নানির হাতের সরষে মাছ ভীষণ প্রিয়

অভিষেক বচ্চন
অভিষেক বচ্চন

আবার মূল স্রোতে ফিরলেন অভিষেক বচ্চন। তবে আর ব্রেক নয়, এবার শুধুই কাজের মধ্যে থাকতে চান তিনি। বাস্তবে ভীষণই আবেগপ্রবণ অভিষেক। তাই জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেন নিজের মনের কথা শুনে। অনুরাগ কাশ্যপের ত্রিকোণ প্রেমের ছবি মনমর্জিয়ার নায়ক জুনিয়র বচ্চন। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ১৪ সেপ্টেম্বর। ভারতের মুম্বাইয়ে ইরোজ ইন্টারন্যাশনাল অফিসে বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চনের মুখোমুখি হন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। ২৩ আগস্টের এই আড্ডায় তিনি খুলে দিলেন মনের জানালা।

প্রশ্ন: এত দিনের লম্বা ব্রেকের পর আবার পর্দায় ফিরলেন, কতটা উত্তেজিত?
উত্তর: খুবই উত্তেজিত। পর্দায় আবার নিজেকে দেখে খুবই ভালো লাগছে।

প্রশ্ন: এই দুই বছর নিজেকে কীভাবে ব্যস্ত রেখেছিলেন?
উত্তর: আমার কাবাডি ও ফুটবল টিম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার অন্য ব্যবসা নিয়েও ব্যস্ততা ছিল। তবে আর ব্রেক নয়। এবার শুধু কাজ করে যাব।

প্রশ্ন: আপনার ঠাকুমা (দাদি) পাঞ্জাবি। এই ছবিতে আপনিও এক পাঞ্জাবি চরিত্রে। মাথায় পাগড়ি। কী রকম অভিজ্ঞতা?
উত্তর: আমি এই ছবিতে শান্ত, ধীরস্থির, লাজুক, আত্মকেন্দ্রিক ‘রবি’ নামের এক তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্রটা করতে দারুণ লেগেছে। আর এই ধরনের চরিত্রে সঙ্গে সাধারণত রোজ দেখা হয় না। আর সব থেকে মজা লেগেছে পাগড়ি বাঁধতে। আর হ্যাঁ, আমার দাদি সরদারনি।

প্রশ্ন: ছবির নাম ‘মনমর্জিয়া’। আপনি আপনার নিজের মনের কথা কতটা শুনে চলেন?
উত্তর: আমি নিজের মনের কথা শুনেই চলি। জীবনের সব ক্ষেত্রে আমি মনের কথা শুনে চলি। আপনার মন যদি না চায়, তাহলে সেই কাজ না করা উচিত। আমি খুবই আবেগপ্রবণ। আর আমি জীবনের সব সিদ্ধান্ত আবেগের সঙ্গে নিয়েছি। আমি যেটা করতে চেয়েছি, সেটাই করেছি। আমি সবকিছু হৃদয় থেকেই করি।

প্রশ্ন: এই ছবিতে ভিকি কৌশল এবং তাপসী পান্নুর সঙ্গে কাজ করলেন। কী রকম অভিজ্ঞতা?
উত্তর: এদের সঙ্গে কাজ এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছিল, সেটে নতুন এনার্জি চলে এসেছে। এই ছবিতে আমি প্রথমবার অনেকের সঙ্গে কাজ করলাম। প্রযোজক আনন্দ এল রাই, পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ, সহ–অভিনেতা তাপসী, ভিকি, এমনকি এই ছবির লেখকও আমার কাছে প্রথম। তাই এই সব প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করার মজাই আলাদা।

প্রশ্ন: অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালক ও আনন্দ এল রাই প্রযোজক। এই জুটি সম্পর্কে কিছু বলতে চান?
উত্তর: এই জুটি দেখেই আমি ছবিটা করতে আরও উৎসাহিত হই। একদম অন্য ধারার জুটি। তার ওপর অনুরাগ কাশ্যপের আবার প্রেমের ছবি। ছবির চিত্রনাট্য পড়েই আমার দারুণ লাগে। তারপর আনন্দ জানালেন যে উনি ছবিটা অনুরাগকে দিয়ে পরিচালনা করাবেন। এই কথা শোনার পর ছবিটা করার জন্য আগ্রহ বেড়ে যায়। আমার মতে, অনুরাগ ও আনন্দ একসঙ্গে—এটা একটা অভিনব ব্যাপার। অনুরাগ ভীষণ ইন্টারেস্টিং পরিচালক। তাঁর নাম শুনেই ছবিটা করতে রাজি হয়ে যাই।

প্রশ্ন: অনুরাগ পরিচালিত কোন কোন ছবি দেখেছেন?
উত্তর: অনুরাগ পরিচালিত সব ছবিই আমি দেখেছি। ওর সঙ্গে আমার অনেক পুরোনো সম্পর্ক। আমি আর অনুরাগ যুবা ছবিতে প্রথম একসঙ্গে কাজ করেছি। যুবা তাঁর লেখা।

প্রশ্ন: আপনার মধ্যে কতখানি বাঙালিয়ানা আছে? যেহেতু আপনার মা বাঙালি।
উত্তর: আমার জীবনের ওপর বাংলার প্রভাব অনেকখানি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি খুব একটা ভালো বাংলা বলতে পারি না। তবে বাংলা ভাষাটা একটু–আধটু বুঝতে পারি। আমার নানি খুব কষ্ট পান যে আমি বাংলা বলতে পারি না। বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি জীবনযাত্রা নিয়ে আমার বড় হয়ে ওঠা। বাঙালি খাবার আমার দারুণ লাগে। আমার নানি যা–ই বানাতেন, আমার দুর্দান্ত লাগত। বিশেষ করে মাছ। নানির হাতের সরষে মাছ ভীষণ প্রিয়।

প্রশ্ন: আপনার দাদির সঙ্গে আপনার কেমন সময় কেটেছে?
উত্তর: আমি আমার দাদা–দাদির সঙ্গেই থাকতাম। দাদির সঙ্গে আমার খুব ভালো বন্ডিং ছিল। আমার মনে আছে, ঘুম পাড়ানোর সময় দাদি দারুণ দারুণ গল্প বলতেন। তাঁর মতো এত ভালো গল্প আর কেউ বলতে পারতেন না। মজার ব্যাপার হলো, বই পড়ে নয়, দাদি নিজেই গল্প বানাতেন। দাদির কাছে সব সময় চকলেট লুকানো থাকত। আমি যখন খুব ভালো ছেলে হয়ে থাকতাম, তখন তিনি আমাকে চকলেট দিতেন। আসলে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে দাদা-দাদির সম্পর্ক এ রকমই হয়।

মনমর্জিয়া চলচ্চিত্রের অভিষেক ও তাপসী
মনমর্জিয়া চলচ্চিত্রের অভিষেক ও তাপসী


প্রশ্ন: আরাধ্যা আসার পর আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে?
উত্তর: আমার মনে হয়, সন্তান আসার পর প্রত্যেক মা–বাবার জীবনে কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে। আমার জীবনেও আরাধ্যা আসার পর তা–ই হয়েছে। সন্তান আসার পর ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ জানা যায়। নিজের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া যায়। আরাধ্যা আসার পর জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শিখেছি।

প্রশ্ন: আরাধ্যাকে কি সিনেমার জগৎ থেকে দূরে রাখেন?
উত্তর: আরাধ্যা ওর নিজের জগতে থাকে। ও কার্টুন দেখতে ভালোবাসে। বই পড়ে। খেলতে খুব ভালোবাসে। এখনকার বাচ্চারা খুব স্মার্ট। ওরা কী চায়, সে ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট।

প্রশ্ন: সফলতা ও অসফলতাকে কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমার মনে হয়, সফলতা মানবিক হতে শেখায়, অসফলতা আরও মজবুত করে। আমি সফলতা ও অসফলতাকে এভাবেই দেখি।

প্রশ্ন: ওয়েব সিরিজে কাজ করার ইচ্ছা আছে?
উত্তর: নিশ্চয় আছে। আমার মনে হয়, এখন অভিনেতাদের কাজ করার অনেক প্ল্যাটফর্ম। শুধু সিনেমা এখন মাধ্যম নয়, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ডিজিটাল, ওয়েব সিরিজসহ অনেক মাধ্যম এখন খোলা। সব ক্ষেত্রে এখন দারুণ কাজ হচ্ছে। আমি ওয়েব সিরিজে কাজ করতে খুবই ইচ্ছুক। আমি আগে টেলিভিশনে একটা রিয়েলিটি শো করেছি। সিনেমা তো করছি। সিনেমায় আসার আগে নাটক করেছি। তাই এবার নতুন প্ল্যাটফর্মে পা রাখতে চাই। যদি সুযোগ আসে, আমি ওয়েব সিরিজ প্রযোজনা করতেও চাইব।

প্রশ্ন: আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে জেপি দত্তের ‘পলটন’। জেপি দত্তের ‘রিফিউজি’ ছবি দিয়েই বলিউডে অভিষেক আপনার। আজ ‘রিফিউজি’ মুক্তির ১৮ বছর হয়ে গেল। কী বলতে চান এ প্রসঙ্গে?
উত্তর: (সশব্দে হেসে) একদমই তা–ই। দেখতে দেখতে ১৮ বছর পার হয়ে গেল। সত্যি, সময় কী দ্রুত চলে যায়। আজ জেপি দত্তের জন্যই আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে। আমার সিনেমা ্কুলিং তাঁর কাছেই। আবার তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে। পলটন ছবিতেও কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি।

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: ওহ! সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ঋতু দা জিনিয়াস ছিলেন। তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন। ঋতু দা আমার মায়ের খুবই কাছের ছিলেন। ঐশ্বর্যকে নিয়ে ঋতু দা দুটো বাংলা ছবি করেছেন। একটা চোখের বালি, অন্যটা রেইনকোট। আমি তাঁর সঙ্গে অন্তরমহল ছবিতে কাজ করেছি। পরিচালক হিসেবে ঋতু দা অসাধারণ ছিলেন। আমি তাঁকে খুব মিস করি। ঋতু দাই প্রথম পরিচালক, যিনি আমাদের চারজনের সঙ্গে কাজ করেছেন। এরপর করণ (জোহর) আমাদের চারজনের সঙ্গে কাজ করেছে। ঋতু দা ছিলেন সিনেমাটিক জিনিয়াস।

প্রশ্ন: শুনেছি, ঐশ্বর্য ও আপনি ‘গুলাবজামুন’ ছবিতে একসঙ্গে আসতে চলেছেন
উত্তর: হ্যাঁ, আমার ও ঐশ্বর্যর দুজনেরই গুলাবজামুন-এর চিত্রনাট্য পছন্দ হয়েছে। ছবির চিত্রনাট্য প্রায় তৈরি। এখন দেখা যাক।

প্রশ্ন: ঐশ্বর্যের ‘ফান্নে খান’ মুক্তি পেল। দেখেছেন নিশ্চয়?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। খুবই ভালো লেগেছে। ঐশ্বর্য বেশ ভালো কাজ করেছে।

প্রশ্ন: আপনাদের মধ্যে ছবিসংক্রান্ত আলোচনা হয়?
উত্তর: নিশ্চয় হয়। ঐশ্বর্য আমার স্ত্রী। আমাদের মধ্যে সবধরনের আলোচনা হয়। আমরা আলোচনাই করি মাত্র। কিন্তু একে অপরকে কোনো টিপস দিই না।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংকে (উপহাসের শিকার হওয়া) আপনি কী হিসেবে নেন?
উত্তর: আমি এ সবকিছুকে একদম গুরুত্ব দিই না। জবাব দেওয়ার হয় দিন, না দিতে ইচ্ছা করলে দেবেন না।