অস্কারে বাংলাদেশের রেজার কাজ করা দুটি ছবি!

‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, ওয়াহিদ ইবনে রেজা ও ‘অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার’
‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, ওয়াহিদ ইবনে রেজা ও ‘অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার’

বাংলাদেশের ওয়াহিদ ইবনে রেজা হলিউডের সুপার হিরোদের পেছনের কারিগর (ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট)। ২০১৭ সালে ‘ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস’ বিভাগে ওয়াহিদ ইবনে রেজার কাজ করা ‘ডক্টর স্ট্রেইঞ্জ’ ছবিটি অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিল। এবার তিনি কাজ করেছেন, এমন দুটি ছবি অস্কারে নমিনেশন পেয়েছে—‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ও ‘অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার’। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডের বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সনি পিকচার্স ইমেজ ওয়ার্কসের অ্যাসোসিয়েট প্রোডাকশন ম্যানেজার। আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে জানিয়েছেন, এই দুটি ছবিতেই তিনি কাজ করেছিলেন সনি পিকচার্সে যোগ দেওয়ার আগে।

ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘প্রথম সুপার হিরো ছবি হিসেবে “ব্ল্যাক প্যান্থার” অস্কারে সেরা ছবির জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। এই ছবিতে কাজ করেছি চার মাস, ছবিটির প্রথম ট্রেলার বের হওয়া পর্যন্ত। তখন ছবির প্রোডাকশন টিম গোছানো হচ্ছিল। তাই আমাকে ৩-৪ জনের কাজ করতে হয়েছে। “ব্ল্যাক প্যান্থার” ছবিতে আমাদের স্টুডিও সবচেয়ে বেশি কাজ করে। মূল চরিত্র আর ভিলেনের পোশাক আমরা বানিয়েছি। আমাদের কাছে তাই শুটিং লোকেশন থেকে অ্যাকচুয়াল কস্টিউম ডেলিভারি হয়। আমরা সেগুলো ফটোগ্রাফি করি ডিজিটাইজ করার জন্য। তখন আমি এর পুরো দায়িত্বে ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টিম গন্ডার, ট্যালন ফাইটার আর রয়েল ট্যালন নামের দুই ধরনের প্লেন বানিয়েছে। ক্লায়েন্ট কল, অ্যানিমেশন, লাইটিং, এফএক্স, কম্পোজিটিংয়ের রিভিউ করার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেলার ডেলিভারি দিই। মারভেল থেকে জানানো হয়, প্রথম ট্রেলারে পুরোনো কস্টিউম রাখবে। ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার তিন সপ্তাহ আগে জানিয়েছে, নতুন স্যুট লাগবে। তখন তড়িঘড়ি করে নতুন স্যুট রেডি করা হয় এফএক্সসহ!’

‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে অসাধারণ যে জিনিসটা দেখেছি, তা ছিল ওদের প্রোডাকশন ডিজাইনের বাইবেল। কী নেই সেখানে! ওয়াকান্ডার লোকজন কী খায়, কীভাবে ঘুমায়, কী পোশাক পরে। এমন কোনো জিনিস নেই, যা সেখানে ছিল না। প্রতিটা ডিজাইন অ্যালিমেন্ট কোথা থেকে আসছে, কেন আসছে, পেছনের ইতিহাস কী, সব ডিটেইল বলা! এ রকম কোনো দিন দেখিনি এর আগে।’

‘অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার’ ছবিটি এবার অস্কারে ভিএফএক্স বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘আমি মেথডের এই প্রজেক্টে কাজ করেছি দুই মাস। তাই ক্রেডিট না পাওয়া নিয়ে আফসোস নেই। প্রথম দুই মাসে আমরা কাজ করি স্পেস শিপ বানানোতে। রকেট যেটা চালায়, সেটা। পাশাপাশি রকেট আর গ্রুট নতুন করে বানানো হয় ডিজনির কমিককনের জন্য। এ ছাড়া আমি এই শোতে কাজ করা নতুন প্রোডাকশন কো-অর্ডিনেটরদের প্রশিক্ষণ দিই। প্রোডাকশন কীভাবে করতে হবে, তার একটা গাইডলাইন তৈরি করি। ক্লায়েন্ট কল অর্গানাইজ করি। যে কলে আবার “অ্যাভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার” আর তার পরের ছবির সব গল্প আমাকে শুনতে হয়! এখানে সবচেয়ে মজা ছিল পিটার ডিঙ্কলেজের চরিত্রের দৃশ্যগুলো। ছোট্ট মানুষটিকে কী করে জায়ান্ট বানানো যায়, তা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা হয়। আমি যখন চলে আসি, তখন সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়।’

ওয়াহিদ ইবনে রেজা জানান, মেথড ছাড়ার আগে তিনি আরও কয়েকটা সিনেমায় কাজ করেছেন। নতুন ‘গডজিলা’ ছবিটি এ বছরই আসবে। ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট’ ছবির সেকেন্ড পার্টে কিছু উদ্ভট জন্তু নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। এর মধ্যে ছিল পানির নিচের ঘোড়া আর বিরাট মুখের পাখি।