পুনঃপ্রচারিত অনুষ্ঠান নতুনের দিকনির্দেশক

দ্য হিরো নাটকে এফ এস নাঈম ও নাদিয়া মিম
দ্য হিরো নাটকে এফ এস নাঈম ও নাদিয়া মিম

এবারের মূল আলোচ্য পুনঃপ্রচারিত দুটি টেলিছবি ও নাটক। উদ্দেশ্য, সাম্প্রতিক টেলিছবি ও নাটকের সঙ্গে একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা। ৪ আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে দেশ টিভিতে প্রচারিত হলো বিরতিহীন নাটক জীবন সন্ধ্যা। নাটকটির রচয়িতা ও নির্মাতার নাম দেখার সুযোগ হয়নি। তবে অভিনয়ে ছিলেন আবুল হায়াত, ডলি জহুর, নাজমুল হুদা বাচ্চু, ড. ইনামুল হক, অহনা, আবিদ রায়হান প্রমুখ।

চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। জীবনসায়াহ্নে উপনীত একদল বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার দৈনন্দিন জীবনই নাটকের বিষয়। একদা সমাজে ও সংসারে যারা ছিল দায়িত্বশীল কর্মী ও সফল সংসারী, আজ তারাই সমাজে ও সংসারে কীভাবে উপেক্ষিত ও অবহেলিত, সেটিই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তারা আজ কেউ সন্তানের সংসারে, কেউ আত্মীয়ের সংসারে নানাভাবে পরনির্ভরশীল। সেখানে মায়ার বন্ধন যেটুকু আছে, তার চেয়ে বেশি আছে বিরক্তি, খরচ ও ঝামেলার বোঝা। প্রবীণেরা প্রতিদিন তাদের এসব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তিক্ততা নিয়ে মিলিত হয় পার্কের একটি নির্দিষ্ট স্থানে। তাদের শরীরচর্চা, কুশল বিনিময় ও হাসি–আনন্দ ছাপিয়ে একসময় সেই সব তিক্ত অভিজ্ঞতা সবার মাথার ওপর মেলে ধরে বিষাদের কালো ছায়া। তারা কী করবে, ভেবে পায় না। অতঃপর তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা করবে। নাটকের শেষে যখন তারা আত্মহত্যা করতে যায়, তখন তাদের পার্শ্বচর এক নবীন যুগল এসে সবার হাত থেকে বিষের গ্লাস কেড়ে নেয়। তাদের জানায়, তারা সংসারে অপাঙ্‌ক্তেয় হলেও সমজে অভিজ্ঞ ও মূল্যবান। নবীন যুগল তাদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায়।

চমৎকার একটি বিষয়বস্তু, চমৎকার চিত্রনাট্য, সংলাপ ও অভিনয়। নির্মাণ সম্পর্কে বলব, ছেলের বউ ও প্রতিবেশিনী দুজনের সংলাপ ও অভিনয় অপরিপক্ব হয়েছে। আর একসঙ্গে স্লোগান দিয়ে বিষ পান করার দৃশ্যটি অবাস্তব ও অতিনাটকীয় মনে হয়েছে। বাকিটা সুন্দর।

একই দিন এনটিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি দ্য হিরো। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রুম্মান রশীদ খান। পরিচালনা করেছেন মাকসুদুর রহমান। অভিনয়ে অপূর্ব, নাঈম, কাজী উজ্জ্বল, দুখু সমান, মারিয়া রহমান প্রমুখ।

বর্তমানে প্রচারিত অধিকাংশ নিম্নমানের টেলিছবির ভিড়ে দ্য হিরোকে মনে হয়েছে একটি সার্থক টেলিছবি। গল্পটিও ছিল বেশ নাটকীয়তাপূর্ণ বা সিনেমাটিক। চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতিমান নায়ক শায়েন খান প্রেমে পড়ে যায় তার এক অখ্যাত ভক্ত মিতুর। মিতু ও তার পরিবার বিশ্বাস করতে পারে না। তারপর একের পর এক ঘটতে থাকে নাটকীয়তা। মিতু যখন সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রেমিককে বিয়ে করার, তখন শায়েন খান তার জন্য আংটি নিয়ে উপস্থিত হয়। অবশেষে অনেক নাটকীয়তার পর মিতু তাকে জানিয়ে দেয়, সে কেবল তার ভক্তমাত্র, এর বেশি কিছু নয়। তার পক্ষে বিয়ে করাও সম্ভব নয়। এখানেই গল্পের অভিনবত্ব। এখনকার নাটক ও টেলিছবিগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দর্শকের এই বিশ্বাসযোগ্যতা, নাটকীয়তা ও নির্মাণশৈলী সৃষ্টিতেই হচ্ছে ব্যর্থ।

