নাটক শিল্প হবে, ইশতেহারে বলতে হবে

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মামুনুর রশীদ
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মামুনুর রশীদ

ঢাকার টিভি নাটক নির্মাণে বছরে লগ্নি হয় ৮০০ কোটি টাকা। অথচ টিভি নাটককে এখনো শিল্প ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে হতাশ টেলিভিশন নাটক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবার তাঁরা দাবি করলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে নাটককে শিল্প ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন টেলিভিশন-সংশ্লিষ্ট ছয় সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে পাঁচটি দাবি তুলে ধরে টিভি নাটকের সংগঠনগুলো। মুদ্রিত প্রস্তাব পড়েন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা। তাঁদের প্রধান দাবি, বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারকে টেলিভিশন নাটককে শিল্প ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া, সংগঠনগুলোর সুপারিশগুলো তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়ন এবং সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়নে তাঁদের সম্পৃক্ত করা, পে-চ্যানেল বাস্তবায়ন, টিআরপি পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত করা এবং টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে প্রযোজকদের পাওনা টাকা আদায়ে সরকারের মধ্যস্থতা।

নাটকের নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহ উদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমরা যে কাজটি করছি, সেটার সঙ্গে সরাসরি মানুষের হৃদয় সম্পৃক্ত। নাটক প্রাত্যহিক বিনোদন ও সচেতনতার একটা বড় মাধ্যম। তাই আমাদের কাজের সুবিধার্থে সরকারের দৃষ্টি রাখা জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বল্প বাজেটের অনুষ্ঠান নিয়ে কোটি কোটি টাকার বিদেশি অনুষ্ঠানের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। স্বাধীনতার পর থেকে টিভি ও মঞ্চনাটকে আমাদের যে গৌরব অর্জিত হয়েছিল, সেটা আমরা প্রায় হারাতে বসেছি। সেটা শুধুই সিস্টেমের কারণে। আজ আমরা এক হয়েছি, সবকিছু ঠিক করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাটকের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর নেতারা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাটকের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর নেতারা

অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘আমরা আশা করি যেন স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসে। তাদের ইশতেহারে থাকুক যে, নাটককে শিল্প ঘোষণা করা হবে। প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা রক্ষার দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। পরে আমরা তাঁদের অন্তত প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিতে পারব। আমরা দেখি অন্য খাত থেকে আমাদের সংস্কৃতিচর্চার অনুদান দেওয়া হয়। সেটা না করে টেলিভিশনের জন্য আমরা আলাদা বরাদ্দ চাই।’

নাট্যকার সংঘের সাধারণ সম্পাদক এজাজ মুন্না বলেন, ‘দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এই উন্নয়ন তখনই সার্থক হবে, যখন শিল্প-সংস্কৃতির সব শাখা বিকশিত হবে। আমাদের টেলিভিশন মাধ্যম সেইভাবে পেশাদারির সঙ্গে বিকশিত হয়নি। যেকোনো প্রতিষ্ঠান নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলে, কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের কাজগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করতে চাই।’

সভাপতির বক্তব্যে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে ২৪ ঘণ্টা বিদেশি সিরিয়াল চলতে পারে না। পিক টাইমে তো পারেই না। এ নিয়ে ২০১৬ সালে শহীদ মিনারে আমরা বিশাল এক সভা করেছিলাম। সেখানে ১০টি দাবি জানিয়েছিলাম। সেই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হলেই আমাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমরা এখন সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের ইশতেহারে আমাদের দাবিগুলো উল্লেখ করে এবং সরকার গঠনের পরে যেন এগুলো বাস্তবায়ন করে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন টেলিভিশন মিডিয়া মেকাপ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর, উপস্থিত ছিলেন টেলিভিশন মাধ্যমে কাজ করা পরিচালক, শিল্পী, প্রযোজক, মেকাপ শিল্পীরা।