মারা গেছেন 'সোনাবন্ধু'-এর গীতিকবি গফুর

আবদুল গফুর হালী
আবদুল গফুর হালী

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার আবদুল গফুর হালী আর নেই। আজ বুধবার ভোরে চট্টগ্রামের মাউন্টেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ফুসফুসের ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
আবদুল গফুর হালীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মাইজভান্ডারি দরবার শরিফে। দ্বিতীয় জানাজা একই দিন বাদ মাগরিব জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে। তৃতীয় ও শেষ জানাজা হবে ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিজ বাড়ি পটিয়া রশিদাবাদ গ্রামে। আজ সারা দিন তাঁর লাশ রাখা থাকবে পিএসপি হাউস নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে।
গফুর হালী জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার রশিদাবাদ গ্রামে নিজ বাড়িতে। লিখে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। বছর কয়েক আগে তাঁকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন জার্মান গবেষক ড. হান্স হারডার। জানা যায়, দুবার তিনি গফুর হালীর বাড়িতে এসেছিলেন। গফুর হালী চার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আবদুল গফুর হালীর আঞ্চলিক গানের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এসব গানের মধ্যে শেফালী ঘোষের গাওয়া ‘ও শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইও রে’, ‘ঢোল বাজের আর মাইক বাজের’, ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা’, ‘বাইন দুয়ার দি’, ‘ন মাতাই ন বুলাই’, ‘ছোডকাইল্যা প্রেম আমার’, ‘মনের বাগানে ফুটিল ফুল রে’; কল্যাণী ঘোষের গাওয়া ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’, ‘শঙ্খ খালর মাঝি’, ‘দুই কুলের সোলতান’, ‘দেখে যারে মাইজভান্ডার’সহ অসংখ্য গান শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। শ্যাম-শেফালীর কণ্ঠে ‘তুঁই যাইবা সোনাদিয়া’, ‘বন্ধু আঁর দুয়ারদি যঅ’ গানগুলো চিরসবুজ গান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাঁর গান আরও গেয়েছেন উমা খান, সঞ্জিত আচার্য, কান্তা নন্দী, শিল্পীরানী, আবদুল মান্নান, সেলিম নিজামী ও শিমুল শীল। এ ছাড়া তাঁর গান সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছেন সন্দীপন (সোনাবন্ধু), শিরিন (পাঞ্জাবিওয়ালা, মনের বাগানে), বেবী নাজনীন (শঙ্খ খালের মাঝি)। এসব গান নতুন প্রজন্মের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাটকের পথিকৃৎ রচয়িতাও তিনি। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে ২০১০ সালে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মেঠোপথের গান’ নির্মাণ করেছিলেন শৈবাল চৌধুরী।