পুশি রায়টের জয়যাত্রা

পুশি রায়ট
পুশি রায়ট

রাশিয়ার নারীবাদী পাংক রক ব্যান্ড দল পুশি রায়ট। ২০১১ সালের আগস্টে অখ্যাত ও প্রতিবাদী গানের দল হিসেবে যাত্রা শুরুর তিন বছরেরও কম সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে রীতিমতো তোলপাড় তুলেছে পুশি রায়ট। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুরু করে ম্যাডোনা, ইয়োকো ওনোর মতো সংগীতব্যক্তিত্বদের চাপের মুখে ব্যান্ডটির গ্রেপ্তার হওয়া দুই সদস্যকে ২৩ ডিসেম্বরে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়ার সরকার। নারী অধিকার, মানবাধিকার ও রাশিয়ার সরকারবিরোধী নীতির মতো বিষয়বস্তু নিয়ে গান করে এবং ভিন্ন ধারার পরিবেশনার মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে পুশি রায়ট। রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান রয়েছে ব্যান্ডটির। এর সদস্যরা পুতিনকে একনায়ক বলে আখ্যা দিয়েছেন। পুতিনের সঙ্গে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সম্পৃক্ততা নিয়েও সোচ্চার পুশি রায়ট। এসব কারণে শুরু থেকেই রাশিয়ার সরকারের তোপের মুখে পড়ে ব্যান্ডটি।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রাইস্ট দ্য সেভিয়ার গির্জায় ঢুকে বিতর্কিত ‘পাংক প্রেয়ার’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয় পুশি রায়ট। ব্যান্ডটির এক সদস্য গানটি ভিডিও করেন এবং পরবর্তী সময়ে সেটি সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হয়। এখন পর্যন্ত পুশি রায়টের সাতটি গান এবং পাঁচটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। এক খবরে এমনটিই জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন।

পাংক প্রেয়ার গানটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অর্থোডক্স চার্চের সমর্থনের বিষয়টিকে আক্রমণ করা হয়। এর কয়েক সপ্তাহ পর ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গির্জায় সহিংস আচরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন পুশি রায়টের তিন সদস্য মারিয়া অ্যালভোকিনা, ইক্যাটেরিনা সামুেসভিচ ও নাদেজা তোলোকোনিকোভা। তাঁদের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, গির্জায় প্রবেশ করে বাগিবতণ্ডার পাশাপাশি গির্জার ভেতরেই রক আদলে পুতিন-বিরোধী গান গেয়েছেন তাঁরা। গির্জায় মাস্তানির অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁদের। একই বছরের অক্টোবরে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান সামুেসভিচ। কিন্তু অ্যালভোকিনা ও তোলোকোনিকোভাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়।

পুশি রায়টের দুই সদস্যকে আটকে রাখায় রাশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় পুশি রায়টের দুই সদস্যকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মত দেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনোযোগ আকর্ষণ করে বিষয়টি। ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী স্টিং, মার্কিন রক ব্যান্ড দল রেড হট চিলি পেপারস, ‘পপ কুইন’ ম্যাডোনা, ‘বিটলস’ তারকা জন লেননের স্ত্রী, মানবাধিকার কর্মী ও সংগীতশিল্পী ইয়োকো ওনোসহ অনেকেই পুশি রায়টের সদস্যদের মুক্তির দাবি তোলেন।

অ্যালভোকিনা ও তোলোকোনিকোভা দুজনেরই সন্তান আছে। রাশিয়ার কারাগারে কঠিন দুঃসময় পার করতে হয় তাঁদের। বারবার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেও মুক্তি মেলেনি তাঁদের। হত্যা হুমকি এবং কারা প্রশাসনের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত সেপ্টেম্বরে অনশন শুরু করেন তোলোকোনিকোভা। এসব কারণে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। রাশিয়ার কারা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একপর্যায়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। নারী বন্দীসহ রাশিয়ার কারাগারে আটক দুই হাজার বন্দীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সংগঠনটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার পার্লামেন্টে একটি আইনও পাস হয়। এভাবেই গতকাল কারাগার থেকে মুক্তি পান পুশি রায়ট ব্যান্ডের বন্দী দুই সদস্য। মুক্তি পাওয়ার পরও তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন বলে জানিয়েছেন। কারাবন্দীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে একটি মানবাধিকার সংগঠন গড়বেন বলেও জানিয়েছেন মারিয়া অ্যালভোকিনা।