রাজ্জাককে দেখে হাত-পা কাঁপছিল

নায়ক রাজ্জাকের স্মরণসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার
নায়ক রাজ্জাকের স্মরণসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার

‘একদিন আমি ৩৫ মিমি ক্যান নিয়ে ডাবিংয়ে যাচ্ছিলাম। উল্টোদিক থেকে আসছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। আমার হাতে তখন চার-পাঁচটি ক্যান। রাজ্জাক ভাইকে সামনাসামনি দেখে আমার হাত-পা কাঁপছিল। সালাম দিতে গিয়ে হাত থেকে সব ক্যান পড়ে যায়। মাথা নিচু করে তুলছিলাম। একটা সময় দেখলাম, উনিও এসে আমাকে সাহায্য করলেন।’

কথাগুলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের।

বাংলাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রযোজক নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরি হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক আমজাদ হোসেন, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, বদিউল আলম খোকন, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান প্রমুখ। তবে নায়করাজের পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি।

গুলজার বলেন, ‘ছোটবেলায় অনেকবার “অবুঝ মন” ছবিটি দেখেছি। তখন থেকেই ভাবতাম, আমি যদি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারতাম। একসময় আমি চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করি। তার আগে সাংবাদিকতা করতাম। একটা সময় নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে দারুণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি আমাকে খুব আদর করতেন।’

নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসে চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’। এই ‘বেহুলা’ ছবিটি নাকি পরিচালনা করার কথা ছিল প্রখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেনের। আলোচনা সভায় সেই কথাটি মনে করিয়ে দিলেন। আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নায়করাজের প্রথম ছবি “বেহুলা” আমারই পরিচালনা করার কথা ছিল। এই ছবিটি আমার নামে নিবন্ধনও করা হয়েছিল। জহির রায়হান, আমি ও আমাদের সম্পর্কটা ছিল খুব দারুণ। একটা সময় জহির রায়হানকে ছবিটি নির্মাণ করার জন্য আমিই পরামর্শ দিই। কাগজে-কলমে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতাও করিয়ে দিই। সেই থেকে রাজ্জাক ও আমার শুরু। নায়করাজ প্রথম থেকেই আমাকে আপনি করে ডাকতেন, আমিও তাঁকে আপনি বলতাম। শেষ দেখা পর্যন্ত একে অপরকে সম্মান দিয়ে চলার চেষ্টা করেছি।’

নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিটি দেখার পর থেকে নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু গুণী পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর। আর চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। কথায় কথায় তা জানালেন তিনি। ঝন্টু বলেন, ‘চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমরা কাছের মানুষে হয়ে যাই। অনেক সময় অনেক সমস্যায় পড়েছি। তা কাটিয়ে উঠতে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘চলচ্চিত্রের নানা সংকট নিয়ে কথা হলে তিনি সাহস দিতেন। বলতেন, আমি তো এখনো বেঁচে আছি। তোমরা আন্দোলন করো। আমাকে সব সময় সঙ্গে পাবে। যখন প্রয়োজন, তখনই ডাকবে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করো।’

চলতি মাসের ২১ তারিখ ছিল নায়করাজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু দিনটি ঈদের ঠিক আগে হওয়াতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান করতে পারেননি বলে জানান পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহানায়কের জন্য সবাই দোয়া করবেন। দিনটি ঈদের আগে হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আজকের দিন ঠিক করি।’