সেই আকবরকে ২২ লাখ টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আকবরের হাতে সঞ্চয়পত্র ও চেক তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
আকবরের হাতে সঞ্চয়পত্র ও চেক তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

‘আপনাদের (গণমাধ্যম) যে কী বলে ধন্যবাদ দেব, বলে বোঝাতে পারব না। আপনারা সংবাদটা ছেপেছেন বলেই সবার নজরে এসেছে। ভিডিওতে আমার স্বামীর শারীরিক অবস্থা দেখানোর পর বহু জায়গা থেকে ফোন পেয়েছি। আজ তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকে নিয়ে গেলেন গণভবনে। তিনি আকবরের সব খোঁজখবর নিয়েছেন। এখনকার অবস্থার কথাও জিজ্ঞেস করেছেন। তারপর আমার হাতে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ২ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন।’

আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এভাবেই কথাগুলো বললেন গায়ক আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা।

আজ বিকেলে টেলিফোনে আকবর বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার আহাজারি শুনেছেন। আমার সুকিচিৎসার জন্য ২২ লাখ টাকা দিয়েছেন। আশা করি আবার সুস্থ হয়ে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারব। তিনি আমার পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, এই কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নাই। দেশ–বিদেশের অনেকে যোগাযোগ করেছে আমাদের সঙ্গে। আমার স্যার হানিফ সংকেত না থাকলে তো এতদিনও বাঁচতে পারতম না মনে হয়। অসুস্থতার শুরু থেকেই তিনি আমার পাশে ছিলেন। মানুষের কাছে হাত পেতেছেন। আমাকে কলকাতায় দুই মাস রেখে নিজ খরচে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন জানান, আজ দুপুরে আকবরের স্ত্রী ও তাঁর সন্তান গণভবনে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের হাতে সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়েছেন। পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। সময় নিয়ে কথাও বলেছেন।

গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে। গান শেখা হয়নি। তবে আকবরের ভরাট কণ্ঠের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন তিনি। ২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। বাগেরহাটের এক ব্যক্তি আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছর ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান আকবর।

কয়েক দিন আগেও গান গেয়ে মঞ্চ মাতাতেন আকবর। কণ্ঠে তুলে নিতেন কিশোর কুমার, কুমার শানু, সৈয়দ আব্দুল হাদীর জনপ্রিয় সব গান। গাইতেন নিজের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় কিছু গানও। এসব গানে শ্রোতারা মাতোয়ারা হতেন, শিল্পীর সঙ্গে মেলাতেন কণ্ঠ। কণ্ঠের জাদুতে দর্শকেরা ভাসতেন সীমাহীন আনন্দে। দর্শকের তুমুল করতালিতে আকবর হতেন অনুপ্রাণিত। দর্শকের প্রিয় সেই গায়কের দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়। ডায়াবেটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পুরো শরীরে ফোসকা পড়ে গেছে তাঁর। দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। শুরুতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে, পরে ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগের ১৬ এ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহিমের তত্ত্বাবধানে আছেন চিকিৎসাধীন তিনি।

পরিবার নিয়ে আকবর মিরপুর ১৩ নম্বরে থাকেন। তাঁর বড় মেয়ে আফিয়া আকবর অথৈ হারম্যান মাইনর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে কামরুল ইসলাম ও মহরম থাকে গ্রামের বাড়ি যশোরে।