অন্য মিমের গল্প

ঘরের দরজা খুলে দিলেন মিমের বাবা। পরিচয় দিতেই নিয়ে গেলেন বসার ঘরে। সাজানো–গোছানো বসার ঘর। এক পাশে রাখা মিমের ছবি। আরেক পাশে পুরো ক্যারিয়ারে পাওয়া পুরস্কারগুলো। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যেমন আছে, তেমনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারও আছে। বসতে বসতে মিম এগিয়ে এলেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর গল্প হলো এই সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে। লিখেছেন হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক
মিম, ছবি: কবির হোসেন
মিম, ছবি: কবির হোসেন

বসার ঘরটা সুন্দর বলতেই মিম বললেন, ‘এখনো সাজানো শেষ হয়নি। বেশ কিছু ফার্নিচার অর্ডার দেওয়া আছে। দু-এক দিনের মধ্যে চলে আসবে।’

ফার্নিচার আসার আগে আগে মিমের জন্য নতুন খবর এসেছে। সাপলুডু নামে নতুন চলচ্চিত্রের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সামনে পূজা। পরিবারের সঙ্গে এই উৎসবটা উদ্‌যাপন করার পরেই শুটিংয়ে নামবেন তিনি। এ ছবির গল্প নয়, আমরা বরং মিমের মুখোমুখি হয়েছি তাঁর গল্প শুনতে। অনেক দিন হলো দাঁড়াচ্ছেন না ক্যামেরার সামনে। মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি ছিল যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সুলতান দ্য সেভিয়ার

জানতে চাই, এখন পর্যন্ত সেরা ছবি কোনটি? মিম গতানুগতিক উত্তরের কাছে আশ্রয় নেন, ‘আমার কাছে সব একই রকম। সব ছবিই সন্তানের মতো।’ হ‌ুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল ছবিটির কথা আলাদা করে মনে আছে। বললেন, ‘ওই সময় তো আমি অভিনয় কী জিনিস জানতাম না। আমাকে হাসতে বললে হাসতাম, খেলতে বললে খেলতাম, কাঁদতে বললে কাঁদতাম। তখন অভিনয় আর বাস্তব জীবন আলাদা মনে হয়নি।’

তবে যে ছবিটা করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, সেটাকে এগিয়ে রাখলেন এ অভিনেত্রী। ছবির নাম জোনাকির আলো। এ ছাড়া পদ্মপাতার জল চলচ্চিত্রের গল্পটাও এগিয়ে রাখলেন মিম। অন্য ছবিগুলো গতানুগতিক।

প্রশ্ন রাখি, ঢাকা ও কলকাতার অনেক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। সেরা কে? কাকে আপনি ১০-এ ১০ দেবেন? মিম এক মুহূর্ত ভাবেন না। অকপটে উত্তর দেন—শাকিব খান!

এবার জানতে চাই, আপনার চোখে সেরা নায়িকা কে? প্রশ্নের শুরুতেই বলে নিই, মিমকে বাদ রেখে বলতে হবে। এবার খানিকটা বিপদে পড়ে যান বোধ হয়। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে মিম বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন আমার জন্য। কারণ, আমরা সমসাময়িক সবাই ভালো করার চেষ্টা করছি। আলাদা করে সেরা বলা যাবে না।’

ফুট নোট হিসেবে জুড়ে দেন, ‘এখনই বোধ হয় আমাদের সময়ের কাউকে সেরা বলার সময় হয়নি।’

মিম সেরা নায়িকা নির্বাচন করতে না পারলেও জানতে চাই সেরা চরিত্র কোনটি? খানিকক্ষণ ভাবেন। না, সেরা চরিত্রে এখনো অভিনয় করা হয়নি মিমের। পছন্দের চরিত্র এখন অধরাই থেকে গেছে। কেমন সেই চরিত্র? বলেন, ‘হতে পারে সেটা দেবদাস-এর পার্বতী। তবে সেটা অবশ্যই সঞ্জয়লীলা বানসালীর মতো নির্মাতার হাতে পড়তে হবে। আবার হতে পারে এমন কোনো চরিত্র, যেটা দেখে সবাই ভাববে এটা তো অন্য মিম। যে চরিত্রে অভিনয় করে জীবন সার্থক হবে।’

পার্বতীকেই কেন বেছেন নেবেন মিম? ছবির দৃশ্যগুলো সম্ভবত ভাবেন। এরপর উত্তর দেন, ‘ওই ছবিতে একটি সেরা দৃশ্য ছিল। শেষ দিকে দেবদাস যখন মারা যায়, তখন দরজা খুলে পার্বতী দৌড়ে আসে। আমি এ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। শুধু এ দৃশ্যের জন্যই অনেকবার দেখেছি ছবিটি।’

