অনন্ত ঘুমের দেশে নায়করাজ

নায়করাজ রাজ্জাক
নায়করাজ রাজ্জাক

অনন্ত ঘুমের দেশে পাড়ি জমালেন নায়করাজ। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভালোবাসায় পরিবার, চলচ্চিত্রের সহকর্মী এবং ভক্তরা মিলে দাফন করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ধন্য এই অভিনেতাকে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বহু লোক ছুটে এসেছিলেন রাজ্জাকের শেষযাত্রায়।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় নায়করাজ রাজ্জাককে। নায়কের তিন সন্তান রেজাউল করিম বাপ্পারাজ, রওশন হোসাইন বাপ্পী ও খালিদ হোসাইন সম্রাট ছাড়াও কাঁধে করে রাজ্জাকের খাটিয়া বহন করেন অভিনেতা শাকিব খান, জায়েদ খান, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ। এ সময় পুরো কবরস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রাজ্জাকের বহু ভক্তকে।

গতকাল ভোরে কানাডার টরন্টো থেকে ঢাকায় পৌঁছান নায়কের মেজ ছেলে বাপ্পী। তাঁর অপেক্ষায় এক রাত নায়কের মরদেহ হিমঘরে রেখে দেওয়া হয়। বাপ্পী শেষবারের মতো বাবাকে দেখার পর গতকাল ভোরে নায়ককে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তিনি বলেন, ‘আব্বার মৃত্যুতে সরকার যে অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছে, সে জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। আব্বা এত মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা পেয়েছেন দেখে সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশতে নসিব করেন।’

গত সোমবার নায়ক রাজ্জাকের মৃত্যুর সংবাদে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে চলচ্চিত্র অঙ্গন। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে ছুটে যান তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও অনুজেরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা শাকিব খান। মঙ্গলবার প্রায় সারা দিনই তিনি ছিলেন নায়কের মরদেহের সঙ্গে। গতকাল নায়করাজকে বিদায় জানানোর পর শাকিব খান সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘তাঁর (রাজ্জাক) পরিবারের লোকজন জানেন, আমি তাঁর কতটা কাছের ছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘জীবনের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তিনি আমার পাশে ছিলেন। তাঁর দরজা সবার জন্য খোলা থাকত। সবাইকে তিনি সাহায্য করেছেন, মন থেকে ভালোবেসেছেন।’ কথা বলতে গিয়ে এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলেন শাকিব খান।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে নায়করাজ রাজ্জাকের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার বিএফডিসিতে আয়োজন করেছে কাঙালিভোজ ও দোয়া মাহফিল।

সোমবার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে মারা যান তিনি।

রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে দর্শকনন্দিত হন কিংবদন্তি এই অভিনেতা। তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ৫০০। শুধু নায়ক হিসেবেই নন, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল ছিলেন তিনি। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে ‘নায়করাজ’ হয়েছেন রাজ্জাক। পাঁচবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পান তিনি।

সংশোধনী

২২ আগস্ট প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিদায় নায়ক রাজ্জাক’ শিরোনামের লেখায় রাজ্জাকের জন্মস্থান লেখা হয়েছে কলকাতার কালীগঞ্জের নাকতলায়। এখানে কালীগঞ্জের স্থলে হবে টালিগঞ্জ। একই লেখায় ছবি বিশ্বাসকে অভিনেত্রী বলা হয়েছে। আসলে হবেন অভিনেতা। বা.স.