'বিচারকদের আমিই চিরকুট দিয়েছি'

স্বপন চৌধুরী
স্বপন চৌধুরী

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সমালোচিত হচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজ। অনেকেই বলছেন, জান্নাতুল নাঈমের বিয়ের বিষয়টি সামনে আসার কারণে আড়ালে চলে যাচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনার নানা ঘটনা। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি পাঁচতারকা হোটেলে নতুন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণা নিয়ে হয়েছে চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী।

বুধবার সন্ধ্যায় ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর দেখা গেল প্রথম রানারআপ ঠিক রেখে বাকি সবার ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে। কেন?
ও (জান্নাতুল নাঈম) ছিটকে পড়েছে কিংবা ওর র‍্যাংক কেড়ে নেওয়া হয়েছে—এমন কোনো কথা আমি কিন্তু বলিনি। মিস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে যে শর্ত দিয়েছে, আমাকে তার মধ্যে চলতে হবে। অনুষ্ঠান শুরুর দিকে ছিল একধরনের নিয়ম। আমরা যতই গ্র্যান্ড ফিনালের দিকে এগিয়েছি, নিয়ম ততই কঠোর হয়েছে। প্রত্যেক প্রতিযোগী যা করবেন, তার জন্য জবাবদিহি আমাদের করতে হয়। জান্নাতুল সুমাইয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ কর্তৃপক্ষের দেওয়া সব নিয়ম অমান্য করেছেন। আমরা তাঁকে বুধবারের অনুষ্ঠানে আসার জন্য বলেছি, কিন্তু তিনি আসেননি। এরপর তো তাঁকে নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। যেসব প্রতিযোগী উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে সবকিছু চূড়ান্ত করতে হয়েছে। বিষয়টি তো এমন না যে আমি দেশের একজন ডন, কাউকে বলব তুই আসবি না, আমি আরেকজনকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ বানাব।

জান্নাতুল সুমাইয়া কোন নিয়ম অমান্য করেছেন?
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি মিলনায়তনে সেদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) তাড়াহুড়ো করে আমাদের অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়। কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছিল। কিন্তু বুধবারের অনুষ্ঠানে জান্নাতুল নাঈম ছাড়া বাকি নয়জন প্রতিযোগীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এটা ছিল পুরস্কার প্রদান এবং পুনরায় নাম ঘোষণার অনুষ্ঠান। বড় উৎসব। সেখানে জান্নাতুল সুমাইয়া উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি। এটাই তাঁর বড় অপরাধ।

২৯ সেপ্টেম্বর ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর জেসিয়া ইসলাম, জান্নাতুল নাঈম ও জান্নাতুল সুমাইয়া
২৯ সেপ্টেম্বর ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর জেসিয়া ইসলাম, জান্নাতুল নাঈম ও জান্নাতুল সুমাইয়া

রিয়ালিটি শোতে মূল রাউন্ডের বিচারকেরাই গ্র্যান্ড ফিনালেতেও থাকেন। হয়তো বাড়তি হিসেবে অতিথি বিচারক দেখা যায়। আপনার এই আয়োজনে গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারকদের আর কোনো রাউন্ডে দেখা যায়নি। কেন?
অল্প সময়ে আমাদেরকে কাজটি করতে হয়েছে। তা ছাড়া আমরা প্রতি রাউন্ডে আলাদা আলাদা বিচারক রাখতে চেয়েছি। যাতে বিচারকাজ কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়। কোনো বিচারক যেন কোনো প্রতিযোগীর ব্যাপারে মানসিকভাবে ইনভলবড হতে না পারেন। পুরো ব্যাপারটিতেই স্বচ্ছতা রাখতে চেয়েছি। এটাকে মোটেও ভিন্ন চোখে দেখার কিছু নেই। তা মোটেও ব্যর্থতা কিংবা অব্যবস্থাপনা নয়।

কিন্তু আয়োজকদের বিরুদ্ধেই তো বিচারকাজকে প্রভাবিত করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিচারকদের হাতে আপনি চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কেন?
বিচারকদের মধ্যে শুধু শম্পা রেজা চিরকুট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন।

বিবি রাসেল ছাড়া অন্য বিচারকদের সঙ্গে কথা বলেও কিন্তু এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
স্বীকার করছি, বিচারকদের আমিই চিরকুট দিয়েছি। তবে এটা মোটেও তাঁদের বিচারকাজকে প্রভাবিত করার জন্য নয়। আমি চিরকুট দিয়ে তাঁদের বলতে চেয়েছি, এই তিনজন আগের রাউন্ডগুলোতে এগিয়ে আছে, আপনারা ওদেরকে একটু দেখবেন। আমার তো গোপন করার মতো কিছু নেই। যদি বলা হয়, জান্নাতুল নাঈমকে আমি প্রথম করতে চেয়েছি তাহলে বলব, কেন? এমন না যে আমি টাকা নিয়ে এ কাজ করেছি। তাঁর বাবার কোটি টাকা নেই! কেউ বলতে পারবে না আমি টাকা খেয়েছি।

আপনি ভবিষ্যতেও ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ আয়োজন করবেন?
আমরা ছয় বছরের জন্য এ আয়োজনের অনুমতি পেয়েছি। এবার হাতে খুব অল্প সময় ছিল, তাই কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে। আগামী বছর কাজটি আরও গুছিয়ে করব। বছরের গোড়া থেকে কাজ শুরু করব। বিভাগীয় শহর থেকে সেরা সুন্দরী নির্বাচন করব। এরপর সব বিভাগের প্রতিযোগীদের নিয়ে ঢাকায় চূড়ান্ত রাউন্ড ও গ্র্যান্ড ফিনালে করব। এবারের ভুল থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আর ভুল হবে না।

আরও পড়ুন...