নাচ ভালোবেসে উৎসব

জাতীয় নাট্যশালায় গতকাল তৃতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবের উদ্বোধনীতে পরিবেশিত সূর্যমুখী নদী নৃত্যনাট্যের একটি দৃশ্য l সাইফুল ইসলাম
জাতীয় নাট্যশালায় গতকাল তৃতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবের উদ্বোধনীতে পরিবেশিত সূর্যমুখী নদী নৃত্যনাট্যের একটি দৃশ্য l সাইফুল ইসলাম

যাঁরা নিয়মিত শিল্পকলা একাডেমি বা বেইলি রোডে আসা-যাওয়া করেন, শীত এলে তাঁদের চাওয়াটা যেন একটু বেশিই থাকে। পৌষের চতুর্থ দিনে গতকাল এই চাওয়া পূর্ণ করল তৃতীয় নৃত্যনাট্য উৎসব। লেখা বাহুল্য, আগামী কয়েকটা দিন জাতীয় নাট্যশালা শাসন করবে নৃত্যনাট্যই। এবারের উৎসবের মূল বৈশিষ্ট্য ঢাকার বাইরের দলগুলো অংশ নিচ্ছে আয়োজনে।

সোমবার সন্ধ্যায় উৎসবের আভাস মিলল নাট্যশালার বাইরে থেকেই। করিডরে ঢুকতেই কানে এল নিক্বণ। বাইরের সব আওয়াজ ছাপিয়ে মঞ্চের পাশ থেকে সেই আওয়াজ আসে।

নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা পরে শুরু হয় উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা। প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও ভাষাসৈনিক এনামুল হক। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।

অপসংস্কৃতি রোধে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আজ আমরা স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে সংস্কৃতিচর্চা করতে পারছি। পরাধীন থাকলে এটি সম্ভব হতো না। এই বাংলাদেশেও ’৭৫-পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কুপ্রভাবে সংস্কৃতিচর্চা নানাভাবে ব্যাহত হয়েছে। উন্নত জাতি গড়তে হলে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার সমন্বয় জরুরি।’

তরুণ প্রজন্মকে শিকড়ের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তৃতীয়বারের মতো উৎসবটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা—এমনটাই জানালেন সংস্থার সভাপতি মীনু হক। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের ওপর কালো থাবা বিস্তার করলেও শিল্পীসমাজ থেমে থাকেনি। দেশের শিকড়ের কৃষ্টি-সংস্কৃতির চর্চা হুমকির মুখে যখন, তখন নৃত্যশিল্পীরাও সরব ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। তারই ধারাবাহিকতায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।’

শুধু নাচ নয়, নৃত্যনাট্যের সঙ্গে থাকে কিছু গল্পও। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগ পর্যন্ত বাংলা নৃত্যনাট্য রাবীন্দ্রিক ধারা এবং উদয়শঙ্করের আধুনিক টেকনিক দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে। নৃত্যনাট্যের বিষয় ও আঙ্গিকগত পরিবর্তনও হয়। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে কত্থন পর্ব শেষে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস পরিবেশন করে নৃত্যনাট্য সূর্যমুখী নদী। এটি মূলত সামাজিক নৃত্যনাট্য। চোখ-ধাঁধানো এই পরিবেশনা। রঙিন আলো, ঘুঙুরের শব্দ আর শিল্পীর হৃদয়গ্রাহী মুদ্রা—সব মিলিয়ে দর্শক নৃত্যমোহে ডুবে ছিল পুরোটা সময়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিলুফার ওয়াহিদ।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের শিল্পীরা ‘মায়ার খেলা’ এবং সাতক্ষীরার শিল্পীরা ‘চণ্ডালিকা’ পরিবেশন করবেন। দ্বিতীয় পর্বে জানুয়ারিতে ঢাকার নৃত্যশিল্পীদের দল চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, নাটোর, ময়মনসিংহে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করবে।

উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে নৃত্যশিল্পী সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা প্রয়াত নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানম ঝুনুকে।