হুমকি তো নতুন কিছু না: ইলিয়াস কাঞ্চন

ইলিয়াস কাঞ্চন
ইলিয়াস কাঞ্চন

‘এটা হুমকি। এই ধরনের হুমকি তো নতুন কিছু না। ২০১২ সালেও এমন অনেক হুমকি পেয়েছি। সে সময় তো শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকে আমার ছবির মধ্যে জুতার মালা পরানো হয়েছিল। একটা কথা এত দিন বলিনি, কিন্তু এসব ঘটনা দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি—স্কুলের ছোট বাচ্চারা যখন আন্দোলন করছিল, তখন খুলনা ও ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আমার ছবি পোড়ানো হয়েছে।’

কথাগুলো নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের। আজ রোববার রাজধানীর ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে এক সমাবেশ থেকে প‌রিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেশের সব বাস টার্মিনালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। প‌রিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন এ মন্তব্য করেন।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের এমন কথায় মোটেও বিচলিত নন ইলিয়াস কাঞ্চন। তাঁর ধারণা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের এমন হুমকিতে বাস টার্মিনালে চালক ও সহযোগীদের জন্য যে সচেতনতার কাজ করতেন, সেটা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা তো চালক ও সহযোগীদের প্রশিক্ষণ দিই। আইনকানুন সম্পর্কে সচেতন করি। যাঁরা গাড়ি চালাতে জানেন, কিন্তু নিয়ম মানতে চান না, আবার কেউবা সড়কের সংকেতগুলো সেভাবে জানেন না, গতি সম্পর্কেও অবহিত করা—এমন কথার কারণে এই কর্মসূচি পালনে বাধা আসতে পারে।’

তাহলে কি আপনার এসব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে? এমন প্রশ্নে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চালকদের যেভাবে বলা দরকার, পথচারী ও সাধারণ যাত্রীদের যেভাবে সচেতন করার দরকার, সেই কাজ আমরা চালিয়ে যাবই। আমি মনে করি, তাঁরা যে ভুল বুঝেছেন, সেখান থেকে একদিন অবশ্যই বেরিয়ে আসবেন। আরেকটা বিষয়, আমাদের দেশে কিন্তু অদক্ষ চালকদের মধ্যে শুধু বাস আর ট্রাকের না, অযান্ত্রিক যানবাহন, ব্যাটারি–সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের চালকদের অনেকেই কিন্তু আইন মানেন না। এমনকি কেউ তো শেখেও না। আমি কর্মসূচি অবশ্যই চালিয়ে যাব। এমন হুমকিতে তো বন্ধ করে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে সচেতন করার এই কাজ আমি করছি ২৫ বছর ধরে। এই কাজে আমার অর্থ, জ্ঞান, সময় ও পরিশ্রম—সবকিছুই দিয়েছি, চেয়েছি শুধু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন করতে এবং সবাইকে সড়কের আইন মানায় শ্রদ্ধাশীল হতে। কয়েকজন মানুষও যদি না শুনতে চায়, আমি কী করব। বিশ্বাস করি, একসময় সবার ভুল ভাঙবেই। তখন হয়তো শুনবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় পর অভিনয় থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের ব্যানারে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে সারা দেশের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে তাদের পাশে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা সম্প্রতি পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনটি সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। পাশাপাশি ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেশের সব বাস টার্মিনালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তাঁরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি সাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে সমাবেশে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যথায় ১৩ অক্টোবর থেকে সারা দেশে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।