জীবনটা আসলেই খুব সুন্দর: মনীষা

মনীষা কৈরালার লেখা হিলড বইটির প্রচ্ছদ তুলে ধরেছেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্‌। গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
মনীষা কৈরালার লেখা হিলড বইটির প্রচ্ছদ তুলে ধরেছেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্‌। গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

গতকাল শনিবার শেষ হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব। সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সন্ধ্যার সমাপনী বক্তব্যে নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, এ উৎসবের গায়ে নির্বাচনের বাতাস লাগেনি। আরও বক্তব্য দেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিলডা সুইনটন ও ঔপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের।

মনে মনে কেবল একটা বাক্য খোঁজেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পুরো গল্পটা আজও ভাবতে পারেন না তিনি। যদিও এ পদ্ধতিটাকে নিজেই বিজ্ঞানসম্মত মনে করেন না। তাতে কী? তিনি তো পাঠকের জন্য নয়, লেখেন নিজের জন্য, বলছিলেন এভাবেই। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অধিবেশনে সঞ্চালক ছিলেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন। 

মনীষায় মুগ্ধতা আবার
গতকাল দুপুরে বাংলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে মনীষা কৈরালা বলেন, ‘আমি ক্যানসারের প্রতি কৃতজ্ঞ, সে আমাকে জীবনের মূল্য শিখিয়েছে। যুদ্ধ করতে শিখিয়েছে।’

কিছু কঠিন বাস্তবতার কথা হাসিমুখেই বললেন, ‘অনেক মানুষের কাছে আমার অনেক আশা ছিল যে তারা এগিয়ে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি। আবার কিছু মানুষ আমার জীবনে এসেছে ত্রাণকর্তা হয়ে। জীবনটা আসলেই খুব সুন্দর, সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব উপহার এ জীবন।’

‘হিলড’ শীর্ষক সেশনে নিজের লেখা বই হিলড থেকে কয়েকটি লাইন দর্শকদের পড়ে শোনান মনীষা কৈরালা। নিজের জীবনে বয়ে যাওয়া ঝড়ের দিনগুলোর কথা বললেন। তবে একটিবারের জন্য ভেঙে পড়েননি। বলতে বলতে থেমে যাননি, বরং তাঁর জীবনের গল্প শুনে মিলনায়তনে উপস্থিত অনেকের চোখ সিক্ত হয়েছিল।

সঞ্চালনা করেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্। শুরুতে নেপালি কন্যা মনীষা বইয়ে লেখা কয়েকটি অংশ পাঠ করেন, ‘১০ ডিসেম্বর ২০১২। মরণ আমাকে ডাক দেয়। কিন্তু আমি মরতে চাইনি, বাঁচতে চাই এই সুন্দর পৃথিবীতে। আমার আকাশ মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। নিজেকে বোঝালাম, আমাকে এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।’

হিলড শিরোনামে আত্মজীবনীতে এসব কথা লিখেছেন মনীষা কৈরালা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হবে বইটি।

আলাপচারিতায় মনীষা বলেন, ‘সে সময় আমি জীবনের কঠিন একটি বাস্তবতার মধ্যে ছিলাম। শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। তখন নেপালেই ছিলাম। চিকিৎসকেরাও আমাকে বলতে চাইছিল না যে আমার ক্যানসার হয়েছে। অনেক পরে আমাকে জানানো হলো আমার জরায়ুতে ক্যানসার। সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা শোনার পর মনে হলো, আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু।’

মনীষা বলেন, ‘শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য গেলাম। ক্যানসার চিকিৎসা অনেক অনিশ্চয়তার বিষয়। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।’ 

সাহিত্য অঙ্গনে মি টুর ঝাপটা
জনপ্রিয় মার্কিন লেখক জুনো ডিয়াজ সাহিত্য অঙ্গনে প্রথম, যাঁর বিরুদ্ধে ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন শুরুর পর যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠল। এমনকি অভিযোগের জেরে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারই দেওয়া হয়নি এবার। কিন্তু এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এ থেকে অর্জনটা কী? সাহিত্য বা সাহিত্যিকের ভূমিকাই বা কী হবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে গতকাল আলোচনা হলো ‘নো নোবেল: মি টু ইন লিটারেচার’ অধিবেশনে।

ভারতীয় লেখক চন্দ্রবিভাস চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন জার্মান লেখক ওলগা গ্রাজনোয়া, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক ফিলিপ হেনশার, ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড বিয়ার্ড, মার্কিন লেখক রস পর্টার ও ভারতীয় লেখক, সম্পাদক ও সমাজকর্মী হিমাঞ্জলি শংকর। আলোচকেরা একমত, শক্তিমানেরা যৌন হয়রানি করে থাকেন। তাঁরা সম্মতির ধার ধারেন না। এখনো সর্বস্তরের নারী মুখ খোলেননি। সাহিত্যে এ আন্দোলনের প্রভাব থেকে যাবে। মার্কিন লেখক রস পর্টার বলেন, মি টু আন্দোলন পাকাপোক্তভাবে সাহিত্যে একটা অবস্থান তৈরি করবে। 

ধর্ষকেরা কি বেঁচে যাবেন?
‘রেপ বাই কমান্ড: দ্য আফটারমাথ’ অধিবেশনে ছিল রোহিঙ্গা নারীদের ওপর ঘটে যাওয়া সহিংসতার আলোচনা। শিরিন হকের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন রোহিঙ্গা আইনজীবী রাজিয়া সুলতানা, সাংবাদিক গোয়েন রবিনসন ও চিকিৎসক মারিয়াম মোল্লা। 

অন্যান্য আয়োজন
দুপুরে উৎসবের কসমিক টেন্টে ‘বাংলাদেশের মৌলিক থ্রিলার: জাগরণ ও সম্ভাবনা’ নিয়ে আলোচনা করেন থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন এবং অনুবাদক শিবব্রত বর্মন। সঞ্চালনা করেন লেখক সুমন রহমান।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গল্পকার থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা কবিতার সংকলন পিস অ্যান্ড হারমনি: সেভেন্টিওয়ান পোয়েমস ডেডিকেটেড টু শেখ হাসিনা, যা নিয়ে গতকাল আলোচনা করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ সামাদ, কামাল চৌধুরী, আবুল আজাদ, সংকলনের সম্পাদক আহমেদ রেজা, সংকলনের ইংরেজি অনুবাদক আনিস মুহাম্মদ প্রমুখ। পরে বইয়ের কবিতা নিয়ে গান করেন ইলোরা আজমী।