'দ্য অ্যাংরি বার্ডস টু' ছবিতে বাংলাদেশের রেজা

ওয়াহিদ ইবনে রেজা
ওয়াহিদ ইবনে রেজা

বাংলাদেশের ছেলে ওয়াহিদ ইবনে রেজা আগেও হলিউডের কিছু আলোচিত ছবির ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের দলের সঙ্গে কাজ করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এবার তাঁর নতুন খবর, ‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস টু’ ছবিতে তিনি কাজ করছেন। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় হলিউডের ব্লকবাস্টার অ্যানিমেটেড ছবি ‘দ্য অ্যাংরি ‌বার্ডস’। আগামী বছর আসছে এই সিরিজের নতুন ছবি। আর তাতে কাজ করছেন বাংলাদেশের ওয়াহিদ ইবনে রেজা। শিশুতোষ এ ছবির মডেলিং ও ম্যাটপেইন্টিং বিভাগের দায়িত্বে আছেন তিনি।

‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস টু’ ছবিতে কাজ করা প্রসঙ্গে ওয়াহিদ ইবনে রেজা বললেন, ‌‘নতুন ছবিতে আমি দেখাশোনা করছি মডেলিং ও ম্যাটপেইন্টিং বিভাগ। সরাসরি কনসেপ্ট ড্রয়িং থেকে নানা রকম চরিত্র, প্রপস, এনভায়রনমেন্টের মডেল বানানো দেখছি আর দেখছি আকাশ আঁকা। কাজটা করতে বেশ ভালো লাগছে।’

ওয়াহিদ ইবনে রেজা জানান, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস টু’ ছবিটি মুক্তি পাবে।

ওয়াহিদ ইবনে রেজা
ওয়াহিদ ইবনে রেজা

অ্যানিমেশন ফিল্মে ম্যাটপেইন্টিং কাজটা বেশ মজার বলে মনে করেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা। তিনি বলেন, ‘সাধারণত পূর্ণিমা, সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়, বিশাল পাহাড় বা অসীম আকাশে চমৎকার সব দৃশ্য আঁকা হয় ম্যাটপেইন্টিংয়ে। এই বিভাগে কাজ করার সুবাদে আমি প্রথম কাজ করি কোনো সিনেমার প্রথম ও শেষ দৃশ্যে। ১২ জন আর্টিস্ট (শিল্পী) এবং ১ জন সুপারভাইজারকে নিয়ে গড়া এই দল কাজ করে চলচ্চিত্রের প্রায় ৫৬ ভাগে! যেখানেই দেখবেন আকাশ, সেখানেই জানবেন ম্যাটপেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট কাজ করেছে। ম্যাটপেইন্টিং বিভাগের পাশাপাশি কাজ শুরু করি লাইটিং ডিপার্টমেন্টের একাংশের সঙ্গে। ১৮ জন আর্টিস্ট, ১ জন সুপারভাইজারসহ এই টিম কাজ করে প্রায় ২০০ শটের ওপর, মূল সিনেমার যা প্রায় ১৬ ভাগ। এ রকম ৫টি লাইটিং টিম মিলে শেষ হয় পুরো সিনেমার কাজ। অ্যানিমেশনে লাইটিং টিম ভিএফএক্সের (ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস) তুলনায় একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। অ্যানিমেশনে লাইটারকে নিজেই কম্পোজিটিং করতে হয়। ভিএফএক্সে সাধারণত যা করে আলাদা একটি বিভাগ।’

ওয়াহিদ ইবনে রেজাকে হলিউডের সুপার হিরোদের পেছনের কারিগর (ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট) বলা হয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশের বাইরে নিজেকে উজ্জ্বলভাবে মেলে ধরেছেন। তিনি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডের বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্স ইমেজওয়ার্কসের অ্যাসোসিয়েট প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে। ওয়াহিদ ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’ ছবির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ ও ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ ছবির ভিজ্যুয়াল টিমেও কাজ করেছেন। এইচবিও চ্যানেলের সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’, হলিউডের ‘ফিউরিয়াস সেভেন’, ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’ ও ‘নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম: সিক্রেট অব দ্য টম্ব’ ছবির ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস টিমেও ছিলেন তিনি।

‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য অ্যাংরি বার্ডস’ ছবির দৃশ্য

ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে ওয়াহিদের কাজ করা মুভি ‘ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ’ ছবি ২০১৭ সালে অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিল।

২০০৬ সালে বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করেন ওয়াহিদ। তারপর যোগ দেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। নয়টা-পাঁচটার চাকরি ভালো না লাগায় ছেড়ে দেন। ২০১০ সালে কানাডায় পড়তে যান ওয়াহিদ। ফিল্ম প্রোডাকশন বিষয়ে পড়ার জন্য ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়। এই ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টার্নশিপের জন্য যান মার্কিন প্রতিষ্ঠান এনবিসি ইউনিভার্সেলে। সেখানে তাঁর প্রথম কাজ ছিল টেলিভিশন ধারাবাহিক স্যুটস ও ডিফায়েন্সে। সেখানে টিভি শো করার দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এরপর ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্ট হিসেবে নির্মাণ করেন একটা শর্ট ফিল্ম। ‘হোয়াট আই অ্যাম ডুয়িং হেয়ার’ নামের ওই শর্ট ফিল্মের জন্য ‘পারসিসটেন্স অব ভিশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ ওয়াহিদের হাতে উঠেছিল বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড।