সিনেমা নয়, মানুষের কাছে থাকতে চান ফারুক

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
আকবর হোসেন পাঠান ফারুক

‘সিনেমার জন্য কিন্তু আমি জাতীয় সংসদে যাইনি বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইনি। আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছে দলের কাজ করার জন্য। আমি প্রথম দলের জন্য কাজ করব, মানে মানুষের জন্য কাজ করব। মানুষের কাজ করার পর যদি সময় পাই তাহলে চলচ্চিত্রের কথা ভাবব। এরপর দ্বিতীয় কোনো কথা নাই।’ বললেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বরেণ্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

‘নয়ন মণি’, ‘সারেং বউ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ফারুক। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অভিনয়জীবন থেকে অনেক কিছু পেলেও অনেক বছর তাঁকে অভিনয়ে দেখা যায়নি। নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে চলচ্চিত্রের সংকটে তাঁকে পাওয়া গেছে সোচ্চার কণ্ঠে। স্কুলে পড়ার সময়ই রাজনীতির সঙ্গে জড়ান তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ঢাকা-১৭ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যাঁদের ভোটে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই জনগণের জন্য কাজ করবেন তিনি। এখন তাঁর প্রাধান্য নিজ এলাকার উন্নয়ন আর মানুষের শান্তি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা কয়েক বছর ধরে বেশ শোচনীয়। নানা সংকটে জর্জরিত। এই সংকটের সময়ে ফারুক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গড়ে তোলেন ‘চলচ্চিত্র পরিবার’। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ২৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে গঠন করেন ‘বাঙালি সাংস্কৃতিক বন্ধন’। আর তাই তো চিত্রনায়ক ফারুক সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাঁকে নিয়ে নতুন স্বপ্নে বিভোর হন। অনেকেই মনে করেছেন, ‘মিয়াভাই’ ফারুকের হস্তক্ষেপে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে।

কিন্তু ফারুক বললেন, ‘ভেবেছিলাম শহরের ভেতর সংসদীয় এলাকা, ভালোই হলো, কাজ কম করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনী জনসংযোগের সময় ঘুরলাম আর অনেক কিছু দেখলাম। মানুষের কাছাকাছি গেলাম। এটা ঠিক, সিনেমার মানুষ আমার কাছে অনেক কিছু আশা করে। তবে আমি কিন্তু সিনেমার মানুষ হিসেবে ওখানে যাইনি। আমি ওখানে গেছি এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে। সিনেমা আমাকে প্লাস করেছে। তা না হলে একটা মানুষ ১৭, ১৮ অথবা ২০ দিনে এভাবে বিজয়ী হয়ে আসতে পারে না। সেই কারণে এলাকার কাজে আমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আমি নির্বাচনের আগে বলেছিলাম, রাজনীতি আর অভিনয়—একটা আমার প্রাণ, অন্যটা হৃদয়। এখন মনে হচ্ছে, দুটো নিয়ে আমি বড় ঝামেলায় থাকব।’

ফারুক জানান, এত কাজের পর যদি সুযোগ পান, তবেই চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলবেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, চলচ্চিত্রের মানুষের আমার কাছে অনেক আশা। আসলে সন্তানদের অনেক আশা থাকে বাবার ওপর। কিন্তু তাদেরও বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে, বাবার আয় কতটুকু, কতটুকু তার ক্ষমতা। আমি যে এলাকার সাংসদ, সেই ঢাকা-১৭–তে মানুষের জন্য অনেক কাজ করার আছে। এই কারণেই কিন্তু মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। একটা কথা বলেছিলাম, এই নৌকা আমার। এই দাবির ওপর কিন্তু আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণেরও দাবি আছে।’

দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত ফারুক। এই সময় মাত্র দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় ছিলেন। তবে চলচ্চিত্রের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে অনৈক্য দেখেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় সেই কথাও বললেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এফডিসি একটা ভাঙা ঘর। এই ঘরটাকে সবাই মিলে তৈরি করতে বলেছি। তারপর চিন্তাভাবনার আহ্বান জানিয়েছি। কেউ যদি সাড়া না দেয়, তাহলে আমার তো কিছু করার নেই। আমি সব সময় বলব, সবাই মিলেমিশে কাজ করো। মিলেমিশে কাজ করলে কিছু একটা হবে।’