আইয়ুব বাচ্চুর সেরা দশ গান

>আইয়ুব বাচ্চুর সেরা ১০ গান বেছে নেওয়া কি আদৌ সম্ভব? তিনি সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যার প্রায় সবগুলো গান জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দু ছুঁয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকটি গান বাদ দিয়ে প্রায় সব গান নজর কেড়েছিল সংগীতপ্রেমীদের। কিংবদন্তি এই শিল্পীর সেরা ২০, এমনকি সেরা ৩০ গানের তালিকা করলেও কেউ বলবেন, আহা, ওই গানটাই তো বাদ গেল!

তবু প্রথম আলো তাঁকে স্মরণ করে এখানে ১০টি গান লিরিকসহ প্রকাশ করল। সঙ্গে থাকল গানগুলো শোনার লিংক। সাম্প্রতিক গানগুলোর বদলে এখানে বেছে নেওয়া হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার সময়কালের গানগুলো; যা বাংলা ব্যান্ডসংগীতকেও পৌঁছে দিয়েছিল অন্য মাত্রায়। এর মধ্যে ১০ নম্বর গানটি বেছে নেওয়া হয়েছে শুধু সময় বিবেচনায়। যে গানে তিনি অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন সেই শাশ্বত সত্যের কথা, সবাইকে একা করে চলে যাব অন্ধ ঘরে...

 ১. চলো বদলে যাই

সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে
সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি
কীভাবে এত বদলে গেছি এই আমি
ও বুকের সব কষ্ট দুহাতে সরিয়ে
চলো বদলে যাই

তুমি কেন বোঝো না তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিয়ো আমায়

কত রাত আমি কেঁদেছি
বুকের গভীরে কষ্ট নিয়ে
শূন্যতায় ডুবে গেছি আমি
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও

তুমি কেন বোঝো না
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিয়ো আমায়

যতবার ভেবেছি ভুলে যাব
তারও বেশি মনে পড়ে যায়
ফেলে আসে সেই সব দিনগুলো
ভুলে যেতে আমি পারি না

তুমি কেন বোঝো না তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিয়ো আমায়।

দুই. এই রুপালি গিটার

এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহু দূরে
সেদিন চোখের অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে।

মনে রেখো তুমি
কত রাত কত দিন
শুনিয়েছি গান আমি, ক্লান্তিবিহীন
অধরে তোমার ফোটাতে হাসি
চলে গেছি শুধু
সুর থেকে কত সুরে।

এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহু দূরে
সেদিন চোখের অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে।

শুধু ভেবো তুমি
অপরাধ ছিল কার
কাটিয়েছি রাত তবু, নিদ্রাবিহীন
বেদনা আমার হয়েছে সাথি
চলে গেছি আমি
কোনো স্মৃতি পুরে।


এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহু দূরে
সেদিন অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে।

তিন. ফেরারি মন

ফেরারি এই মনটা আমার
মানে না কোনো বাধা
তোমাকে পাবারই আশায়
ফিরে আসে বারেবার

কখনো ভাবিনি আমি
ব্যথা দিয়ে তুমি চলে যাবে
কী জানি কী ভুল ছিল আমার
আমাকে কেন গেলে কাঁদিয়ে
তাই আমি ফিরে আসি বারেবার

ফেরারি এই মনটা আমার
মানে না কোনো বাধা
তোমাকে পাবারই আশায়
ফিরে আসে বারেবার।

যে পথে হারিয়েছি তোমায়
সেই পথে খুঁজে আমি যাব
অভিমান করে থেকো না
অপবাদ দিয়ে যেয়ো না
তাই আমি ফিরে আসি বারেবার

ফেরারি এই মনটা আমার
মানে না কোনো বাধা
তোমাকে পাবারই আশায়
ফিরে আসে বারেবার।

চার. হাসতে দেখো

হাসতে দেখো গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো
দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা
বোঝে না কেউ তো চিনল না

বোঝে না আমার কী ব্যথা
চেনার মতো কেউ চিনল না
এই আমাকে
আমার সুরের বুকে কান্না লুকিয়ে থাকে
আমার চোখের কোণে নোনা ছবি আঁকে
আমার গল্প শুনে হয় আলোকিত উৎসব
গল্প শেষে আমি আঁধারের মতো নীরব

নিজেকে ঢেলে আমি কত সুখ দিলাম
আমার গানে আঁকা নির্ঘুম অনেক প্রহর
আমায় ছেড়ে জোনাকি চেনে নীরব শহর
ডাকার কথা যাদের ডাকেনি কেউ কাছে
নিঃসঙ্গ এই আমি পুড়েছি মোমের আঁচে
আমার মাঝে আমি-ই যেন শুধু লুকাই

বোঝে না কেউ তো চিনল না
বোঝে না আমার কী ব্যথা
চেনার মতো কেউ চিনল না
এই আমাকে।

পাঁচ. বাংলাদেশ

তুমি প্রিয় কবিতার ছোট্ট উপমা, তুমি ছন্দের অন্ত্যমিল
তুমি বর্ষার প্রথম বৃষ্টি, তুমি পদ্ম ফোটা ঝিল
তুমি প্রিয়তমার স্নিগ্ধ হাতে বন্ধনের রাখী
তুমি কষ্টের, নিভৃত কান্নায়, ভরা যন্ত্রণার সবই
তুমি শীর্ষ অনুভূতির পরে শূন্যতার বোধ,
তুমি আলতো স্পর্শে প্রিয়ার চাহনি, গুমরে থাকা ক্রোধ।

তুমি ভোর রাত্রির প্রার্থনা, তুমি চেনা নদীর ঢেউ
তুমি সুখের সেই দিনগুলি শেষে হারিয়ে যাওয়া কেউ
তুমি ভ্রান্তি নয় বাস্তবতার শূন্য ভাতের থালা
তুমি লোভ-ঘৃণার ব্যাকরণে বিবেকের বন্ধ তালা
তুমি সংঘাত আর প্রতিঘাতে অস্থির রাজপথ
তুমি আজ ও আগামীর মাঝে বেদনার নীল ক্ষত।

তুমি চাওয়া না পাওয়ার ফাঁকে অসম সমীকরণ
তুমি অবুঝ রাগী প্রজন্মের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।
তুমি তারুণ্যের চোখের কোণে বিষণ্নতার বাস
তুমি বুড়ো খোকাদের ইচ্ছেমতো ভুলের ইতিহাস।
তুমি উদ্ধত মিছিলের স্রোতে গর্বিত মুখ
তুমি ভুল নায়কের হাতছানিতে মায়ের শূন্য বুক।

তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু তোমার মাঝেই শেষ
ভালো লাগার ভালোবাসার তুমি আমার বাংলাদেশ
আমার বাংলাদেশ।


ছয়. এখন অনেক রাত

এখন অনেক রাত
খোলা আকাশের নিচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আমায় ডেকেছে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে
দরজার ওপাশে

এখন অনেক রাত
খোলা আকাশের নিচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আমায় ডেকেছে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে
দরজার ওপাশে

আবেগী এমন রাতে
ভুল করে এই পথে
এসে যদি ফিরে যাও
আমায় না পেয়ে
তাই আমি বসে আছি
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে
দরজার ওপাশে

চলে যাওয়া সে পথে
ঝিরিঝিরি বাতাসে
আমার এই মন কাঁদে
তোমায় না পেয়ে
তাই আমি বসে আছি
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে
দরজার ওপাশে

এখন অনেক রাত
খোলা আকাশের নিচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আমায় ডেকেছে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে
দরজার ওপাশে

সাত. কষ্ট পেতে ভালোবাসি

কোনো সুখের ছোঁয়া পেতে নয়
নয় কোনো নতুন জীবনের খোঁজে
তোমার চোখে তাকিয়ে থাকা
আলোকিত হাসি নয়
আশা নয় না বলা ভাষা নয়
আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি
তাই তোমার কাছে ছুটে আসি

বুকের এক পাশে রেখেছি
জলহীন মরুভূমি
ইচ্ছে হলে যখন-তখন
অশ্রুফোঁটা দাও তুমি
তুমি চাইলে আমি দেব
অথই সাগর পাড়ি

আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি তাই তোমার কাছে ছুটে আসি
যখন আমার কষ্টগুলো
প্রজাপতির মতো ওড়ে
বিষাদের সব কটা ফুল

চুপচাপ ঝরে পড়ে
আমার আকাশজুড়ে
মেঘে ভরে গেছে ভুলে
আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি তাই তোমার কাছে ছুটে আসি

আট. আসলে কেউ সুখী নয়

সুখেরই পৃথিবী
সুখেরই অভিনয়
যত আড়ালে রাখো
আসলে কেউ সুখী নয়
নিজ ভুবনে চিরদুঃখী
আসলে কেউ সুখী নয়

তোমার দরজার ওপাশে একজন
ভাবছ সে সুখী মিথ্যে আয়োজন
নিজ ভুবনে চিরদুঃখী
আসলে কেউ সুখী নয়

সুখেরই পৃথিবী সুখেরই অভিনয়
যত আড়ালে রাখো আসলে কেউ সুখী নয়
আশা দুরাশায় দুলছে কেন মন
সুখের চাদরে জড়ানো প্রিয়জন
নিজ ভুবনে চিরদুঃখী
আসলে কেউ সুখী নয়

সুখেরই পৃথিবী
সুখেরই অভিনয়
যত আড়ালে রাখো
আসলে কেউ সুখী নয়

নিজ ভুবনে চির দুঃখী
আসলে কেউ সুখী নয়
সুখেরই পৃথিবী...

নয়. একদিন ঘুম ভাঙা শহরে

একদিন ঘুম ভাঙা শহরে
মায়াবী সন্ধ্যায়
চাঁদ জাগা এক রাতে
একটি কিশোর ছেলে
একাকী স্বপ্ন দেখে
হাসি আর গানে
সুখের ছবি আঁকে
আহা কী যে সুখ।

স্বপ্নরা হারিয়ে যায়
সময়ের সাগরে
ব্যথার আবিরে
কবিতা আঁধারে হারায়
ভাবনার ফুল
ঝরে ঝরে যায় আহা
জীবনেরও গান
হয় না সুরে গাওয়া

ছবি সব বিমূর্ত হয়
যায় না বোঝা যায় না
আশার ঝরনা
পায় না সুখের ঠিকানা
হতাশা শুধু
সাথি হয়ে যায় আহা
সে কিশোর এবার
জীবন ছেড়ে পালায়।

দশ. উড়াল দেব আকাশে

অভিলাষী আমি অভিমানী তুমি
হাজারো স্বপ্ন নিয়ে সবকিছু ভুলে গিয়ে
পৃথিবীতে বসে আছি সংসার সাজিয়ে
জানে অন্তর্যামী কে বা আগে পরে
সবাইকে একা করে চলে যাব অন্ধ ঘরে
এই শহর গাড়ি বাড়ি কিছুই যাবে না

আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে
এই বুকে যন্ত্রণা বেশি সইতে পারি না
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে

অহংকারী মানুষ উড়ায় রঙিন ফানুস
টাকা ছাড়া তার দৃষ্টিতে নেই কিছু আর পৃথিবীতে
জায়গা জমি কিনতে শুধু থাকে সে বেহুঁশ
জমিদার বেটা জানে সব বেটা তারে মানে
পৃথিবীটা তার দখলে সবকিছু তার বগলে
এক নিশ্বাসের বিশ্বাস নাই জমিদার কি জানে

আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে
এই বুকে যন্ত্রণা বেশি সইতে পারি না
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে

যখন যাবে চলে কাকে যাবে বলে
কেউ যাবে না সঙ্গী হয়ে
পার পাবে না পালিয়ে গিয়ে
সবকিছু শুধু ঘটে যাবে চোখের পলকে
হেরে যাব আমি হেরে যাবে তুমি
তাই বলি কেউ না জেনে
ব্যথা দিয়ো না কারও মনে
কারও মনে দুঃখ দিয়ে সুখ তো পাবে না

আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে
এই বুকে যন্ত্রণা বেশি সইতে পারি না
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে।।