২ আগস্ট রাত ১১টায় শিল্পী সজীবের উপস্থাপনায় নাগরিক টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো সংগীতানুষ্ঠান ‘গানওয়ালা’। এদিন অতিথি ছিলেন শিল্পী অলোক সেন।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রচারিত অনুষ্ঠানটি দেখে শেষে মনে হলো, এটিকে গানের অনুষ্ঠান না বলে বলা যায় গানের আড্ডা। উপস্থাপক সজীব নিজেও শিল্পী, অলোক সেনও একজন প্রথিতযশা শিল্পী। দুজনেরই রয়েছে উচ্চাঙ্গসংগীতে পারদর্শিতা। তাঁরা অনেক গানই করেছেন দ্বৈত কণ্ঠে। একজন ছেড়েছেন, আরেকজন ধরেছেন। এক দর্শক তো ফোন করে বলেই ফেললেন, মনে হচ্ছে গানের খেলা। অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন অলোক সেন নজরুলের ‘পিয়া পিয়া পিয়া পাপিয়া পুকুরে’ গানটি দিয়ে। এরপর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘আমি হারাতে জানি খুঁজে পেতে জানি না’, মান্না দের ‘দুঃখ আমাকে দুঃখী করেনি’ ইত্যাদি। অনুষ্ঠানের আরেকটি অভিনবত্ব ছিল, মাত্র একটি হারমোনিয়াম ও একটি কি–বোর্ডের ব্যবহার। অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র নেই, যন্ত্রীও নেই। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা, পরিবেশনা—সব মিলিয়ে হয়েছে অভিনব ও আকর্ষণীয়। শুধু একটি বিষয় কিছুটা বেমানান মনে হয়েছে, তা হলো দুজনের মাঝখানে স্ট্যান্ডে নামকরণটি দাঁড় করিয়ে রাখা। পুরো সেট ও আবহের সঙ্গে এটি যেন ঠিক মানায়নি।

৩ আগস্ট সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে তানিয়া রহমানের উপস্থাপনায় এটিএনে প্রচারিত হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন ডা. সারওয়ার। বিষয় ছিল মস্তিষ্ক। আলোচনায় বিশেষ প্রাধান্য পায় মৃগীরোগ। শৈশব থেকেই কীভাবে এ রোগ চেনা যায়, কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, এ সম্পর্কে পরামর্শ দেন ডা. সারওয়ার।

একই দিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে মনোবিজ্ঞানী জাকিয়া আনামের উপস্থাপনায় বাংলাভিশনে প্রচারিত হয় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘মনোদর্পন’। আলোচক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোবিজ্ঞানী ডা. আহমেদ হেলাল ও মিজান। আলোচনায় প্রাধান্য পায়, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ফলাফল নিয়ে শিশুদের ও অভিভাবকদের মানসিক টানাপোড়েন।

সবশেষে বিবিসি বাংলা আয়োজিত ‘বিবিসি প্রবাহ’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় চ্যানেল আইতে ২ আগস্ট রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আবুল কালাম আজাদের প্রতিবেদনে এবারে উঠে আসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। প্রচারিত হয়, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাৎকার। এরপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন এবং শেষে, রাশিয়ার ক্রীড়া নগরী শচি শহরের সৌন্দর্য নিয়ে মনোমুগ্ধকর প্রতিবেদন। শারমিন রমার গতিময় উপস্থাপনায় মাত্র ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠানটি ছিল দর্শকদের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ও আকর্ষণীয়।