ফেসবুক পোস্ট থেকে রোশানের নায়ক হয়ে যাওয়া

২০১৬ সালের মার্চে রক্ত ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রোশানের। এরপর ২০১৭ সালে আসে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ধ্যাততেরিকি। বড় বাজেটের হলেও ছবি দুটিতে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে অভিনয়ের বড় জায়গায় তুলে ধরতে পারেননি রোশান। ২০১৮ সালে কোনো ছবি ছিল না তাঁর। তবে কোনো ছবি বা অভিনয় নিয়ে আলোচনা না থাকলেও, ঢালিউডপাড়ায় কিন্তু রোশানকে নিয়ে কথা থেমে থাকেনি।
রোশান। ছবি: প্রথম আলো
রোশান। ছবি: প্রথম আলো

আলোচনায় আছেন, আলোচনায় নেই
গত সোমবার বিকেলবেলা বিএফডিসির মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সের সামনে রোশানের যখন ফটোসেশন চলছিল, তখন বেশ কয়েকজন ভক্ত তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলা নিয়ে রীতিমতো হইহুল্লোড় শুরু করে দেন। বিরক্ত না হয়ে বরং ছবি তোলার ফাঁকে ভক্তদের আবদার রক্ষা করেন রোশান। ভারতের কলকাতায় একটি এবং দেশীয় দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে রোশানের। প্রেক্ষাগৃহে ছবিগুলোর ব্যবসা তেমন সন্তোষজনকও ছিল না। ২০১৮ সালে বেপরোয়া নামে একটি ছবিতে কাজ করলেও বছরজুড়ে তাঁর নতুন ছবির মুক্তি ছিল না। তারপরেও ঢাকার চলচ্চিত্রে থেকে থেকে শোনা গেছে তাঁর নাম। এর কারণ কী? আড্ডার শুরুতেই জানতে চাইলাম রোশানের কাছে। তিনি বললেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী ও ভক্তরাই আমাকে ভালোবেসে সারা বছর জাগিয়ে রেখেছেন। হয়তো ছবিগুলো তেমন গুণসম্পন্ন ছিল না। নবাগত হিসেবে আমার অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও কম ছিল। তারপরেও দর্শক আমাকে গ্রহণ করেছেন বলে আমি মনে করি। সাংবাদিক বন্ধুরা কাগজে আমাকে নিয়ে নিয়মিত লিখেছেন, সেটাও একটা কারণ। তবে আমার বিশ্বাস, বেপরোয়া ছবিটি মুক্তির পর আমাকে নিয়ে সবার হিসাব পাল্টে যাবে। আমাকে সবাই আমার কাজের জন্য মনে রাখবে।’

প্রত্যাশা বেপরোয়া
২০১৮ সালে বেশ কয়েকবার বেপরোয়া ছবিটি মুক্তির তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু নানা কারণে মুক্তি পেছাতেই থাকে। এবার নতুন তারিখ পড়েছে মার্চে। ছবিটি নিয়ে রোশান বলেন, ‘এটি আমার চতুর্থ ছবি। খানিকটা অভিজ্ঞ হয়েই কাজটি করেছি। এই ছবির পরিচালক কলকাতার রাজা চন্দ। তিনি এমন একজন পরিচালক, অভিনয়ে তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত শট ওকে করেন না। তাই সেই থেকেই আমার ভেতর একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে।’

বন্ধু রোশান, নায়ক রোশান
আড্ডার মধ্যে রোশানের মুঠোফোনে বন্ধু নাজমুলের কল এল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার প্রস্তাব। সঙ্গে থাকবে টিপু, মন, শিশির, শাওন—অনেকেই। এরা সবাই রোশানের স্কুলজীবনের বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সবাই এখন ঢাকার বাসিন্দা। সময় পেলেই রোশান স্কুলবন্ধুদের ডাকে ছুটে যান, আড্ডা দেন। রোশান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গেলে বাড়িতে বা বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সময় ভক্তরা দূর–দূরান্ত থেকে ছবি তুলতে আসেন, কথা বলতে আসেন। আমার চেয়ে আমার বন্ধুরা এটা বেশি উপভোগ করেন। অভিনয়ে ভালো করার উৎসাহটা তাঁদের কাছ থেকেই বেশি পাই।’

এ সময়ের কাজ

কথায় কথায় রোশান জানালেন, এ বছরটা তাঁর জন্য শুভবার্তা নিয়ে এসেছে। একদিকে বেপরোয়ার মুক্তি, অন্যদিকে পাঁচটি নতুন ছবির কাজ ধারাবাহিকভাবে শুরু হবে। ছবিগুলো হলো আয়াত, জিন, সুন্দরীতমা ও অন্য দুটির নাম এখনো ঠিক হয়নি। রোশান বলেন, ‘সব ছবিই বড় বাজেটের। ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ছবিগুলোর কাজ শুরু হবে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক ছবিগুলো যেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন, তাতে বড় কিছু হবে।’

এ জন্য কি বাড়তি কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছেন? দিনরাত প্রস্তুতির মধ্যেই আছেন বলে জানালেন রোশান। বলেন, ‘ফিট থাকার জন্য সারা বছরই শরীরচর্চা করি। নায়কদের তো করতেই হয়। এখন অভিনয় ও ফাইটের ওপর কিছু প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।’

মাসুদ রানা গুঞ্জন

কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে জাজ মাল্টিমিডিয়া। ইউনিলিভারের সহযোগিতায় ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রের অভিনেতাকে খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতা চলছে। এরই মধ্যে চলচ্চিত্রপাড়ায় শোনা যাচ্ছে, রোশানই নাকি হতে যাচ্ছেন ‘মাসুদ রানা’। এই গুঞ্জনের জবাবে রোশান রহস্যমাখা হাসি দিয়ে বলেন, ‘মাসুদ রানা হতে পারলে তো আমার অভিনয়জীবনের জন্য এটা হবে একটা বিশাল অর্জন। তবে সত্যি বলতে বিষয়টি আমি এখনো জানি না।’

কাকতালীয় ঘটনা

দুই বোন, এক ভাইয়ের সংসারে সবার ছোট রোশান। ছোটবেলা থেকেই সবার আদরের। যখন যা চেয়েছেন, তা-ই পরিবার থেকে পেয়েছেন। ছোটবেলায় মা চাইতেন, ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবেন। বাবা চাইতেন সেনা কর্মকর্তা হবেন ছেলে। আর রোশান হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা রোশানের এক ছবিতেই পরিবারের হিসাব–নিকাশ পাল্টে গেল। ফেসবুকে রোশানের ছবি দেখে ২০১৬ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে তাঁর ডাক আসে। বাকিটা রোশানের মুখ থেকে শুনি, ‘কৌতূহল নিয়েই গেলাম। সেদিনই প্রথম পরিচয় আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে। আমাকে দেখেই জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার উচ্চতা কত?” বলি, “৬ ফুট ২ ইঞ্চি।” আর অন্য কিছু জানতে না চেয়ে তত্ক্ষণাৎ আমাকে রক্ত ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। কোনো কিছু না ভেবে আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ওই দিনই চুক্তি হলো।’

পুরোনো কথা মনে করে রোশান বলেন, ‘জানেন, সাত দিন আগেও সিনেমার নায়ক হওয়ার কথা মাথায় ছিল না। তবে ছোটবেলা থেকে সিনেমা দেখতে ভালোবাসতাম। প্রিয় নায়ক সালমান শাহর প্রচুর সিনেমা দেখেছি। ঘটনা একেবারই কাকতালীয়।’

বাবার পথে রোশান?

বাবা নূরুল হক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইউনিয়নের তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে পৌরসভায় রূপান্তরিত হলে দুই দফায় মেয়রও হয়েছেন। বাবার আদর্শেই বড় হয়েছেন রোশান। বাবার সততাকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন তিনি।

ভবিষ্যতে বাবার মতো রাজনীতির মাঠে বিচরণের ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাইলে রোশানের জবাব এমন,‘এলাকার অনেকেই চান ভবিষ্যতে আমিও বাবার পথে হাঁটি। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো ভাবিনি।’