'নতুন স্টাইল'-এর গান করলেন মুজিব পরদেশী

একসময় দারুণ জনপ্রিয় ছিল মুজিব পরদেশীর গান। ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘সাদা দিলে কাদা’, ‘তোমায় আমি হলেম অচেনা’ গানগুলো এখনো অনেককেই নস্টালজিক করে দেয়। ফিরিয়ে নিয়ে যায় তিন যুগ আগে। সেই মুজিব পরদেশীই অনেক বছর পর আবার গান করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর লং প্লে রেকর্ডিং স্টুডিওতে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন নতুন একটি মৌলিক গানে।
ঠিক কত বছর পর নতুন কোনো মৌলিক গানে কণ্ঠ দিয়েছে তা মনে করতে পারেননি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মুজিব পরদেশী। ১৫-১৬ বছরের বেশি সময় হবে বলে তাঁর ধারণা। বুধবার বিকেলে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি উত্তরার বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সচরাচর আমি যেমন গান করি, এ গানটি অন্য রকম। আমার ট্রাকের বাইরে। এ স্টাইলের গান সাধারণত করি না, করতেও চাইনি। পরে আমার বন্ধু সুরকার শামসুদ্দিন হীরা তরুণ সুরকার এবং গীতিকারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। “প্রেমের কাঁটা” শিরোনামের গানটি লিখেছেন নীহার আহমেদ। সুর করেছেন মুরাদ নূর, সংগীতায়োজনে ছিলেন মুশফিক লিটু। তরুণদের কাজ বেশ ভালোই লেগেছে।’
বাবা পাকিস্তানের করাচিতে ব্যবসা করতেন। মুজিব পরদেশীর জন্ম সেখানেই। করাচিতে তিনি প্রথম তবলা শিখেছেন ওস্তাদ আশিক আলীর কাছে। এরপর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন ওস্তাদ গোলাম হায়দার আলী খানের কাছে। ১১ বছর বয়সে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় চলে আসেন। দেশে এসে ওস্তাদ ফজলুল হক আর ওস্তাদ আমানউল্লাহ খানের কাছে দীর্ঘদিন তালিম নিয়েছেন।

১৯৮৬ সালের কথা। গীতিকার হাসান মতিউর রহমান একজন শিল্পী খুঁজছেন, যিনি পঙ্কজ উদাসের মতো হারমোনিয়াম বাজিয়ে গজল গাইতে পারেন। তখন মুজিব পরদেশী (আসল নাম মুজিবুর রহমান মোল্লা) শৌখিন শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান করতেন। হাসান মতিউর রহমান মুজিবুরকে ক্যাসেট বের করার প্রস্তাব দিলেন। ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টায় ১১টা গান রেকর্ডও করে ফেললেন; যা পরে হয়ে যায় এক ইতিহাস। অ্যালবামটি বিক্রি হয়েছিল ৬০ লাখ কপি (মূল কোম্পানির)। আর নকল করে আরও প্রায় ২৫-৩০ লাখ কপি। যেটি অডিও শিল্পের সর্বাধিক বিক্রীত ক্যাসেটের রেকর্ড।
বাংলাদেশের এমন কোনো শ্রোতা পাওয়া যায়নি তখন যার ঘরে এই অ্যালবামটি ছিল না। শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জের সবখানে মুজিব পরদেশীর ‘আমি বন্দী কারাগারে’ অ্যালবামটি বাজতে থাকল। অ্যালবামের ১১টি গানের প্রতিটি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল।