নাটকে গল্পের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী চিত্রনাট্য

হৃদয় ঘটিত নাটকে জাকিয়া বারী মম ও সজল
হৃদয় ঘটিত নাটকে জাকিয়া বারী মম ও সজল

গানের অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করব আমাদের আলোচনা। ৭ অক্টোবর রাত ১০টায় সংগীতশিল্পী পুতুলের উপস্থাপনায় ইটিভিতে প্রচারিত হলো দ্বৈত সংগীতের অনুষ্ঠান ‘সেদিন দুজনে’। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দুজন নবীন সংগীতশিল্পী ঐশী ও প্রতীক হাসান। অনুষ্ঠানের সব পরিবেশনাই ছিল দ্বৈত কণ্ঠে। কাজেই পরিকল্পনার দিক থেকে বলা যায় অনুষ্ঠানটি বেশ অভিনব ও আকর্ষণীয়ই ছিল। তাঁদের পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘বাবা রে বাবা কই দিলা বিয়া, বাবা রে বাবা কারে করলাম বিয়া’, ‘পিরিতি পিরিতি পিরিতি পিরিতি’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়াছে’ ইত্যাদি।

অনুষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এক কথায় বলা যায়, পরিকল্পনা যতটা ভালো মনে হয়েছে, সামগ্রিক উপস্থাপনা ততটা ভালো লাগেনি। উপস্থাপকের কথায় ছিল আন্তরিকতার অভাব ও অতিকথনদুষ্ট। আর শিল্পীদ্বয়ের কণ্ঠে ছিল সমন্বয়ের অভাব। বিশেষ করে প্রতীক হাসানের কণ্ঠ লুইপার কণ্ঠের সঙ্গে যেন ঠিক খাপ খায়নি। আর সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে অধিকাংশ গানের নির্বাচন। এত চটুল গান গ্রামগঞ্জের যাত্রাপালা দর্শকদের জন্যই কিছুটা মানানসই হতে পারে, গণমাধ্যমের এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য নয়। তারচেয়ে বরং হারানো দিনের অনেক সুন্দর ও সুরেলা গান আছে সেগুলো নির্বাচন করলেও হয়তো ভালো লাগত। কর্তৃপক্ষ আশা করি ভেবে দেখবে।

৬ অক্টোবর রাত ১১টায় লাবণ্যের উপস্থাপনায় এসএ টিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘গহীনের গান’। এদিন শিল্পী ছিলেন ডলি সায়ন্তনী ও জাহাঙ্গীর হোসেন। দুজন পালাক্রমে কখনো দ্বৈত, কখনো বা একক গান করেছেন প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী। ডলি সায়ন্তনী দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সংগীতাঙ্গনের একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম। তাঁর কণ্ঠে একটা মাদকতা আছে, যা দর্শকশ্রোতাদের বিশেষ পছন্দের। তাঁর পরিবেশিত অধিকাংশ গানেই ছিল আধুনিকের সঙ্গে লোকসুরের সমন্বয়। এদিন তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো’, ‘তার শ্যামলা শ্যামলা মুখ আমার ভালো লাগে’, ‘ভিষম পিরিতি সই’ ইত্যাদি। তাঁর শেষ দিকের পরিবেশনা একটু এলোমেলো ও অস্থির মনে হয়েছে। বিশেষ করে দ্রুতলয়ের গানগুলোতে বাণী ছিল অস্পষ্ট, যা মোটেই কাম্য নয়। আর তাঁর কথা বলা ও উপস্থাপনার মধ্যে একটা বিষণ্ণতার ছাপ লক্ষ্যণীয়, যে কারণে তাঁর কথাগুলো কিছুটা আন্তরিকতাশূন্য ও এলোমেলো মনে হয়েছে। পাশাপাশা শিল্পী জাহাঙ্গীর হোসেন কিছুটা সপ্রতিভ ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘ও জুতার কারিগর’,‘আমার বন্ধুর মায়া নাই মায়া নাই রে’ ইত্যাদি। তাঁর উপস্থাপনা আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল, তবে কোনো কোনো গানের দু–একটি জায়গায় মনে হয়েছে যেন কণ্ঠ ঠিক সুরের পর্দায় লাগছে না। সব মিলিয়ে তাঁর চর্চায় কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

এবারে নাটক। ৫ অক্টোবর রাত ৮টা ১০ মিনিটে আরটিভিতে প্রচারিত হলো নাটক হৃদয় ঘটিত। রচনা মাহমুদ দিদার, পরিচালনা লিপি আইচ এবং অভিনয়ে জাকিয়া বারী মম, সজল, প্রিয়ংকা জামান, রাশেদ মামুন প্রমুখ। সংক্ষেপে নাটকের গল্পটি হলো, ম্যাজিশিয়ান সজল তার ম্যাজিক চর্চার জন্য একজন ভালো মডেলের সন্ধান করে খুঁজে পায় শার্লিকে। অথচ পাশেই তার বিল্ডিংয়ে সুপরিচিত ও অনুগত মম আগ্রহ প্রকাশ করলেও সে তাকে অবজ্ঞা করে। শেষে একটি বিশেষ শো–তে অগ্রিম টাকা না পেয়ে শেষ মুহূর্তে শার্লি প্রত্যাখ্যান করলে মমই মডেল হয়ে তার সম্মান ও সুনাম রক্ষা করে। এরপর সজল মমকে আংটি পরিয়ে তার জীবনেই বরণ করে নেয়।

প্রথমেই বলব গল্পে কিছুটা অভিনবত্ব ও আবেদন ছিল, কিন্তু সে অনুযায়ী চিত্রনাট্য ও সংলাপ সবল হয়ে ওঠেনি। ফলে একটা সম্ভাবনাময় গল্পের অপমৃত্যুই হয়েছে বলা যায়। একটি নাটকের সফলতার নেপথ্যে শক্তিশালী চিত্রনাট্য ও সংলাপের ভূমিকা অপরিহার্য। আর অভিনয়ের কথা বললে, মমর অভিনয় স্বাভাবিক ছিল। কেন্দ্রীয় চরিত্র সজলের অভিনয় ও শরীরী ভাষা ছিল রোবোটিক। এ ছাড়া অন্যরা ছিল স্বাভাবিক।

৫ অক্টোবর রাত ১০টায় মোস্তফা মননের পরিচালনায় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হলো নাটক মাহতাব সাহেবের সংসার। অভিনয়ে রোজী সিদ্দিকী, লুৎফর রহমান জর্জ প্রমুখ। নাটকের গল্প একই বিল্ডিংয়ে মাহতাব সাহেবরা দুই পরিবার খুবই ঘনিষ্ঠ। কিন্তু দুই পরিবারের দুই ছেলেমেয়ের মাঝে বিরোধ সম্পর্ক। এর মাঝে মেয়েটি জানিয়ে দেয় সে নিজেই নিজের বর পছন্দ করেছে। আর সে বর হলো বৃদ্ধ মাহতাব সাহেব। মাহতাব সাহেব মেয়েটিকে নিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের বাজার করেন। এদিকে দুই পরিবারের মাঝে চলে নানা নাটকীয়তা। বাজারঘাট শেষে মাহতাব সাহেব মেয়েটিকে নিয়ে ফিরে জানান তিনি মেয়েটিকে পছন্দ করেছে তার ছেলের জন্য। নির্মাতা হাসির নাটক বানাতে গিয়ে সংলাপের পর সংলাপ দিয়ে দর্শকের কান ঝালাপালা করে দিয়েছেন। পাশাপাশি উদ্ভট নাটকীয়তা দিয়ে সাজিয়েছেন দৃশ্যের পর দৃশ্য। কারণ, দর্শকের খুব একটা হাসি পেয়েছে বলে মনে হয় না। পরিণত মানুষকে কাতুকুতু দিয়ে হাসানো যায় না। আসলে মানুষ হাসানোর শিল্প বড়ই কঠিন। তবে নাটকটি দেখে যে মানুষ মজা পেয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।

শেষে, গৃহসজ্জা নিয়ে এটিএনের একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ‘চার দেয়ালের কাব্য’। শ্রাবণ্য তৌহিদার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলো ২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে। প্রযোজনা সেলিম দৌলা খান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিল্পপতি ফাহমিদা আফরোজের বাসার ডিজাইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশিষ্ট ডিজাইনার নাজনীন হক মিমি। তিনি আলো, রং, বায়ু, প্রকৃতি ইত্যাদি বিবেচনা করে কীভাবে নকশা করেছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন, একে একে সব বর্ণনা করেছেন দর্শকদের সামনে। বাড়ির করিডর থেকে শুরু করে ড্রইংরুম, শোবার ঘর, গোসলখানা, রান্নাঘর—সবই ফুটে উঠেছে তাঁর বর্ণনায় এবং সেই সঙ্গে আসবাবও। এরপর নকশাবিদ উত্তম কুমার রায় দর্শকের উদ্দেশে ছোট ছোট টিপস দিয়েছেন ‘একটুকু কথা শুনি’ পর্বে। শেষে চারুবাক্য পর্বে কীভাবে একটি বাসায় রঙের ব্যবহার করা যায়, গাছ, লতাপাতার অনুষঙ্গ আনা যায়, এসব তুলে ধরা হয়েছে।

এক কথায় বলব অনুষ্ঠানটি সমসাময়িক, তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যতিক্রম। তারপরেও অনুষ্ঠানটিতে যে অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে তা হলো, নিম্নবিত্ত ও স্বল্পবিত্তের মানুষদের গৃহসজ্জার প্রামাণ্য উপস্থাপনা। প্রতিটি পর্বে বিত্তশালীদের গৃহসজ্জার পাশাপাশি স্বল্পবিত্তের মানুষের নান্দনিক গৃহসজ্জার প্রামাণ্য উপস্থাপনা দেখানো হলে অনুষ্ঠানটি হবে আরও তাৎপর্যময়। কারণ, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী তো এঁরাই।