দর্শককে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই

মাছরাঙা টিভিতে ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে প্রচারিত হলো টেলিছবি অপেক্ষার শেষে। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা শাখাওয়াত শিবলী। অভিনয়ে অপর্ণা ঘোষ, সজল প্রমুখ। প্রথমেই টেলিছবির কাহিনি সংক্ষেপে তুলে ধরা যাক। প্রবাসী সজল দেশে এসে আচমকাই পছন্দ করে ফেলে অপর্ণাকে। কিন্তু বন্ধুর কাছে জানতে পারে, অপর্ণা দেশপ্রেমিক ও সংস্কৃতিমান, প্রবাসী ছেলেরা তার অপছন্দ। তারপর সজল শুরু করে তার অপর্ণাকে জয় করার মিশন। দূর থেকে অপর্ণার ছবি তোলে, ফুটপাতে অপেক্ষারত অপর্ণার সঙ্গে অযাচিত কথা শুরু করে, রিকশায় পিছু নেয়, অপর্ণা বিরক্ত হয়। তারপর পথিমধ্যে বখাটেদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে অপর্ণা সজলের আশ্রয় নেয়। এরপর সজল চাকরিজীবী পরিচয় দেয়, শুরু হয় প্রেম। প্রেমের মাঝে একপর্যায়ে সজল উধাও। অপর্ণা উদ্‌ভ্রান্ত। এর তিন মাস পর ফিরে এসে সজল জানায়, তার বাবা-মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে সে হঠাৎ বিদেশ চলে যায়, তাই এই বিচ্ছেদ। তারপর আবার মিলন এবং দুজনের বিয়ের সিদ্ধান্ত।

গল্পের পটভূমি নিতান্তই গতানুগতিক। এক কথায় বলব, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা ব্যর্থ হয়েছেন। সজল টেলিছবির নায়ক, অথচ তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে জোকারের মতো। সে শুরু থেকেই হ্যাংলামো করেছে অপর্ণার সঙ্গে। আমাদের সমাজে চিরদিনই ছেলেরা মেয়েদের মন জয় করে ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি চারিত্রিক গুণাবলি দিয়ে। এখানে দেখানো হয়েছে, সজল অপর্ণাকে জয় করছে হ্যাংলামো ও মিথ্যাচার দিয়ে।

এবার কয়েকটি দৃশ্যের কথা বলা যাক, অপর্ণা বখাটেদের উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছুটে গিয়ে ধাক্কা খেলো সজলের কাঁধে, আরেক দৃশ্যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে গাড়ির হর্ন শুনে সজলের বুকে লুটিয়ে পড়া, কী অস্বাভাবিক ও অবাস্তব! পরিচালককে অনুরোধ জানাই আরেকবার দৃশ্য দুটি দেখতে। তারপর সজল তিন মাসের জন্য হারিয়ে যাওয়া, ফিরে এসে বলা, বাবা-মায়ের মৃত্যুসংবাদে লন্ডনে যাওয়া। যাওয়ার আগে, পরে, মাঝে তিন মাসের মধ্যে একটা ফোন, ফেসবুক, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জারের এই যুগেও এমন হয় নাকি! নির্মাতারা আমাদের কী মনে করেন জানি না, হয়তো মনে করেন, দর্শক সব নির্বোধ ও অন্ধ-বধির।

২৬ জানুয়ারি রাত ৯টায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো নাটক মিথিলা। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা হাসান জাহিদ। অভিনয়ে ইন্তেখাব দিনার, প্রভা, প্রমুখ। নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম: বদলির চাকুরে দিনার স্ত্রী প্রভাকে খুলনায় রেখে ঢাকায় চলে আসে। পুরোনো বাড়ির একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকে এবং চাকরি করে। অনেক প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে স্ত্রী প্রভা স্বামীর কাছে ঢাকায় আসার পথে হঠাৎ বাস দুর্ঘটনায় মারা যায়। মৃত্যুর পর দিনার জানতে পারে তার গর্ভে সন্তান ছিল, যে সংবাদটি সে স্বামীকে দিতে চেয়েছিল ঢাকায় এসে। এরপর কাকতালীয়ভাবে দিনারের অসুস্থতার মাঝে দেখা হয় তার বাসার মালিকের মেয়ের। মেয়েটি ডিভোর্সি এবং হুবহু তার স্ত্রী প্রভার চেহারা। মেয়েটির একটি শিশুকন্যাও আছে। দিনার প্রথমে বিস্মিত হয়, তারপর মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস।

