আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেন

বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই গুণী নির্মাতার দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান তিনি। সেখানে তাঁদের কাছে আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে চান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে জানান, চলচ্চিত্রের এই গুণী নির্মাতার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রথম আলোকে সোহেল আরমান বলেন, ‘আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রোটোকল কর্মকর্তা এস এম খুরশিদ-উল-আলম ফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী আমার বাবার অসুস্থতার খবর জানতে পেরেছেন। তিনি আমজাদ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চান। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যাই। এ সময় জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমও ছিলেন সেখানে।’

সোহেল আরমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, দেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই হোক, আমজাদ হোসেনের চিকিৎসা নিয়ে ভাবতে হবে না। তিনি আব্বুর চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি আমাদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সোহেল আরমান ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। সঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সোহেল আরমান ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। সঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দুই ছেলে। সোহেল আরমান বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ প্রথম দেখা হলো। সত্যিই তিনি মমতাময়ী। আমাদের তিনি ৩০ মিনিটের বেশি সময় দিয়েছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাদের কথা ধৈর্য নিয়ে শুনেছেন, এই কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের গুণী পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী আমজাদ হোসেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত রোববার সকালে বাসায় আমজাদ হোসেনের স্ট্রোক হয়। এরপর তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে আমজাদ হোসেন চিকিৎসক শহীদুল্লাহ সবুজের তত্ত্বাবধানে আছেন। গতকাল সোমবার চিকিৎসক প্রতিনিধিদল থেকে জানানো হয়, আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’, কসাই, ‘নয়নমণি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ ছবিগুলোর নাম নিলেই কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক আমজাদ হোসেনের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়েও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। শৈশব থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমেই তিনি অভিনয়ে করেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ সিনেমায়। এরপর তিনি অভিনয় করেন মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ সিনেমায়। আমজাদ হোসেন একসময় চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় নির্মিত জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতা পুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি। গুণী এই পরিচালক ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।