ঢালিউডের দুর্দিনে টানা ১৫৬ দিন হলে চলে ১৩ কোটি আয়ের রেকর্ড

এর আগে ‘উৎসব’ সিনেমা দর্শকদের সঙ্গে দেখছেন সাদিয়া ও সৌম্য জ্যোতিরা। ছবি: ফেসবুক থেকে

ঢালিউডের এই মন্দা সময়ে এমন খবর অবিশ্বাস্যই মনে হয়—টানা ১৫৬ দিন ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলছে একটি সিনেমা! তানিম নূরের ঈদের সিনেমা উৎসব-এর ক্ষেত্রে কিন্তু তা–ই হয়েছে। রাজধানীর যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ছবিটি এখনো চলছে, দর্শক উপস্থিতিও দেখার মতো।

হলিউড বা বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলার ‘রীতি’ নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের পটভূমিতে এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যখন প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানাই বড় চ্যালেঞ্জ, তখন উৎসব যেন সেই সংকটের মধ্যেও এক আশার আলো।

ব্লকবাস্টার সিনেমাসের জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে এখনো ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। বাংলা সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেল। উদাহরণ হিসেবে বলি, কোনো শোতে উৎসব-এর যদি ২০টি টিকিট বিক্রি হয়, অন্যগুলোর হয় এর অর্ধেকের কম। যে কারণে আমরা এখনো সিনেমাটি চালাচ্ছি।’

‘উৎসব’ সিনেমার পোস্টার

বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া তেমন কোনো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না, আবার মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ সিনেমা আশানুরূপ ব্যবসাও করতে পারছে না—এ–ই যখন অবস্থা, তখন প্রযোজক ও পরিচালকের কাছে আশার গল্প হয়ে উঠেছে উৎসব। ১৫৬ দিনে দেশের বাজার থেকেই ১০ কোটি টাকা আয় করেছে উৎসব। বিদেশের বাজার মিলিয়ে এই আয় ১৩ কোটি টাকার বেশি। শুধু টিকিট বিক্রি থেকেই এসেছে এই টাকা।

কিন্তু সিনেমার আয় নিয়ে প্রায়ই সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বলা ভালো, প্রযোজকেরা সঠিক তথ্য দিতে চান না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৌখিকভাবে একটা তথ্য দিয়ে থাকেন। যার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক থাকে। সেখানে মুক্তির প্রথম দিন থেকে গত ১৫৬ দিনে কত টাকা আয় করেছে, সেই তথ্য সবই পরিচালক তানিম নূরের জানা। এগুলো গণমাধ্যমকে জানাতেও তাঁর আপত্তি নেই। এমনকি এসব তথ্য থেকে পরবর্তী সিনেমার অনেক হিসাবও কষছেন।

পরিচালক তানিম নূর। নির্মাতার সৌজন্যে

তানিম নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের মাল্টিপ্লেক্স ডিজিটালাইজড হওয়ায় সেখান থেকে আমি সব সঠিক তথ্য পেয়েছি। এখানে একটা স্বচ্ছতা থাকে। যা জানা একজন প্রযোজক ও পরিচালকের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য যদি না জানানো হয়, তাহলে পেশাদার ইন্ডাস্ট্রি কখনোই গড়ে উঠবে না। তাহলে কিসের ওপর নির্ভর করে সিনেমা বানাতে আসবেন একজন তরুণ।’

‘উৎসব’ দেখেছেন ২ লাখের বেশি দর্শক
তানিম মনে করেন, একটি সিনেমা কত দর্শক দেখছেন, কোন শ্রেণির দর্শক দেখছেন, কাদের বয়স কত, কখন কত দর্শক দেখছেন—এসব তথ্য বাইরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবেই তারা সিনেমা মুক্তি দেয়। ‘মাল্টিপ্লেক্সে আমাদের সিনেমাটি দুই লাখের বেশি দর্শক দেখেছেন। কিন্তু সিঙ্গেল হলে কত দর্শক দেখলেন, সেই তথ্য আমার কাছে নেই। তাহলে এখানে প্রপার বিনিয়োগটা কীভাবে হবে? লগ্নিকারক যদি জানতেই না পারেন, টাকা কোথা থেকে কীভাবে উঠবে, তাহলে বিনিয়োগ করবে কেন। এটা অন্য ব্যবসার মতোই। যে কারণেই তো এটা ইন্ডাস্ট্রি।’

তানিম জানান, একসময় ভারতের সিনেমায় কোনো বক্স অফিস ছিল না। সঠিক আয়ের তথ্যও অনেক সময় পাওয়া যেত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সিনেমায় বিপণন বা ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থায় এসেছে বিপুল পরিবর্তন। ১৯৯৮ সালের দিকে ভারত চলচ্চিত্রকে ইন্ডাস্ট্রি ঘোষণা করে। ফলে প্রযোজনায় স্বচ্ছতা ও করপোরেট বিনিয়োগ বাড়ে। পরে ভারতের সিনেমায় যোগ হয় বক্স অফিস, ই-টিকেটিং। খুব সহজেই সে দেশের প্রযোজকেরা ঘরে বসে জানতে পারেন, কোন সিনেমা কত দর্শক দেখছেন। তানিম বলেন, ‘বক্স অফিস থাকলে সিনেমার আয়ের যেমন স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায়, তেমনি সম্ভাবনাও জানা যায়। এভাবে কিন্তু ভারতীয় সিনেমা ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করছে।’উ

আরও পড়ুন
সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান
সাবিনা ইয়াসমিন

মাল্টিপ্লেক্স–সংস্কৃতি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তানিম আরও বলেন, ‘আমাদের যদি ১০০টি মাল্টিপ্লেক্স থাকত, তাহলে আমাদের সিনেমার আয় শতকোটি হতো। এখান থেকে সরকার ট্যাক্সই পেত ২৩ কোটি টাকা। এখানে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। একটা পরিবেশ তৈরি করা দরকার। কারণ, এখানে সম্ভাবনা রয়েছে।’

সবশেষে তানিম যোগ করেন, ভারতের বড় সিনেমা লগ্নিকারীরা কেউ নিজেদের অর্থ সরাসরি লগ্নি করেন না। তাঁরা লোন নেন, ইনভেস্ট করে টাকা উঠিয়ে ফেরত দেন। এটা নির্মাণকাজকে আরও সহজ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কি সিনেমা বানানোর জন্য এক কোটি টাকা লোন পাওয়া সম্ভব? এভাবে তো একটা পেশাদার ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে না। তবে আমাদের বড় দর্শকশ্রেণি রয়েছে। যার অর্থ সম্ভাবনা আছে। সরকার চেষ্টা করলে পাঁচ বছরে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এর সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হতে পারে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’

উৎসব সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর একসঙ্গে আলোচনায় এসেছেন জাহিদ হাসান, অপি করিম, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, ইন্তেখাব দিনার, সাদিয়া আয়মান, সৌম্য জ্যোতি প্রমুখ।