করোনার কারণে গেল দুই বছর দুর্গাপূজা সেভাবে উদ্যাপন করা সম্ভব হয়নি। এবারের উৎসবটা তাই মিস করতে চান না তারকারা। সনাতন ধর্মাবলম্বী তারকাদের কেউ এখন গ্রামের বাড়িতে, কেউ ঢাকায়। আবার কলকাতায়ও আছেন কেউ।
কুমার বিশ্বজিৎ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কেটেছে সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের শৈশব। বড় আয়োজনে সেখানে পূজা উদ্যাপন করা হতো। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, শৈশবের পূজার আনন্দটাই ছিল আলাদা। তিনি বললেন, ‘পূজার যত আনন্দ এক জীবনে পেয়েছি, সবই ছেলেবেলায়। ওই সময় আর আসবে না। এই দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। পূজা এলেই মায়ের শাড়ি ও অন্যদের শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল বানানো হতো। ১৫ দিন আগে থেকে উৎসব উৎসব আমেজ ছিল। পূজার সময়ে আমাদের ওখানে রাউজান থেকে একজন ঢুলি আসতেন। এখনো তাঁর ঢোল বাজানোর দৃশ্য চোখে ভাসে। ওই সময় সারাক্ষণ আমি তাঁর সঙ্গে থাকতাম। কখনো কাঁসার প্লেট বাজাতাম। ঢোলের প্রতি আমার এমন নেশা দেখে একদিন বাবা বলেছিলেন, “তুই কি ঢুলি হবি?” একদিন মেরেছিলেনও খুব।’
কুমার বিশ্বজিতের এবারের পূজা কাটছে ঢাকায়। কোনো অনুষ্ঠানও সেভাবে রাখেননি। এবারের পূজায় সবচেয়ে বেশি মিস করছেন মাকে। কারণ, গত বছরের পূজার আগেই পৃথিবীর মায়া কাটান বিশ্বজিতের মা। তিনি বলেন, ‘ছেলেবেলায় পূজায় পাঁচন রান্না করতেন মা। সেই পাঁচনের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আরও কত কী রান্না করতেন! এখন পূজা আসে কিন্তু সেই খাবার আর খাওয়া হয় না। তাই পূজা এলে মাকে ছাড়া খারাপ লাগে।’
অপু বিশ্বাস
পূজাটা এবার কলকাতায় কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। সঙ্গে আছে ছেলে আব্রাহাম খান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। অপু বিশ্বাস বললেন, ‘মাসির বাড়িতে আছি। কলকাতায় অনেক আত্মীয়স্বজন। কাজের ব্যস্ততায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না। তাই এই সময় সুন্দর কাটছে।’ তিনি জানালেন, ছেলেকে নিয়ে কলকাতা ঘুরছেন, কেনাকাটা করছেন। তিনি বললেন, ‘পূজা দেখতে বের হয়েছি। মণ্ডপে গিয়েছি। রাজবাড়ী নামে একটি জায়গায় বড় পূজা হয়। ওটা অনেক ভালো জায়গা, তারকারা ওখানে বেশি আসেন। আমিও গিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘পূজামণ্ডপে ঘোরাঘুরি, আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে সুন্দর সময় কাটানোর চেষ্টা করছি।’ অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় ফিরবেন অপু।
চঞ্চল চৌধুরী
স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ে অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি যাওয়া চাই–ই চাই। যত ব্যস্ততাই থাক, পূজার এই সময়ে এক দিনের জন্য হলেও বাড়ি যেতে হবে। এবারও পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনার সুজানগরের কামারহাটে গেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান। গেলবার করোনার প্রকোপ থাকায় মণ্ডপে যাওয়া হয়নি। বাড়িতে বসেই আনন্দটা উপভোগ করেন। এবার ঘরের বাইরে যাওয়া হবে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হবে। সবাইকে নিয়ে আনন্দটা উপভোগ করতে চান।
তিন দশকের বেশি হয় ঢাকায় আছেন চঞ্চল চৌধুরী। গ্রামের বাড়িতে থাকেন মা-বাবা। পূজার কয়েকটা দিন একসঙ্গে কাটিয়ে আবার ৭ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন চঞ্চল, ‘বছরের এই একটা সময়ই বাড়িতে যাই। উৎসবকে কেন্দ্র করে ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের একত্র হওয়াই মূল উদ্দেশ্য। বাড়িতে গেলে এমনিতে অনেক লোক আসেন। দেখা করেন, কথা বলেন, ছবি তোলেন। সময়টা দারুণ কাটে।’
বিদ্যা সিনহা মিম
পূজার সময়টায় সব সময় রাজশাহীতে যান বিদ্যা সিনহা মিম। সেখানেই তাঁর দাদা–নানার বাড়ি। বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরুর পর এবারই প্রথম রাজশাহীতে যাওয়া হচ্ছে না। কারণ, বিয়ের পর এবারই প্রথম শারদীয় পূজা। তাই শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লা শহরে পূজা উদ্যাপন করতে যাচ্ছেন মিম। তিনি বললেন, ‘নবমী ও দশমীর দিন শ্বশুরবাড়িতে থাকব। যেহেতু বিয়ের পর প্রথম পূজা, তাই ওখানকার সবার সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপন করতে চাই। তার আগের সময়টা ঢাকায় কাটাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পাশাপাশি মা–বাবার জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ি, চুড়ি ও গয়না কিনেছেন। সারা বছর কাজের কারণে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয় না। সবাই এই সময়টায় এক হই। দেখা হয়। বছরের সব জমানো কথা নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠি।’
জ্যোতিকা জ্যোতি
এবারের পূজা কলকাতা, ঢাকা ও ময়মনসিংহের গৌরীপুর—এই তিন জায়গায় করছেন জ্যোতিকা জ্যোতি। এরই মধ্যে কলকাতায় পূজা উদ্যাপন করে ঢাকায় এসেছেন। গতকাল সোমবার ময়মনসিংহে পৌঁছেছেন। জ্যোতিকা জ্যোতি বললেন, ‘গ্রামের বাড়িতে মা–বাবা একা থাকেন। আমার বোনেরা ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। এই সময়টায় সবাই মিলে গ্রামে যাই। মা–বাবার সঙ্গে পূজার সময়টা কাটাই।’
এর বাইরেও বিনোদন অঙ্গনের তারকাদের কেউ কেউ পূজা উদ্যাপন করবেন রাজধানী ঢাকায় নয়তো তাঁদের গ্রামের বাড়িতে।