কলকাতায় রজনীকান্তের আবক্ষ মূর্তি

রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তি
রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তি

প্রখ্যাত কবি, দেশাত্মবোধক আর ভক্তিমূলক গানের রচয়িতা রজনীকান্ত সেনের ১৫৩ম জন্মবার্ষিকী ছিল ২৬ জুলাই। কলকাতায় শ্রদ্ধাভরে সেই দিনটি পালন করেছে ‘ঋদ্ধি: এ স্টেপ ফর মিউজিক’ বা ঋদ্ধি মিউজিক একাডেমি। সেদিন উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্কে উন্মোচন করা হয় রজনীকান্তের আবক্ষ মূর্তি। মার্বেল পাথর দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই মূর্তি উন্মোচন করেন কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র পারিষদ দেবাশীষ কুমার। তিনি বলেন, ‘আজ অনেক বছর পর আমাদের এই মহান কবি এবং দেশাত্মবোধক ও ভক্তিমূলক গানের রচয়িতা রজনীকান্তকে সম্মান জানাতে পেরেছি।’ এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রজনীকান্ত সেনের নিকটজনেরা। ছিলেন দিলীপ রায়, শম্পা গুপ্ত, দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

জানা গেছে, রজনীকান্ত সেনের এই আবক্ষ মূর্তি স্থাপনে উদ্যোগ নেয় কলকাতার ‘ঋদ্ধি: এ স্টেপ ফর ফর মিউজিক’। এই সংস্থার কর্ণধার ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রজনীকান্তের গানের ভক্ত, দেশ-বিদেশে রজনীকান্তের গান করছেন। তিনি পঞ্চকবির গান করেন। এই পঞ্চকবির একজন রজনীকান্ত সেন। তাই বিখ্যাত মানুষটির স্মৃতিকে জাগরুক রাখার জন্য তিনি এবং তাঁর সংস্থা হেদুয়া পার্কে রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করেছেন।

রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তির পাশে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়
রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তির পাশে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

এই প্রথিতযশা কবি ও সংগীতকার জন্মেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে। ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে চলে আসেন কলকাতা সিটি কলেজে। এখান থেকে স্নাতক ও আইনে বিএল পাস করেন।

ছোটবেলা থেকেই রজনীকান্তের ঝোঁক ছিল সংগীত ও সাহিত্যের প্রতি। কলকাতা থেকে ফিরে রাজশাহীতে তিনি আইন পেশা চর্চা করেন। একসময় তিনি নাটোর ও নওগাঁয় মুনসেফ হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বাবা গুরুপ্রসাদ সেন ছিলেন একজন নামী আইনজ্ঞ। লেখক। সংগীতকারও। তিনি সাবজজ হিসেবে রংপুর, দিনাজপুর, কালনা, কৃষ্ণনগর, কাটোয়া এবং বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গেরে কাজ করেন। কাটোয়ায় থাকাকালে রজনীকান্তের জন্ম। রজনীকান্তের গানের মধ্যে আছে ভক্তিমূলক, দেশাত্মবোধক, মানবধর্মী ও হাস্যরসাত্মক গান।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ‘কালীসংগীত’ রচনার মাধ্যমে তাঁর কবিশক্তির প্রকাশ পায়। রাজশাহীতে অবস্থানকালে অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র আসরে তিনি স্বরচিত গান গাইতেন। আর এখানেই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কণ্ঠে হাসির গান শুনে তিনি হাসির গান লিখতে শুরু করেন। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘উৎসাহ’ পত্রিকায় তাঁর লেখা গান ও কবিতা প্রকাশিত হয়।

রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তির পাশে সবাই
রজনীকান্ত সেনের আবক্ষ মূর্তির পাশে সবাই

রজনীকান্তের কবিতা ও গানের মূল ভাবনা দেশপ্রেম ও ভক্তি। তাঁর বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে আছে ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতা টাউনহলে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। আর তখন তিনি রচনা করেন গানটি। রজনীকান্ত স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাণী’, ‘অমৃত’, ‘কল্যাণী’, ‘অভয়া’, ‘আনন্দময়ী’, ‘সদ্ভাব কুসুম’, ‘বিশ্রাম’ ও ‘শেষ দান’ ইত্যাদি। তিনি একসময় পরিচিত হন ‘কান্তকবি’ নামে। আর তাঁর সংগীতভান্ডার পরিচিত হয় ‘কান্তগীতি’ হিসেবে।

এই প্রথিতযশা কবি ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৫ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় প্রয়াত হন।