বাংলাদেশের মানুষের প্রতি মুগ্ধতার শেষে নেই টালিগঞ্জের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের। তাঁর জন্ম ভারতে হলেও পূর্বপুরুষের ভিটা বাংলাদেশে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গতকাল প্রদর্শিত হয়েছে শ্রীলেখা পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘এবং ছাদ’।
প্রদর্শনীর পর সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে সাংবাদিকদের সামনে আসেন নির্মাতা শ্রীলেখা। বাংলাদেশের প্রশংসার পাশাপাশি একটি অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। শ্রীলেখা বলেন, ‘অনেকগুলো পোর্টাল আমার নামে অনেক ভুয়া খবর বের করে। না জেনে, না বুঝে চটকদার শিরোনাম করবেন না। আমি তো একটা মানুষ। আমি অনেক মজা করি, মজাটাকে মজার মতো করে নিন। তার অপব্যবহার করে দর্শককে ভুল দিকে চালিত করবেন না, এটা আমার অনুরোধ বাংলাদেশের পোর্টালের প্রতি।’
শ্রীলেখা জানান, খবরগুলো কলকাতার সাইবার ক্রাইমে দিয়েছিলেন তিনি; বিষয়টি নিয়ে এক আইনজীবীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। চটকদার শিরোনামের খবরগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশি পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেন শ্রীলেখা।
শ্রীলেখার ভাষ্য, ‘এটা আমার খারাপ লাগার জায়গা। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ভালো বিষয় আছে। এটা ভালোবাসার অত্যাচার বলা যায়। এটা না করলেই হয়। আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো স্মৃতি জমাতে চাই। আমার বাবার দেশ মানে আমার দেশ। আমার এই দেশ সম্পর্কে কেউ খারাপ বলুক, সেটা আমি পছন্দ করব না।’
টালিগঞ্জের অভিনেত্রী শ্রীলেখা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও পরিচিতি পেয়েছেন; বাংলাদেশের একটি সিনেমায় কাজের বিষয়ে কথাবার্তাও চলছে বলে জানান তিনি। তবে সিনেমার নাম জানাতে চাননি শ্রীলেখা।
বাংলাদেশের প্রশংসা করে শ্রীলেখা বলেন, ‘বাংলাদেশের বাংলা ভাষাটা খুব সুন্দর। কলকাতায় সবাই খিচুড়ি ভাষায় কথা বলে। এখানে মানুষ বাংলাকে ভালোবেসে বাংলাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, বাংলায় কথা বলছে। গর্বের সঙ্গে বাঙালি হয়ে বাংলায় স্বপ্ন দেখছে—এটা বিরাট ব্যাপার। আর পৃথিবীর কোনো প্রান্তে গিয়েই বাংলাদেশের মতো আতিথেয়তা পাওয়া যাবে না।’
২১ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বেলা ১টায় সিনেমার আরেকটি প্রদর্শনী রয়েছে।
উত্তর কলকাতার ছাদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে সিনেমার গল্প। এতে মধ্যবয়সী এক গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা। অভিনয়ে আরও আছেন ছোট পর্দার অভিনেতা প্রীতম দাস। পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটি প্রযোজনাও করেছেন শ্রীলেখা। সম্প্রতি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শ্রীলেখা বলেছেন, অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখি ও নির্মাণে মনোযোগী হবেন তিনি।
বাংলাদেশি সিনেমা ‘জেকে-১৯৭১’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ১৪ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠেছে। ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭০টি দেশের ২৫৪টি সিনেমা দেখানো হবে। বিভিন্ন বিভাগের সেরা সিনেমার জন্য রয়েছে পুরস্কার। শ্রীলেখার সিনেমাটি নির্বাচিত হয়েছে নারী নির্মাতা বিভাগে।
‘এবং ছাদ’ শ্রীলেখার দ্বিতীয় নির্মাণ। এর আগে ‘বেটার হাফ’ নামের আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।
শ্রীলেখা মিত্রের পূর্বপুরুষের বসত ছিল মাদারীপুরের ঘটমাঝি গ্রামে। দেশভাগের সময় ভারতে পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা। শ্রীলেখার জন্ম ভারতে হলেও বাবার মুখে ঘটমাঝি গ্রামের গল্প শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ২০১৭ সালের আগে বাবা সন্তোষ মিত্রকে নিয়ে পূর্বপুরুষের ভিটার খোঁজে বাংলাদেশে এসেছিলেন শ্রীলেখা। এর কয়েক বছর পর তাঁর বাবার মৃত্যু হয়।