ততক্ষণে ট্রেতে করে হালকা খাবার চলে আসে। কয়েক পদের মিষ্টি, সমুচা ও চা। শুধু নাশতা এসেছে এমন নয়, ভেতর থেকে খবর আসে, নতুন ফার্নিচার এসেছে মিমের বাসায়। মিম মাঝপথে বিরতি দেন। বিনয়ের সঙ্গে অল্প কিছু সময় চেয়ে নেন এবার। জায়গামতো ফার্নিচার সাজিয়ে নিয়ে আমাদের দেখাতে নিয়ে যান। ফার্নিচার দেখতে দেখতে আমরা বাইরেও দেখি। ৯ তলার ওপর থেকে ফাঁকা মাঠ দেখা যায়, কাশবন দেখা যায়। মিম দেখতে দেখতে বলেন, ‘জানেন, মন খারাপ হলে আমি বারান্দায় বসি। দূরে তাকাই। মন ভালো হয়ে যায়।’

নায়িকাদেরও মন খারাপ হয় তাহলে! এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না মিম। দূরে তাকিয়ে হেসে ওঠেন।

আমাদের আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বাকি অংশ শুরু করি। জানতে চাই, এই চলচ্চিত্রশিল্পে মিমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে? মিম বলেন, ‘না, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমি নিজেই। প্রতিনিয়ত নিজের ছবি দেখে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। আমার মনে হয়, এর চেয়ে ভালো করার চেষ্টা করতে হবে ভবিষ্যতে।’

এমন কোনো চলচ্চিত্র আছে, যেটাতে অভিনয় করার পর মনে হয়েছে যে এটা না করলেই ভালো হতো? তারকাঁটা চলচ্চিত্রের নাম বলেন মিম। সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই ছবির গল্প শুনেছি একরকম, শুটিং শেষ করে দেখেছি আরেক রকম। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেই ভালো হতো আমার। ছবিটি দেখে মনে হয়েছে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি মারি।’

নানা ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই নায়িকা। তবে নায়িকা নয়, নিজেকে ভাবতে চান একজন অভিনেত্রী। সেটাও খোলাসা করলেন, ‘নায়িকা হওয়ার জন্য যদি গ্ল্যামার জরুরি হয়, সেটা তো আছে আমার। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হয়। সেটা হয়তো সারা জীবনই করব।’

এই চেষ্টার কারণেই নিজেকে অভিনয়ের জন্য ১০-এ ৫ দিলেন মিম। আর গ্ল্যামারে? হেসে ফেললেন। বললেন, ‘আমার নিজেকে নিজের অতটা ভালো লাগেনি। ছোটবেলায় স্কুল-কলেজে সবাই সুন্দর বলত কিন্তু আমি আসলে অত সুন্দর কি না, সেটা আমার নিজেরই প্রশ্ন!’

কারণটা পরিষ্কার করলেন, মিমের কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা হলো, যার ভেতরটা সুন্দর, তিনিই প্রকৃত সুন্দর।

নায়িকাদের হাতে ছবি নেই কারণটা কী? প্রশ্ন শেষ করতে দিলেন না মিম। বললেন, ‘নায়িকাদের হাতে ছবি নেই কথাটা ঠিক নয়, আসলে ছবিই কম হচ্ছে। হাতে গোনা ছবি, এর মধ্যে ভালো খারাপ বা শুধু নায়িকাদের দোষ দিয়ে কী হবে? এর মধ্যেই অনেক ছবির অফার আসছে, কিন্তু সেগুলো মনমতো নয়। না গল্প, না চরিত্র।’

এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের দিকে যাই। শুরুতেই হুঁশিয়ার করে দেন। দেশে এত সংবাদমাধ্যম, আর কীই-বা অজানা থাকে। জানতে চাই প্রেম-বিয়ে প্রসঙ্গে, বলেন, ‘প্রেম করা হচ্ছে না। বলতে গেলে আমার কোনো প্রেমিক নেই। তবে বিয়ে হবে। সেটা যেদিন সৃষ্টিকর্তা চাইবেন, সেদিন। ২০২০ সালেও আসতে পারে শুভক্ষণ!’ কারণ ২০২০ সংখ্যাটি মিমের কাছে দারুণ লাগে। এ বছরই মিমের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রস্তুত থাকতে পারেন।

মিমের যেমন পাত্র পছন্দ

১. ভালো মনের মানুষ হতে হবে।

২. তাঁর কাজকে সম্মান করতে হবে।

৩. মিমের চেয়ে লম্বা হতে হবে। (মিমের উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি।)

৪. দেখতে শুনতে মোটামুটি ভালো হতে হবে।

মিমের চোখে শাকিব খান

১. দীর্ঘ সময় ধরে সেরা অবস্থানে নিজের আসন পাকাপোক্ত

 করে রেখেছেন।

২. তাঁর অভিজ্ঞতা বেশি।

৩. প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙে নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করছেন।

৪. সহশিল্পীর জন্য খুবই আন্তরিক।

৫. সুন্দর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁকে বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালোবাসে।