‘শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশি সিনেমার বাজার আছে’

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন চিত্রনায়ক শাকিব খানছবি: খালেদ সরকার

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা জল্পনাকল্পনার ইতি ঘটল। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানকে দেখা যাবে ‘তুফান’ নামে নতুন একটি সিনেমায়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার এক পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনে এ সিনেমার ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলা সিনেমার সবচেয়ে প্রভাবশালী এই তারকার ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসবে আগামী বছরের কোরবানি ঈদে। বড় বাজেটের এ সিনেমায় থাকছে বাংলাদেশ ও ভারতের বড় তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই, চরকি ও এসভিএফ। নির্মাতা হিসেবে আছেন হালের আলোচিত পরিচালক রায়হান রাফী।
সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বলছে, বড় সিনেমা, বড় প্রযোজক, বড় পরিচালক, বড় নায়ক—সব মিলিয়ে বড় পর্দায় ঝড় তুলতেই আসছে ‘তুফান’। এবার রায়হান রাফীর পরিচালনায় বড় পর্দায় আসছেন ঢাকাই সিনেমার বড় তারকা শাকিব খান। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তিন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলা চলচ্চিত্রে যেন এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খান
ছবি: খালেদ সরকার

পরিচালক রায়হান রাফী সর্বশেষ ‘সুড়ঙ্গ’ বানিয়ে আলোচিত। এ ছবি দেশ–বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বেশ আগেই এই পরিচালক শাকিব খানকে নিয়ে ছবি বানাতে চেয়েছিলেন। ঘোষণাও এসেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত হয়নি। ‘তুফান’ নিয়ে রায়হান রাফী বেশ রোমাঞ্চিত। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই এক্সাইটেড। কারণ, একসঙ্গে আলফা, এসভিএফ ও চরকি—তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান এক সুতায় গেঁথে দুটি সিনেমা বানাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশের একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান, তার সঙ্গে এটা আমার প্রথম সিনেমা। সবচেয়ে বড় তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, একজন সবচেয়ে বড় সুপারস্টার যখন একসঙ্গে হয়, তখন আসলে এই সিনেমা নিয়ে আশা করাই যায়। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ‘তুফান’ বাংলা সিনেমার জন্য একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।’

পরিচালক রায়হান রাফী ও চিত্রনায়ক শাকিব খান
ছবি: খালেদ সরকার

তুফান নিয়ে শাকিব খান নিজেও বেশ আনন্দিত। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশি সিনেমার সম্ভাবনা অপার। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বড় একটা বাজার আছে। সারা বিশ্বে ৩০ কোটি বাংলাভাষী রয়েছেন, তাঁদের শুধু ভালো মানের সিনেমা উপহার দিতে হবে। আর সিনেমা অঙ্গনে কাজের মানুষদের শুধু কাজের পরিবেশটা দিতে হবে। বাকিটা সিনেমাপ্রেমীরাই ঠিক করে নেবেন।’
নিজের অভিনীত সিনেমার উদাহরণ দিয়ে শাকিব আরও বলেন, ‘সর্বশেষ “প্রিয়তমা” সিনেমা মুক্তির পর আমরা নতুন করে তা (বাংলা সিনেমার সম্ভাবনা) আবার দেখেছি। এই ছবি বাংলা সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা করেছে। ফ্রান্স, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশে ছবিটি দেখার জন্য দর্শকের লম্বা লাইন, অগ্রিম টিকিট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার খবর পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। খবরে যখন দেখেছি দেশের বাইরে সিনেমা দেখতে লম্বা লাইন, তা-ও আবার আমার দেশের, গর্বে বুক ভরে যায়। মনে মনে ভাবছি, এই স্বপ্নই তো আমি দেখছি। এখন সিনেমাপ্রেমী সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। নতুন এই ছবি দিয়েও দুর্দান্ত কিছুর সূচনা হবে। গল্পটা নিয়ে এককথায় বলব, এমন গল্পের বাংলা সিনেমা এর আগে দেখা যায়নি। অন্য রকম কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, যা সবাইকে আনন্দিত করবে, করবে গর্বিতও।’

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি, এসভিএফের পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি ও আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল
ছবি: খালেদ সরকার

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে চরকি, আলফা আই ও এসভিএফেএর এই সম্মিলিত প্রয়াসকে অভিনন্দন জানান শাকিব। তিনি জানান, এমন উদ্যোগে একদিন বাংলাদেশের সিনেমার বিশাল বাজার তৈরি হবে। অনেক বড় বাজেটের ছবি যেমন তৈরি হবে, তেমনি ব্যবসায়িকভাবে এই ক্ষেত্রটার আকার বাড়বে। শাকিব বলেন, ‘আমরা ১০০ কোটির ক্লাবে কবে যাব, সেদিকেই তাকিয়ে আছি। যদিও আমার মনে হয় সেদিন আর বেশি দূরে নয়; কারণ, “তুফান”–এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম দুই প্রযোজনা সংস্থা চরকি ও আলফা আইয়ের সঙ্গে কলকাতার এসভিএফ একসঙ্গে হয়েছে। হয়তো অচিরেই আমরাও বলতে পারব, বক্স অফিসে আমাদের গ্রস সেল, নেট সেল ১০০ কোটি হয়েছে! আমি ভীষণ রকম আশাবাদী।’
ভিনদেশে বাংলা সিনেমার বড় মার্কেট তৈরি হয়ে আছে জানিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘একটা সময় হয়তো ১০০ কোটি টাকাও বাংলা সিনেমার জন্য খুব কম টাকা মনে হবে। কারণ, বাংলার যে পপুলেশন, সেটার কিছু ধারণা পেয়েছি। নর্থ আমেরিকার কথা যদি বলি, সেখানেই মিলিয়নের বেশি বাংলাদেশি বাস করেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গেরও মানুষ সেখানে বাস করেন। সব মিলিয়ে শুধু নর্থ আমেরিকাতেই ২০-৩০ লাখ বাঙালি দর্শক আছেন। এর মানে হলো সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বাজার অপেক্ষা করছে। শুধু দরকার ছিল বাংলার একটা যৌথ প্রয়াস সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ করার। কারণ, সবাই একসঙ্গে মিলে কাজ না করলে বড় কিছু অর্জন সম্ভব নয়।’ এদিকে এমন বড় পরিসরের কাজে যুক্ত করার জন্য তিন প্রযোজনা সংস্থার কর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান।

আরও পড়ুন

আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আলফা আই স্টুডিওজ সব সময় বাংলাদেশের বিনোদনজগতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একটি অগ্রগামী চিন্তার প্রোডাকশন হাউস। আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে বাঙালি দর্শক ভালো মানের কনটেন্ট দেখতে চান। আমরা প্রতিবারই সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আলফা, এসভিএফ ও চরকি এক হয়েছি বাংলা চলচ্চিত্রের বাজারকে উন্নত করতে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে পৌঁছাতে।’ শাহরিয়ার শাকিল আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ শাসন করছে, এমন দুই সেরা প্রতিভাকে একত্র করছি আমরা। একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান এবং বর্তমান সময়ের হিট পরিচালক রায়হান রাফী এক হয়েছেন দর্শককে আরেকটি ব্লকবাস্টার সিনেমা দেওয়ার জন্য।’

ভারতের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ ফিল্মস। ২৮ বছর ধরে রেইনকোট, চোখের বালি, অটোগ্রাফ, ২২শে শ্রাবণ-এর মতো সিনেমা নির্মাণ করে বাংলা সিনেমার ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। এসভিএফের পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খানকে বাংলা সিনেমার ‘লাস্ট সুপারস্টার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যতটা আপনারা এক্সাইটেড, তার চেয়ে বেশি আমি এক্সাইটেড, প্রবাবলি আই অ্যাম ওয়ার্কিং উইথ দ্য সুপারস্টার অব দ্য লাস্ট সুপারস্টার। এটা হয়তো কেউ বলেনি, বাট দিস ইজ ট্রু।’

প্রযোজক, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীরা
ছবি: খালেদ সরকার

মহেন্দ্র সোনির ভাষ্য, ‘আমরা বাংলা সিনেমায় একটি নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে। কারণ, এসভিএফ, আলফা আই, চরকি ও মেগাস্টার শাকিব খানকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটি প্রযোজনা সামনে আনতে যাচ্ছি, যা গল্প বলার স্কেলকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করবে। এই যৌথ প্রয়াস বাংলা চলচ্চিত্রকে অভূতপূর্ব বৈশ্বিক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে প্রস্তুত, যা আমাদের সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।’
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলা সিনেমার বক্স অফিস বলতে শাকিব খানকেই বোঝায়। তিনি বলেন, ‘বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুসময় চলছে। আমাদের জন্যও খুব আনন্দের সময়। আলফা আই, চরকি ও এসভিএফ মিলে বাংলাভাষী দর্শককে হলমুখী করতে ও আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট দেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে। কেননা এত বড় ক্যানভাসে এত বড় আয়োজনের বাংলা সিনেমা তথা বাঙালি দর্শকের জন্য এই সিনেমা আমাদের উপহার হবে।’
‘তুফান’ চলচ্চিত্রের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মৌসুমী মৌ।

আরও পড়ুন