বাবার সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধা হয়নি: সোনম

সোনম ও অনিল কাপুর
সোনম ও অনিল কাপুর
গত সপ্তাহে মুক্তি পেল বলিউডের নতুন সিনেমা এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা। এই সিনেমাতেই বাবা অনিল কাপুরের সঙ্গে প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধলেন সোনম কাপুর। তাই এই সিনেমা তাঁর জন্য ‘স্পেশাল’। শেলি চোপড়া ধর পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তির আগে মুম্বাইয়ের মেহেবুব স্টুডিওতে সোনম কাপুর আহুজার মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। শীতের বিকেলের আড্ডায় উঠে এসেছে বাবা অনিল কাপুর থেকে স্বামী আনন্দ আহুজার কথা।

সম্প্রতি আপনাকে সাহসী সিনেমায় দেখা যাচ্ছেএই সিনেমাটিও কি আপনার আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ?

এটা আমার সাহসী নয়, বলতে পারেন সঠিক পদক্ষেপ। আমি খুব ভাগ্যবতী যে এ ধরনের একটা সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্র থেকে আমি যখন কিছু শিখতে পারছি, তখন এটা নিশ্চয়ই আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।

‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’ সিনেমাটির বিষয় অনেক সংবেদনশীলএ বিষয়টা ভারতীয় দর্শকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আপনার মনে হয়?

দর্শক চিনতে আমরা সব সময় ভুল করি। আজকের দর্শক মনের দিক থেকে অনেক সাহসী, বুদ্ধিমান এবং আধুনিক। আমার আগের সিনেমা ভিরে দি ওয়েডিং নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল। সবাই ধরে নিয়েছিল এই সিনেমাটি শুধু তরুণেরা পছন্দ করবে। কিন্তু আমরা পরে জেনেছি, বয়সী নারীরাও সিনেমাটি দারুণ পছন্দ করেছেন। তাই এই সিনেমাটি নিয়েও আমি আশাবাদী।

বাবা অনিল কাপুরের সঙ্গে প্রথমবার পর্দায় এলেন।বাবার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা ছিল বলেই কি এই সিনেমাটিতে অভিনয় করলেন?

এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ১৬ বছর পার হয়ে গেছে। ব্ল্যাক সিনেমার সেটে সহপরিচালক হিসেবে যখন কাজ করেছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। বলিউডে পা রাখার সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি বাবার সঙ্গে সিনেমায় কাজ করব না। আর সত্যি বলতে, এত দিন বাবার সঙ্গে অভিনয় করার মতো চিত্রনাট্যও পাইনি। এই সিনেমায় আমার বাবার চরিত্রে ড্যাড (অনিল কাপুর) একদম উপযুক্ত বলে আমার মনে হয়েছে। অনেকে মনে করতেন যে সোনম কাপুর রূপার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছে। অনিল কাপুরের মেয়ে বলে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। আমি নিজের চেষ্টায় নিজের ক্যারিয়ার গ্রাফ ওপরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আজ আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের একটা জায়গা বানিয়েছি। তাই এই সিনেমায় বাবার সঙ্গে কাজ করতে আমার এখন কোনো অসুবিধা হয়নি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একটি–দুটি সিনেমায় পরিবারের নামের জোরে কাজ করার সুযোগ হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু পরে সেটা সম্ভব হয় না। কারণ ফিল্ম একটা ব্যবসা।

অনেক সিনেমায় আপনাকে কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছেএ ধরনের চরিত্র নির্বাচনের কারণ কী?

আমি অনেক সময় সিনেমায় আমার চরিত্র, পর্দায় আমার উপস্থিতি এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিইনি। কারণ, আমি সব সময় চেয়েছি একটা ভালো সিনেমার অংশ হতে। তাই আমি ভাগ মিলখা ভাগ, প্যাডম্যান সঞ্জুর মতো সিনেমা বেছে নিয়েছি। আর আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি। তাই এ নিয়ে অত বাছবিচার নেই।

সোনম কাপুর ছবি: এএফপি
সোনম কাপুর ছবি: এএফপি

আপনি লেখালেখি এবং পরিচালনা করতেও পছন্দ করেনকবে পরিচালনায় আসছেন?

এখন ভালো কাজ পাচ্ছি। হাতে ভালো ভালো সিনেমার প্রস্তাব আছে। আমার ক্যারিয়ার বেশ ভালোই চলছে। আর লেখালেখি করতে আমি খুব ভালোবাসি। তবে এসবের জন্য আমার অনেকটা সময় চাই। তাই অভিনয় থেকে বিরতি নিলে পরেই এসব করতে পারব।

আনন্দ আহুজা আপনাকে যখন প্রথম দেখলেন, তখন তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

হা হা হা! আনন্দের মতে, প্রথম দেখা হওয়ার সময় আমি খুব বাজে একটা স্নিকার পরেছিলাম। আনন্দ বলেছিল যে ও আমার জন্য নতুন একটা স্নিকার নিয়ে আসছে। আনন্দের জুতার খুব শখ। ও সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য অ্যাডিডাসের নতুন এক জোড়া জুতো কিনে নিয়ে আসে।

আর আপনার প্রতিক্রিয়া

প্রথম দর্শনেই ওকে খুব হ্যান্ডসাম লেগেছে। সেদিন ওর মাথায় অনেক চুল ছিল। তবে এখন ওর চুল অনেক ছোট করে কাটা। শরীরচর্চার সময় ওর খুব গরম লাগে বলে চুল ছোট করে ছেঁটে ফেলেছে। আমার অবশ্য ওর বড় চুল খুব ভালো লাগে। তাই আমার জন্য আনন্দ আবার চুল বড় করছে। আনন্দকে আমি যখন দ্বিতীয়বার দেখি, তখন ওকে দেখে যোগী মনে হয়েছিল। কারণ, ও চুল এবং দাড়ি একদম কামিয়ে ফেলেছিল। আমার কাছে আনন্দের ওই ছবি আজও আছে।

আনন্দের কোন কোন গুণ আপনাকে মুগ্ধ করে?

আনন্দ মানুষ হিসেবে খুবই ভালো। আর ভালো মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল। আনন্দ খুবই শান্ত, ধীরস্থির এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তি। আর কখনো রাগ করে না। আমার মনে হয় প্রত্যেকের উচিত তার জীবনে সঠিক মানুষটির জন্য অপেক্ষা করা।

বাবা ছাড়া এই সিনেমায় জুহি চাওলার মতো অভিনেত্রী আছেনআপনি তাঁদের কাছ থেকে কী কিছু শিখেছেন?

বাবা এবং জুহি ম্যামের সবচেয়ে বড় গুণ তাঁরা দুজনই পারফেকশনিস্ট। আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা সবকিছুই চটজলদি করতে চাই। আমাদের ধরনটা ‘একটা হলেই হলো’ গোছের। আমাদের আগের প্রজন্ম কোনো কিছু শর্টকাটে করেন না। তাঁরা নিজেদের কাজের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তাঁদের কাছে থেকে এটাই শেখা উচিত। 