ফেরানো গেল না

লাকী আখান্দ্‌: ১৯৫৫–২০১৭
লাকী আখান্দ্‌: ১৯৫৫–২০১৭

ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার বাসায়। বলা হয়েছিল, তিনি সেরে উঠেছেন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন সুরকার, সংগীত পরিচালক লাকী আখান্দ্‌ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। 

মৃত্যুর খবর শুনে অনেকেই ছুটে যান তাঁর বাসায়। শোকের ছায়া নেমে আসে সংস্কৃতি অঙ্গনে। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ অনেকে।

লাকী আখান্দের সুর করা গান সত্তর ও আশির দশকে তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে ফিরেছে। ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’ থেকে শুরু করে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ প্রভৃতি গান কালের সীমানা ডিঙিয়ে এখনো সমান জনপ্রিয়। আবার সমকালে জেমসের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘লিখতে পারি না কোনো গান’ লাকীর সুর করা। সমকালীন কণ্ঠশিল্পীরা তাঁকে বলেন সুরের ‘বরপুত্র’।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হলে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে লাকী আখান্দের। এরপর ব্যাংককে ছয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার একটু উন্নতি হলে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে এনে তাঁকে ভর্তি করানো হয় বিএসএমএমইউতে। প্রায় আড়াই মাস এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অতি সম্প্রতি আরমানিটোলার বাসায় ফেরেন তিনি। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত শিল্পীর শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর হলে গতকাল সন্ধ্যায় আরমানিটোলার বাসা থেকে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা শিল্পীকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে তাঁর মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ শনিবার সকাল ১০টায় আরমানিটোলা মসজিদের সামনের মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা হবে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। বাদ জোহর তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। এরপর তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। 

মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সহায়তা করা হয়েছিল। ‘ট্রিবিউট টু স্যার লাকী আখান্দ্‌’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বছর অনুষ্ঠিত হয় দুদিনব্যাপী কনসার্ট।

লাকী আখান্দের জন্ম ১৯৫৫ সালে, পুরান ঢাকায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন লাকী আখান্দ্‌। আরেক কিংবদন্তি ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দী অনেক বিখ্যাত গানের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৮৭ সালে শিল্পী হ্যাপী আখান্দের অকাল মৃত্যুর পরপর সংগীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছানির্বাসন নেন লাকী।