শাকিব-অপুর শুরুর গল্প

ছবিগুলো শাকিব–অপু অভিনীত বিভিন্ন সিনেমা থেকে নেওয়া
ছবিগুলো শাকিব–অপু অভিনীত বিভিন্ন সিনেমা থেকে নেওয়া

এক দশক আগে জুটি হয়ে ঢালিউডে আসেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার অপরিহার্য এক জুটি। অনেকগুলো ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। কাজের ফাঁকে কখন যেন ভালোবেসে ফেলেন দুজন দুজনকে, গোপনে বিয়ে করেন। ভেবেছিলেন ভক্ত ও দেশবাসীকে খবরটি জানাবেন একটু অন্যভাবে। কিন্তু সিনেমার মানুষদের জীবন বলে কথা! নাটকীয়তাকেও ছাড়িয়ে গেছে তাঁদের জীবনকাহিনি। অনেক দিন উধাও থাকার পর সাত মাসের সন্তান কোলে আমাদের সামনে এসে হাজির হন নায়িকা অপু বিশ্বাস। অবিশ্বাস্য এই জুটির শুরুটা জানতে ইচ্ছে করে না কার? গল্পটি জানাচ্ছেন মনজুর কাদের

ছেলে আব্রামকে নিয়ে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
ছেলে আব্রামকে নিয়ে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস

যে যত সফল, তাঁর সংগ্রামও তত বেশি

বন্ধুদের নিয়ে মার্শাল আর্ট শিখতেন শাকিব। একসময় তাঁকে আকর্ষণ করল ব্রেক ড্যান্স। সেটাও বাদ যাবে কেন? উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিব ছিলেন সিনেমার পোকা। প্রিয় নায়ক সালমান শাহ মারা গেছেন কদিন আগেই। নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার হাত ধরে একদিন শুটিং দেখতে যান এফডিসিতে। পরিচালক আবুল খায়ের বুলবুল প্রস্তাব দিয়ে বসেন, নায়ক হবে?

.
.

ঢালিউডের জনপ্রিয় জুটি তখন মৌসুমী-ওমর সানী। তাঁদের ছবি দেখতে বেশ লাগত। কিন্তু নিজে নায়ক হওয়ার কথা কখনো কল্পনাতেও আসেনি। মা-বাবাও রাজি হলেন না। তাঁদের কথা, সালমান শাহকে মেরে ফেলা হয়েছে। সিনেমায় কাজ করলে তাঁকেও মরতে হবে। কিন্তু সিনেমাপ্রেমী এক তরুণের ‘হিরো’ হওয়া বলে কথা। মা-বাবাকে যে রাজি করাতেই হবে। আবুল খায়ের বুলবুলের সেই ছবিটির নাকি মাত্র তিন মাসেই শুটিং শেষ হয়ে যাবে। এ আর এমন কী? মা রাজি, বাবা রাজি, চুক্তি হলো। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সিনেমাটি আর হলো না। শাকিবের প্রথম সিনেমা ছিল আফতাব খান টুলুর সবাই তো সুখী হতে চায়। সেটারই একটি গান শাকিবের দিকে দৃষ্টি ফেরায় সবার।

জন্মসূত্রে শাকিবকে বলা যায় ‘ঢাকার পোলা’। বাবার চাকরিসূত্রে ধানমন্ডি থেকে চলে যেতে হয় নারায়ণগঞ্জে। দেশের বাড়ি ফরিদপুরে কখনোই থাকা হয়নি। চাকুরে মা-বাবার কারণে সারা দেশ ঘোরাঘুরি করার সুযোগ হয়েছিল। ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট ছিল আমার স্বপ্ন তুমি সিনেমাটি। চিত্রগ্রাহক জেড এইচ মিন্টু ও শাবনূরের ভূমিকার দারুণ প্রশংসা করেন তিনি। তাঁদের সাহায্যে একটি নেতিবাচক চরিত্রকে ইতিবাচক করে ফেলতে পেরেছিলেন শাকিব। একের পর এক মুক্তি পেতে শুরু করল সিনেমা। এগিয়ে আসতে শুরু করলেন শাকিব খান। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় তাঁর? ‘মনে হয়, আজকের এই অবস্থানে আসতে কিনা করতে হয়েছে? মৃত্যু পর্যন্ত এই কষ্ট করে যেতে হবে। যে যত সফল, তাঁর সংগ্রামও তত বেশি।’

নৃত্যশিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল অপুর

বগুড়া জেলার সদর থানার সাতমাথা এলাকার দত্তপাড়ায় অপুর জন্ম। চার ভাইবোনের সবার ছোট তিনি। মা-বাবার উৎসাহে নাচ করতে শুরু করেন। হাতেখড়ি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে। পরে শিল্পকলা একাডেমি এবং সবশেষে নৃত্যাঞ্চল। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন নৃত্যাঞ্চলের একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। তখন থেকে স্বপ্ন, নৃত্যশিল্পী হবেন।

২০০৫ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত কাল সকালে ছবি দিয়ে শুরু করেন চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার। পরের বছর শাকিব খানের সঙ্গে এফআই মানিকের কোটি টাকার কাবিন ছবিতে তাঁকে করে তোলে তারকা। এই জুটিকে নিয়ে এফ আই মানিক নির্মাণ করেন পিতার আসন, চাচ্চুদাদীমা। ২০০৭ সালে মেশিনম্যান ছবিতে মান্নার নায়িকা হন অপু। তারপর আবারও কাবিননামায় শাকিবের নায়িকা।

নায়িকা না হলে কী হতেন তিনি? ‘নৃত্যশিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তবে বাসা থেকে চাইত, আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। গুছিয়ে কথা বলতে পারতাম বলে সবাই বলতেন, আইনজীবী হলে ভালো করব। এ পেশাটার প্রতি এখনো আমার দুর্বলতা আছে।’

প্রথম রোমান্টিক গানে...

শাকিব যখন নায়ক, অপু তখন নাচের শিক্ষার্থী। বগুড়া থেকে মাঝেমধ্যে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় আসতেন। ২০০৭ সালে কোটি টাকার কাবিন-এ কাজের প্রস্তাব পেলেও জানতেন না নায়ক কে? মায়ের প্রিয় নায়ক রাজ্জাক এই ছবিতে কাজ করবেন জানার পর রাজি হয়ে যান অপুর মা। সেই ছবির সেটে শাকিবের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়।

স্কুলপড়ুয়া অপু দেখেছিলেন শাকিব খানের সুভা ছবিটি। পরে আমার স্বপ্ন তুমি দেখে শাকিব খানের ভক্ত হয়ে যান তিনি। প্রিয় নায়কের সঙ্গে অভিনয়ের অনুভূতি? সেটা বলে কখনোই বোঝানো যায় না। অপুও পারেননি বোঝাতে। কিন্তু প্রথম দেখায় কী হয়েছিল?

‘সালাম দিই। ভাইয়া সম্বোধন করি। কিছুদিন পর ঢাকার বাইরে যাই আউটডোর শুটিংয়ে। একটি রোমান্টিক গানের দৃশ্য ধারণের সময় শাকিব আমাকে বলে, “অ্যাই, আমাকে ভাইয়া ডাকবে না। নাম ধরে ডাকবে, নয়তো রানা (শাকিবের ডাকনাম) বলবে। পরিবার এবং খুব কাছের মানুষেরা এই নামে ডাকে তাঁকে। সেই থেকে তাঁকে রানা বলে ডাকি। কাছের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি মিলে যায় প্রথম রোমান্টিক গানের শুটিংয়ের সময়।