এটিও একটি সাদামাটা গল্প, অথচ চমৎকার নাটকীয় গুণে হয়েছে সার্থক ও উপভোগ্য একটি নাটক। জীবনের গতানুগতিক গল্পকে যে কীভাবে নাটকীয় করে তোলা যায়, বর্তমানের অনেক নাট্যকার ও নির্মাতাই সেটি জানেন না, মিথিলা নাটকটি হতে পারে তাঁদের জন্য শিক্ষণীয়। দিনারের জীবন ও বাড়িওয়ালার মেয়ের জীবন, এর সঙ্গে সহায়ক দু-তিনটি চরিত্র ও বাস্তব কিছু দৃশ্য সংযোজন করে নাট্যকার ও নির্মাতা উপহার দিয়েছেন একটি সার্থক নাটক। শুধু একটি সংলাপ, ক্যাকটাসে ফুল ফোটা আর দিনারের শিশুকন্যাটি কোলে নেওয়ার মধ্য দিয়েই যেন নাট্যকার সব বুঝিয়ে দিলেন দর্শককে। চমৎকার! তবে একটি বিষয় আমাদের কাছে বিসদৃশ মনে হয়েছে, তা হলো বাড়িওয়ালার মেয়ের চেহারা ও দিনারের স্ত্রী মিথিলার চেহারা হুবহু এক দেখানো।

২৬ জানুয়ারি বেলা তিনটায় দেশ টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো গানের অনুষ্ঠান ‘প্রিয়জনের গান’। এদিন শিল্পী ছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। দুজনই শুদ্ধ সংগীতের ধারক ও বাহক। দুজনেরই রয়েছে নজরুলসংগীতের প্রতি অনুরাগ। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, এই অনুষ্ঠানে তাঁরা উভয়েই বিভিন্ন ধারার গান করার চেষ্টা করেছেন। যেমন ফাতেমা তুজ জোহরা গেয়েছেন ‘নিজেরে হারায়ে খুঁজি’, ‘যে গান তোমায় আমি শোনাতে’, ‘সুরের এই ঝর ঝর ঝর ঝরনা’ বা পপ ঘরানার ‘সেই জেলেতে মাছ ধরা’ ইত্যাদি। ফাতেমা তুজ জোহরার পরিবেশনার লক্ষণীয় দিক হলো বৈচিত্র্য, যে কারণে তিনি বিভিন্ন সুরের ও লয়ের গান করেছেন। তবে দ্রুতলয়ের গানই তিনি নির্বাচন করেছিলেন বেশি। তাঁর কণ্ঠ এখনো সুললিত। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য দর্শক-শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

অন্যদিকে বিজন চন্দ্র মিস্ত্রির নির্বাচনে ছিল রাগাশ্রয়ী সুরের প্রভাব। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে বলা যায় ‘আমার সকল কিনতে পারে এমন আমির কই’, ‘মনের মানুষ চিনলি নারে’, ‘পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেই দিন’, ‘যেন মনে কিছু কোরো না’ ‘খুঁজবে আমায় সে দিন যে দিন আমি থাকব না’ ইত্যাদি। শিল্পী বিজনের কণ্ঠও সুরেলা ও মিষ্টি। অনুষ্ঠানে আরও ভালো লেগেছে দুজনের তালমিল। শেষে অনুজ হয়ে শিল্পী বিজন অগ্রজ ফাতেমা তুজ জোহরার প্রতি যে ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, তা-ও যেন অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে শেষে এসে একটি বিষয় বলতেই হয়, তা হলো মাইক্রোফোন সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় অথবা না করায় অনেক গানেরই বাণী অস্পষ্ট থেকে গেছে।