হীরালাল সেন পদক পেল ‘নোনা জলের কাব্য’

পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে শনিবার ডিইউএফএসের ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪২৮’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি টানা হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) হীরালাল সেন পদক ১৪২৮ পেয়েছে রেজওয়ান শাহরিয়ার পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’। এই পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে শনিবার ডিইউএফএসের ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪২৮’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি টানা হয়েছে। এবার ছিল এই উৎসবের ২০তম আসর।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলেদের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম, প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকার লড়াই, জেলেসমাজের রীতি ও সাংস্কৃতিক প্রভাব ‘নোনা জলের কাব্য’ চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু। বাংলাদেশ ও ফরাসি সরকারের প্রাথমিক অর্থায়নে বাংলাদেশের মাই পিক্সেল স্টোরি, হাফ স্টপ ডাউন ও ফ্রান্সের আরসাম ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

বরাবরের মতোই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনটি করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)। আজ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি লাইলুন নাহার, ডিইউএফএসের আজীবন সদস্য রোদেলা নিরুপমা ইসলাম, অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল, পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার, হুমায়রা বিলকিসসহ চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের অনেকেই।

হীরালাল সেন পদক প্রদানের মাধ্যমে পর্দা নামল ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪২৮’-এর

গত দুই বছরে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এবার হীরালাল সেন পদকের জন্য মনোনীত হয়েছিল ‘নোনাজলের কাব্য’, ‘রাত জাগা ফুল’, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ও ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। বিচারকেরা রেজওয়ান শাহরিয়ার পরিচালিত ‘নোনা জলের কাব্য’ চলচ্চিত্রটিকে এ বছর হীরালাল সেন পদকের জন্য নির্বাচিত করেন। রেজওয়ান শাহরিয়ার নিজেই পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। এ ছাড়া এ বছর শ্রেষ্ঠ কাহিনির জন্য ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনার জন্য ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ও শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণের জন্য ‘চন্দ্রাবতী কথা’ চলচ্চিত্রকে হীরালাল সেন পদক দেওয়া হয়েছে।

‘নোনা জলের কাব্য’ সিনেমার দৃশ্য
সংগৃহীত

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এই সময়ে দর্শকদের সিনেমা হলে চলচ্চিত্র দেখার আয়োজনকে একটি উৎসব হিসেবে নিয়মিত উদ্‌যাপন করায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদকে সাধুবাদ জানাই।’
লাইলুন নাহার বলেন, ‘আমরা যখন চলচ্চিত্র আন্দোলন করতাম, তখন দুটি কথা বলতাম। এক, চলচ্চিত্র নির্মাণ; দুই, দর্শক নির্মাণ। আজ এই আয়োজন দেখে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের আন্দোলন সফল।’
ভাষাশহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে ডিইউএফএস। এবারের আমার ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয় ২২ ফেব্রুয়ারি।

পাঁচ দিন ধরে এই উৎসবে দুই বাংলার ১৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ও একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য উৎসবে চলচ্চিত্র উপভোগের পাশাপাশি ছিল নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ। এ বছর উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার ফেস্টুন প্রদর্শনী, বাংলা চলচ্চিত্রবিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং চলচ্চিত্র নিয়ে মতবিনিময় সভাও হয়েছে। শনিবার শেষ দিন প্রদর্শিত হয় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘চরাচর’, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, হুমায়রা বিলকিস পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘বাগানিয়া’, সোহেল মোহাম্মদ পরিচালিত ‘মুজিব আমার পিতা’ ও নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।