইছি!’ একজনকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘৯ নম্বর ফ্লোরে গিয়া আসল ঘটনা দেইখ্যা আসেন।’
৯ নম্বর ফ্লোরের মূল দরজায় তখন বেশ কিছু মানুষের উঁকিঝুঁকি। ওই দলে আমরাও। প্রবেশমুখেই একজন বললেন, ‘ভেতরে বিজ্ঞাপনের শুটিং হইতাছে।’ ভেতরে ঢুকে তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়—সৌদি আরবের মরুভূমিতে চলে এলাম নাকি! ফ্লোরজুড়ে সৌদ মরুভূমির আদলে সেট। চারপাশে ছোট ছোট তাঁবু। মাঝখানে একগুচ্ছ কাঠে আগুনের কুণ্ডলী। কুণ্ডলী ঘিরে আরবীয় পোশাকে মানুষ। তাদের হাতে সংগীতের যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে মাঝখানে দাঁড়িয়ে লোকেশন বুঝিয়ে দিচ্ছেন গাজী শুভ্র। এবার তিনি মনিটরের সামনে এসে বসলেন। ‘ক্যামেরা রেডি...গো ফর টেক...।’ বিজ্ঞাপন চিত্রটির পরিচালক শুভ্রর চিৎকার। তারপর ‘অ্যাকশন’ বলতেই ‘মারহাবা, মারাহাবা...’—ক্যাসেট প্লেয়ারে বেজে উঠল গান। ক্যামেরা চলছে। কিন্তু না, হলো না। ‘কাট, কাট...।’ থেমে গেল ক্যামেরা। সেটে একজনকে তিনি বললেন, ‘গানের সঙ্গে তোমার হাত-পা তো ঠিকমতো নড়ছে না। ভালো করে জিনিসটি মাথায় নাও।’
গাজী শুভ্র বললেন, ‘বাইরে উট দেখলেন না? ওই উট নিয়েই উদ্ভট কাণ্ড হবে এবার। আগামী ঈদের জন্য পণ্যের অফার হবে উট। বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে, পণ্য কিনলেই উট উপহার। হা হা হা...।’
২.
৪ নম্বর ফ্লোরের সামনে হঠাৎ সাদা একটি গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে নামলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢুকলেন ৪ নম্বর ফ্লোরে। তাঁর পেছনে আমরাও।
ঘোর অন্ধকার। মানুষের ফিসফিস শোনা যাচ্ছে। আরেকটু এগোতেই দেখি, মাঝখানে জাহাজের মালবাহী কনটেইনার। কনটেইনারের চারপাশ আবার বন্ধ। ওপরে অল্প জায়গাজুড়ে ফাঁকা। ফাঁকা অংশ দিয়ে মিটিমিটি আলো। আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন অজয় কুমার সরকার। তিনি বললেন, জার্মানের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম স্কুলের (আইএফএস) ছাত্র সাইমন ডোলেসকি একটি স্বপ্লদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। তারই শুটিং চলছে। ছবির নাম নিরওয়ানা। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করতে গিয়ে সিঙ্গাপুরগামী জাহাজে দুজন শ্রমিক কনটেইনারের মধ্যে আটক পড়েন। পথে একজন মারা যান। পত্রিকায় তা ছাপা হয়। ওই দুই শ্রমিকের গল্প নিয়েই ছবিটি।
তখনো কনটেইনারের মধ্যে ক্যামেরা চলছে। বাইরে মনিটরে আবছা আলোর পর্দায় পরিচালকের নিমগ্ন দুই চোখ।