শোক নেমে এসেছিল সেই রাতে

‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ নাটকের মহড়ায় শিল্পীরা
‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ নাটকের মহড়ায় শিল্পীরা

কালরাত। সেনাছাউনিতে ফিসফিসানি। জলপাই রঙের উর্দি পরা খুনিরা হত্যার সিলেবাস তৈরি করে। বুটের মচমচ শব্দে খুনিদের ভয়ংকর গোঙানির শব্দ শোনা যায়। এই নীলনকশার পেছনে কলকাঠি নাড়েন এক ধূর্ত বৃদ্ধ-খন্দকার মোশতাক। ফিসফিসানির মধ্য দিয়ে তৈরি হয় ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। আগস্টের এক রাতে হত্যা করা হবে রাষ্ট্রপতিকে।

১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার কথা কে না জানে? কিন্তু এই ঘটনার জমিনে দাঁড়িয়েই মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় তৈরি করেছে তাদের নাটক শ্রাবণ ট্র্যাজেডি। গত মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির চিলেকোঠার পাশে এক নম্বর মহড়াকক্ষে চলছিল মহড়া। ভেতরে ঢুকতেই দেখি, বুক চিতিয়ে কয়েক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। মাথায় কয়েকজনের আর্মি ক্যাপ। পায়ে কালো বুট। হাতে কালো রঙের বাঁশের লাঠি। এগুলোই নাকি হয়ে উঠবে অস্ত্র। পাশেই পড়ে আছে চাকা লাগানো গাড়ি। মহড়া শুরু হলে এটিই হয়ে উঠবে সৈনিকদের ট্যাংক।

পাশেই বসা নাটকের নির্দেশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আশিক রহমান এবং নাটকের নাট্যকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনন জামান। নাট্যকার ও নির্দেশক আলোচনা করছিলেন পাণ্ডুলিপি নিয়ে। দলপ্রধান মীর জাহিদ হাসান বললেন, ‘এখনই মহড়া শুরু করব।’

সূত্রধরের বর্ণনায় নাটকের শুরু। শুধুই কি রাষ্ট্রপতিকে হত্যার পূর্বমুহূর্তের ঘটনা দিয়েই সাজানো নাটক? না। এই ঘটনার মধ্যেই দেখা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানে কারাবরণের স্মৃতি। তাঁর যৌবনের গল্প। বায়ান্ন, উনসত্তরের আন্দোলন। সাতচল্লিশ-পরবর্তী পাকিস্তানিদের শোষণ। কখনো কখনো এসব ঘটনায় ঢুকে পড়ে তাঁকে হত্যাকারী খুনিদের পরিণতিও। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জেরার মুখে তারা। তাদের চেহারা বলে দেয়, রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা কতটা জঘন্য অপরাধ ছিল।

এভাবে একটি সরল গল্পের মধ্যে মুহূর্তে শাখা গল্প ঢুকে পড়ে। দর্শক কিছুটা ধন্দে পড়তে পারেন। তাঁদের ভাষ্য, নাট্যকার এ গল্পটিকে ঠিক সরল করে বলেননি। চূড়ান্ত দৃশ্যের আগেই পরের ঘটনাগুলোও ঢুকে যায় অনায়াসে। যাকে ব্যাকরণের ভাষায় ‘নন লিনিয়ার’ বলে।

এমন গল্পের ঘনঘটায় এগিয়ে যায় মহড়া। ঘনিয়ে আসে সেই কালরাত। পরিবারসহ রাষ্ট্রপতি শহীদ হন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে লাশ। ল্যাপটপে করুণ সুর বাজে। তখন মহড়ায় থাকা সবাই নীরব। যেন সে রাতেও শিল্পকলার এক নম্বর মহড়াকক্ষে নেমে এসেছিল শোকের আবহ। আনমনা হয়ে যান সবাই। কারও চোখের কোণে জমে দুই ফোঁটা অশ্রুও।

শোকাবহ সেই ঘটনা এবং তার চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় হাজির হবে আগামী ৩ আগস্ট। পরের দিন থাকবে আরও একটি প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সন্ধ্যা সাতটায় শ্রাবণ ট্র্যাজেডি নাটক নিয়ে ৪০ জন তরুণ নাট্যকর্মী থাকবেন আপনার অপেক্ষায়।