মুম্বাইয়ে জমজমাট 'মহান বিজয় দিবস'

মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে আয়োজক, অতিথি ও শিল্পীরা
মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে আয়োজক, অতিথি ও শিল্পীরা

পতাকা উত্তোলন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, বাংলাদেশি খাবার ও বাংলাদেশের শিল্পীদের নাচে-গানে জমজমাট ছিল মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন। গতকাল রোববার দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন উদ্‌যাপন করেছে ৪৭তম বিজয় দিবস।

মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনার মো. লুৎফর রহমান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা করেন। এরপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। ছিল মোনাজাত, বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনা।

আলোচনা সভায় উপহাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতা দিবসে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের আহ্বান জানান বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার। এই দিন বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু ফরএভার ইন আওয়ার হার্টস’ শীর্ষক এক স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিজয় দিবসের সন্ধ্যা জমে উঠেছিল নাচ, গান আর রসনায়। কার্যত, উৎসবের মেজাজ নিয়েছিল বিজয় দিবসের এই সন্ধ্যা। মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘জিম খানায়’ বাংলাদেশ উপহাইকমিশন আয়োজন করে এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং খাদ্য উৎসবের। মুম্বাইয়ের ‘জিম খানা’ এই রাতে হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহারাষ্ট্র সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুমিত মল্লিক। বাংলাদেশি শিল্পীদের নাচে–গানে সন্ধ্যাটি অন্য মাত্রা পায়। অনন্য বড়ুয়ার নৃত্য নির্দেশনায় সূচনা, প্রিয়ম, জয়া, জোয়েদি হোসেনরা বাংলাদেশের গ্রামবাংলার নাচকে মুম্বাইয়ের মঞ্চে নিয়ে আসেন।

নৃত্যশিল্পী অনন্য বড়ুয়া বলেন, ‘এর আগে নেপালে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান করেছি। তবে ভারতে এবারই প্রথম। বিজয় দিবসে মুম্বাইয়ের বুকে সবাইকে আনন্দ দিতে পেরে দারুণ লাগছে।’ গায়ক অপু বলেন, ‘আজ সকালে যখন মুম্বাইয়ের বুকে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছিল, তখন চোখ ভিজে যায়। আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। এই প্রথম বিজয় দিবসের দিন দেশের বাইরে গান গেয়েছি। অনেক গুণী মানুষের সামনে গান গেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ সাবরিনা রহমানের গানে উঠে আসে বাংলার মাটির গন্ধ।

এই রাতের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পী নয়না আফরোজের জিবে জল আনা বাংলাদেশি খাবার। নানা খাবার থরে থরে সাজানো ছিল বিজয় দিবসের এই উৎসবে। ডালের পিয়াজি, চিকেন টিক্কা, সাদা ভাত, সেদ্ধ আটার রুটি, সবজি ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, বেরেস্তা পোলাও, বেগুন খুশি, পেঁপের মালাইকারি, মাখা ডাল, রুই মাছে কারি, পমফ্রেট মাছ ভাজা, মুর্গ মশল্লম, টমেটো খাট্টা, ফিরনি, মুগ পকওয়ান পিঠা ছিল এই খাদ্যমেলায় ভোজনপ্রেমিকদের আপ্যায়নের জন্য।

রন্ধনশিল্পী নয়না আফরোজ বলেন, ‘মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করে দারুণ লাগছে। আশা করি সবার পছন্দ হবে।’

৪৭তম বিজয় উৎসবে উপস্থিত ছিলেন মহারাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মুম্বাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা, মুম্বাইয়ের ডিপ্লোম্যাটিক কোরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন সদস্য, উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মাচারী আর তাঁদের পরিবার।