দর্শক ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব

>ঈদে মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি চলচ্চিত্র—‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’, ‘সুপার হিরো’, ‘পাংকু জামাই’, ‘পোড়ামন ২’ ও ‘কমলা রকেট’। পাঁচটি ছবির জোরেই খুলেছে বেশ কিছু নতুন সিনেমা হলও। ছবি দেখতে দর্শক সমাগমও কম নয়। কিন্তু সমালোচকেরা কী বলেন? গত সপ্তাহে ‘পোড়ামন ২’ ও ‘কমলা রকেট’-এর সমালোচনার পর আজ ছাপা হলো বাকি তিনটি ঈদের চলচ্চিত্রের সমালোচনা।
‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী
‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী

ছবির টাইটেল প্লেট দেখলেই মনে হবে হাসি, আনন্দ, বিনোদনে ভরপুর একটি গল্প অথবা বাংলাদেশের বৃহৎ দুই অঞ্চলের কৃষ্টি-কালচার, ঐতিহ্যনির্ভর কোনো গল্পের ছবি। দেখার পর কতটুকু আনন্দ পেলাম অথবা বাংলাদেশ দেখলাম, সেই আলোচনায় পরে যাচ্ছি...।

শুরু করছি শেষ দিয়ে।

ছবি শেষ করে যখন হল থেকে বের হচ্ছিলাম, দেখলাম বেশির ভাগ দর্শক চট্টগ্রাম অথবা নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলছেন। কেউ কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। নারী দর্শকের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। ছবি দেখে কেউ আনন্দিত, কেউ আবেগাপ্লুত। এতে করেই বোঝা যায় নিজের জন্মস্থান, নিজের শহর, নিজের দেশ এবং মায়ের ভাষাকে কতটা ভালোবাসি আমরা।

দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত ছবি ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। চিরাচরিত ঢঙের গল্প হলেও সিরিও কমেডি ফরম্যাটের প্রেজেন্টেশন করায় আলাদা মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। উত্তম আকাশ একজন অভিজ্ঞ নির্মাতা। অভিজ্ঞতার ছাপ পাওয়া যায় চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচনে। শাকিব খান, বুবলীর পাশাপাশি মৌসুমী, ওমর সানী, সাদেক বাচ্চু, কাজী হায়াতের মতো গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নির্বাচন করে বিশ্বাসযোগ্যতা আনার চেষ্টা করেছেন।

ভালো লেগেছে বুবলীর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়। দেখতেও সুন্দর লেগেছে; বিশেষ করে গানে। চেষ্টা করলে বুবলী হয়তো দর্শকের মন জয় করতে পারবেন ভবিষ্যতে। শাকিব খান নাম্বার ওয়ান হিরো হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, যদিও অভিনয়ের সুযোগ ছিল কম। ওমর সানী, মৌসুমী, সাদেক বাচ্চু, কাজী হায়াত, মাহমুদুল হক মিঠু নিজ নিজ রূপে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে মৌসুমী ও ওমর সানির চরিত্র দুটির প্রতি আরেকটু যত্নবান হলে গল্পের প্রতি সুবিচার করা হতো। আর ডিজে সোহেলের অতি অভিনয় গুণী অভিনেত্রী মৌসুমীর সামনে খাপছাড়া মনে হয়েছে। সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারেননি ডিজে সোহেল তাঁর অভিনয়ে।

লোকেশন সিলেকশন সুন্দর ছিল। পুরো ছবিতেই বিদেশে সুন্দর সুন্দর কিছু লোকেশন তুলে ধরা হয়েছে, যা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কোথাও চিটাগাং, নোয়াখালী বা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়নি; যা ছবির নামের সঙ্গে সংগত নয়। তবে প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দিয়ে চিটাগাং আর নোয়াখালীর ভাষায় সংলাপ বলানোর মাধ্যমে নামের সার্থকতা আনার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। সুদীপ কুমার বরাবরই গান ভালো লেখেন, এটাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চিত্রায়ণেও ভিন্নমাত্রা ছিল। গ্রাফিকসের কাজগুলো চোখে পড়েছে। হয়তো চেষ্টা ছিল কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ ছিল না।

ক্যামেরার কাজ ভালো ছিল, ধন্যবাদ রাজু রাজকে। কস্টিউম, সেট, প্রপসের ব্যবহার ঠিকঠাক ছিল। ধন্যবাদ প্রযোজক সেলিম খানকে—প্রযোজক হিসেবে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য। দ্বিতীয় সপ্তাহেও দর্শক উপস্থিতি সন্তোষজনক। পুরো দেশে এখন বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মাতামাতি। মেসি, রোনালদো, নেইমারের মতো সুপারস্টার নিয়ে ব্যস্ত থাকা ফুটবলপাগল দর্শক বাংলাদেশের বাংলা ছবি দেখতে সিনেমা হলে যাচ্ছেন—এটা শুভ লক্ষণ। দর্শক ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। প্রয়োজন ভালো গল্পের, ভালো নির্মাণের।

ধন্যবাদ সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। ধন্যবাদ পরিচালক উত্তম আকাশকে। ধন্যবাদ সিনেমাপাগল দর্শকদের।

লেখক : নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা