'আমার লোভ ছিল, আছে এবং থাকবে'

ফেরদৌস
ফেরদৌস
দুই দশকেরও বেশি চলচ্চিত্রজীবন ফেরদৌসের। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমা দিয়ে আলোচনায় আসা এই নায়ক দীর্ঘ সময় ধরে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এক দশক আগে দেশের সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়ক প্রস্তাব পেয়েছিলেন ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ নিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘোষণা দেয় ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাস অবলম্বনে নতুন চলচ্চিত্র তৈরি হবে। আর এতে ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তার জন্য একটি রিয়্যালিটি শোর আয়োজন করা হচ্ছে। চ্যানেল আই আয়োজিত এই রিয়্যালিটি শো থেকে ‘মাসুদ রানা’কে খুঁজে বের করার অন্যতম দায়িত্বে থাকবেন জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস। পুরো আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি


‘মাসুদ রানা’ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব কে দিয়েছিল? 

বছর দশেক আগে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকে পরিচালক (বিপণন) ইবনে হাসান খান আমাকে মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বড় পরিসরে সিনেমাটি বানানো হবে। বিষয়টা বেশি দূর এগোয়নি। অনুমতি নিয়ে কী যেন একটা জটিলতা ছিল। তবে এটা ঠিক, মাসুদ রানা চরিত্রটি খুবই লোভনীয়। নায়কমাত্রই এমন একটি চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করবে।

মাসুদ রানা চরিত্রের প্রতি লোভ এখন আর নেই?
এই চরিত্রের প্রতি আমার লোভ ছিল, আছে এবং থাকবে। একজন নায়কের এমন চরিত্র থেকে লোভ শিফট হওয়ার কথা না।

কী কারণে মাসুদ রানা সিরিজে অভিনয়ের লোভ তৈরি হয়?
স্কুল ও কলেজে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে ‘মাসুদ রানা’ পড়তাম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে হয়তো মাসুদ রানা পড়েছে। আমরা পড়তে পড়তে নিজেদের একেকজন মাসুদ রানা ভাবতাম। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবনা আরও প্রকট হওয়া শুরু করে। আমাদের সুপার হিরো মাসুদ রানা। অথচ এমন একটি সুপার হিরো সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কাজ হয়নি। মাসুদ রানার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের ‘শুভ্র’ করার ইচ্ছাও ছিল। আমার মনে হয়েছে, এগুলো এমন ভিন্নধর্মী চরিত্র, যা মানুষের অনেক আকাঙ্ক্ষিত। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত মাসুদ রানা খোঁজার অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্ব পেয়ে গেছি।

নিজে থেকে আপনার ভালো লাগার চরিত্রের জন্য কখনো চেষ্টা করেছেন?
আমাদের এখানে আসলে শিল্পীদের ট্রাই করার কোনো সুযোগ নেই। একটা নির্মাণপ্রতিষ্ঠান যদি আমাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করাতে চাইত, তাহলে হয়তো কিছু করা যেত। আমাদের ক্ষেত্রে সব সময়ই পরিচালক-প্রযোজকেরা নামটা ব্যবহার করেছেন। আমার প্রজন্মের অনেকেই যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার একই অবস্থা ছিল। আমাদের প্রজন্মের মধ্যে মৌসুমী, পূর্ণিমা, রিয়াজসহ অনেককে দিয়ে চাইলে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করানো যেত, কিন্তু কোনো পরিচালক-প্রযোজক তা ভাবেননি। আমার ও মৌসুমীর লোকধাঁচের ছবি ‘খায়রুন সুন্দরী’ হিট হওয়ার পর সবাই আমাদের নিয়ে একই ধরনের ছবি বানানো শুরু করল।

আপনারা ছবিগুলোতে কেন চুক্তিবদ্ধ হলেন?
দেখা যেত, দশটা সিনেমার প্রস্তাব এসেছে একই ধাঁচের। তখন একটা-দুটো ছবিতে সাইন করতাম। আমাদের সময় একটা ট্রেন্ড ছিল, একজন নায়ক-নায়িকার হাতে একসঙ্গে আট-দশটা সিনেমা থাকতে হবে। এখন যেমন বছরে একটা কিংবা দুটো সিনেমা করলে হয়, তখন এই স্কুলিং ছিল না।

আপনাদের দিয়ে চরিত্র সৃষ্টি করার কথা কোনো পরিচালক ভাবেননি?
আমরা একদমই এই সুযোগ পাইনি। যে ধারা হিট হতো, পরিচালকেরা সে ধারায় মেতে থাকতেন। নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে কাজ করেননি আমাদের কাউকে দিয়ে।

আচ্ছা ‘মাসুদ রানা’কে খোঁজার সময় কোন ভাবনা কাজ করবে?
একটা সময় যেহেতু আমাকে নিয়ে মাসুদ রানা ভাবা হয়েছে, তার মানে সেই যোগ্যতা আমার ছিল এবং আছে। আমি এমন একজনকে খুঁজে বের করব, যে আমার চেয়েও ভালো। আমাকে যদি মাসুদ রানার রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করাই, তাহলে আমার চেয়েও সুদর্শন, আমার চেয়ে উঁচু লম্বা—সব মিলিয়ে চেষ্টা করব, এ রকম একটা জায়গা থেকে খুঁজে বের করতে। এটা কঠিন ব্যাপার।

খুব কঠিন মনে হচ্ছে?
বেশ দুরূহ কাজ। আশা করব, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মাসুদ রানা নিয়ে আগ্রহী তরুণেরা এই রিয়্যালিটি শোতে নাম লেখাবে। এখন কিন্তু চারপাশে অনেক স্মার্ট তরুণের দেখা পাই। বিশ্বায়নের এই যুগে তারা পাল্লা দিয়ে নিজেদের ডেভেলপ করছে। মাসুদ রানা তৈরির ব্যাপারটি এখন আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ আমরা এখন জেমস বন্ড, মিশন ইম্পসিবলসহ অনেক সুপারহিরো দেখে অভ্যস্ত। এ ক্ষেত্রে নির্মাতাদের অনেক সচেতন হতে হবে। শুধু একজন মাসুদ রানাকে খুঁজে বের করলে মানুষের গ্রহণযোগ্যতার কাছাকাছি যাওয়া যাবে না, মাসুদ রানার উপস্থাপন হচ্ছে বিরাট ব্যাপার। নির্মাণের দিকটি অনেক বেশি সময়োপযোগী হতে হবে। নির্মাণের মাধ্যমেই মাসুদ রানাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তবেই দর্শকের চাওয়ার কাছাকাছি যেতে পারবে।

অনেক দিন প্রেক্ষাগৃহে আপনার নতুন কোনো ছবি নেই?
আগামী মাসে ‘মেঘকন্যা’ ছবিটি মুক্তি পাবে শুনলাম। এই ছবির গল্পটা সুন্দর। গানগুলোও চমৎকার। এই ছবিতে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছে নিঝুম রুবিনা।