যা ইচ্ছে তাইয়ের নাচ!

>সমসাময়িক নাচের দুনিয়াটা বদলে গেছে। সেখানে চলছে এক খেলা ভাঙার খেলা। সম্প্রতি জার্মানি ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতার ভাগ দিলেন তাহনুন আহমেদী। সমসাময়িক নাচ নিয়ে একটি কর্মশালায় যোগ দিয়ে ফিরেছেন তিনি।
নৃত্যশিল্পী তাহনুন আহমেদী
নৃত্যশিল্পী তাহনুন আহমেদী

নৃত্যশাস্ত্রের কঠিন ভুবনের বাইরে একটা সরল, যা ইচ্ছে তাইয়ের ভুবন রচনা করেছেন আধুনিক নৃত্যশিল্পীরা। একে তাঁরা বলছেন সমসাময়িক নৃত্য। এই শিল্পীরা নাচের ব্যাকরণ জেনে-বুঝে সেই জ্ঞানকে খানখান করে ভেঙে ফেলছেন। তারপর নতুন একটি কাজ নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন মানুষের সামনে। যেমন ঢাকার তাহনুন আহমেদী একটা আইডিয়া বের করলেন। সবাই সনাতন পুরাণের কাহিনি নিয়ে নাচ করেন। তিনি করেছেন মুসলমানদের জানা সবচেয়ে পরিচিত বিষয় ‘আজান’ নিয়ে। কাজটি কেমন ছিল? কেনই–বা করলেন?

২০১৬ সালে তরুণ সমসাময়িক নৃত্যশিল্পীদের জন্য ‘ইয়াং কোরিওগ্রাফারস প্ল্যাটফর্ম’ নামের একটি ক্ষেত্র তৈরি করে ঢাকার জার্মান সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র গ্যেটে ইনস্টিটিউট। প্রতিবছর একজন করে তরুণকে তারা পাঠাবে জার্মানিতে। পৃথিবীর নামকরা কোরিওগ্রাফারদের সঙ্গে থেকে, দেখে, তিনি শিখে আসবেন—সমসাময়িক নৃত্যে নতুন কী এবং কীভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সেই কর্মশালায় যোগ দিতে জার্মানি গিয়েছিলেন তাহনুন আহমেদী। ১১টি দেশের ১১ জন শিল্পী সেখানে যোগ দেন ব্রেমেন ড্যান্স থিয়েটারের সঙ্গে। তাঁদের তত্ত্বাবধানে থাকা পর্তুগালের খ্যাতিমান কোরিওগ্রাফার হেল্ডার সায়েব্রা তাঁদের শেখান চিন্তাকে নৃত্যে রূপান্তরের কৌশল।

ইউরোপ ও আমেরিকার সমসাময়িক নৃত্যশিল্পীরা যা ভাবছেন, সেটা তাঁরা খুব সহজে মঞ্চে উপস্থাপন করতে পারেন। বাংলাদেশের শিল্পীরা এখনো নৈপুণ্যের সেই স্তরে পৌঁছাতে পারেননি। তাহনুন মনে করেন, বাংলাদেশের শিল্পীরা কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবী। ফলে যথাযথ সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ পেলে তাঁরাও নতুন কিছু দিতে পারবেন। আজান নিয়ে তিনি যেটা করতে চাইছেন, সেখানে থাকবে আরবি ভাষায় আবৃত্তি, মুসলমানদের ইতিহাস, জীবনযাপন ও জীবনযাপনের প্রতিবন্ধকতাগুলো। ছোট ছোট বার্তা দেওয়া হবে সেই উপস্থাপনায়। মোটকথা দর্শককে একটা গল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলা ও তাঁদের কিছু ভাবনার খোরাক দেওয়া হবে।

শাস্ত্রীয় নৃত্যে হাজার বছর আগের সব কাহিনি দেখানো হয়। সমসাময়িক নৃত্যে দেখানো হয় এখনকার জীবনবাস্তবতা থেকে নেওয়া ঘটনা। শরীরকে যেভাবে খুশি ব্যবহার করার স্বাধীনতা থাকে সেখানে। ভরতনাট্যম, কত্থক বা মণিপুরি যেকোনো ঘরানা থেকে চলন ধার করা চলে। পোশাকের ক্ষেত্রটাও থাকে স্বাধীন। নড়াচড়ার সুবিধার্থে যেকোনো পোশাক পরা চলে, ভারী কস্টিউম এখানে মূল্যহীন।

আসছে নভেম্বর মাসে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হবে তরুণ কোরিওগ্রাফারদের নৃত্যের প্রদর্শনী। ১৫ জন সমসাময়িক নৃত্যের তরুণ শিল্পী দেখাবেন নিজেদের কাজ। তাহনুন আহমেদী দেখাবেন ‘রাশ’। ঢাকা শহরের মানুষের জীবনযাপনের নানা অন্তরায় গল্প হিসেবে উঠে আসবে তাঁর নাচে। তরুণদের এমন একটি ক্ষেত্র গড়ে দেওয়ার জন্য গ্যেটে ইনস্টিটিউটকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাহনুন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ক্ষেত্রটি থেকে বেশ কয়েকজন সমসাময়িক মেধাবী শিল্পী বের হয়ে আসবেন। বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় নৃত্যের পাশাপাশি সমসাময়িক নৃত্যকে তাঁরা একটি স্তরে নিয়ে যাবেন।