স্বপ্নের মঞ্চে গাওয়ার অপেক্ষায় তরুণেরা

হিমশীতল মহড়াকক্ষে ঢুকতেই শোনা গেল ধ্যানমগ্ন একদল তরুণ-তরুণীর কণ্ঠ। শুরু হলো ‘ওঁম’ দিয়ে। মিনিট খানেক না পেরোতেই পুরো ঘরে ধ্যানের গাম্ভীর্য। ধীরে ধীরে সেই ধুনের সঙ্গে পাখওয়াজ, তবলা, সুরমণ্ডল, ঘুঙুরের সুর যোগ হতে থাকল। একটা সময় সেসব চিড়ে গানে আর সুরে ভেসে উঠল এক মাধুর্যময় রাতের ছবি। রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের একটি পরিবেশনার মহড়ায় গিয়ে এভাবেই আঁচ করা গেল উৎসব–রাতের আগের উত্তাপ।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার সেন্টারে চলছিল সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর শিক্ষার্থীদের কণ্ঠসংগীতের মহড়া। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের এবারের আসরের দ্বিতীয় রাতে, অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর ২৩ জন শিল্পীকে নিয়ে মঞ্চে উঠবেন মোহাম্মদ শোয়েব। উৎসবের দুই দিন আগে তাঁদের প্রস্তুতির অগ্রগতি জানতেই সেই মহড়াকক্ষে ঢুঁ মারা। সেখানে যখন প্রবেশ করি, তখন তাঁদের অনুশীলন চলছে পুরোদমে। সবাই একসঙ্গে গাইছেন ‘কিন বেয়রান কান ভারে’। মহড়া শেষ হতেই গানটি সম্পর্কে শোয়েব জানালেন, এটি রাগ দরবারি। তাঁদের পরিবেশনা রাত ১২টার দিকে। সময়টার কথা মাথায় রেখেই পরিবেশনার জন্য এই রাগটিকে বেছে নেওয়া।
উৎসবে তাঁদের পরিবেশনাটি নিয়ে শোয়েব বললেন, ‘যে সময়ে আমরা মঞ্চে উঠব, রাতের ওই সময়টাতে উপস্থিত সবাইকে আমরা ধ্যানে আবিষ্ট করতে চাই। তাই আমাদের পরিবেশনাটির নাম দিয়েছি ধ্যান। একপর্যায়ে এই ধ্যানের সঙ্গে যুক্ত হবে রাধা-কৃষ্ণের কথোপকথন, রাগ দরবারির বন্দিশ, আবৃত্তি। আমরা মূলত চাইছি আমাদের পরিবেশনাটিকে সব ধরনের শ্রোতার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে। তাই এই পরিবেশনায় গাম্ভীর্য, ভাব, প্রেম—সবই খুঁজে পাওয়া যাবে।’
এবার শোয়েবের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর দল নিয়ে। তিনি বললেন, ‘সবাই আমার ছাত্রছাত্রী। শুধু পাখওয়াজ ও তবলায় সংগত করছেন দুজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয়ের, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের।’ বাছাই–প্রক্রিয়া নিয়ে শোয়েব বলেন, ‘তাঁদের নির্বাচন করা হয়েছে কণ্ঠ ও পরিশ্রমের ভিত্তিতে। রাগ দরবারির জন্য যে শিক্ষার্থীর কণ্ঠ বেশি উপযোগী, নির্বাচনে তাঁদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি শিল্পীদের পরিশ্রম ও একাগ্রতার ওপর। শিল্পীদের বলা হয়েছিল, যাঁরা মহড়ায় ব্যস্ত থাকবেন, এই পরিবেশনা তাঁদের জন্য নয়।’ বেশ তৃপ্ত স্বরেই শোয়েব বললেন, তরুণ শিল্পীরা তাঁকে হতাশ করেননি। বরং তাঁদের আগ্রহ, উচ্ছ্বাস আর চেষ্টাই শোয়েবকে আশাবাদী করেছে। মহড়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সময় বাঁধা থাকলেও শিক্ষার্থীরা টানা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা মহড়া করেও ক্লান্ত হননি।