তারাও শোকাতুর

রাজধানীর চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য শোকাতুর বাংলাদেশের তারকাঙ্গন। এ ঘটনায় কেউ কেউ হয়েছেন হতবাক, কেউ আবার ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ জানিয়েছেন শোকবার্তা, আবার কেউ দিয়েছেন পরামর্শমূলক পোস্ট।

নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ঢালিউডের নায়ক শাকিব খান লিখেছেন, ‘ঢাকার চকবাজারে গতকাল রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি পরিবার ও পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল। সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’ শোকাহত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আহা রে চকবাজার.../ আহা রে মৃত্যুর মিছিল.../ চকবাজার...শোকবাজার.../ এ মৃত্যু চাই না...।’

ফেসবুকে একটি ছবি ভাগাভাগি করে নায়ক আরিফিন শুভ লিখেছেন, ‘আমরা স্তব্ধ, আমরা শোকাহত।’ নায়ক সাইমন সাদিক অগ্নিকাণ্ডের একাধিক ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা যদি একটু সচেতন হতাম, তাহলে হয়তো শোকের মিছিল এত বড় হতো না। যার যায়, একমাত্র সে জানে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা কত বেদনার! ভাষার দিনে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহ তাদের পরিবারকে এই ভয়াবহ শোক সহ্য করার শক্তি দান করুন।’ একই কথা লিখেছেন নায়ক নিরব। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ভাষার দিনে ভাষা হারিয়ে ভাষাহীন আমি।’ অভিনেত্রী শানৈরী দেবী শানু লিখেছেন, ‘এমন লাশের মিছিল তো চাইনি। জীবনপোড়া গন্ধে ভারী হয়ে আছে একুশ। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পোড়া শোকের গন্ধে হয়তো জীবন আবার চলবে নতুন কোনো ছন্দে! আহা রে জীবন!’

চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে পরামর্শমূলক একটি পোস্ট লিখেছেন নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রাইভেট কার বা সিএনজিতে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করে হাজার হাজার জীবন্ত বোমা নিয়ে আমরা ঘোরাফেরা করছি দিব্বি। নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন ভাড়া দিয়ে সংসার–পরিজন নিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছি দিনের পর দিন। প্রতিটি এলাকায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়াই জীবন্ত বোমার সিলিন্ডারে রান্না হচ্ছে বছরের পর বছর। জনগণ নিজের ব্যক্তিস্বার্থে এসব ক্ষুদ্র জাগতিক লাভের আশা ছাড়বে না। কিন্তু সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলো অনতিবিলম্বে সব ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার আর আবাসিক ভবনে থাকা কেমিক্যালের গোডাউনের অবস্থান শনাক্ত করে এর নিরাপত্তা বিধানে শক্ত পলিসি তৈরি করতে হবে। নতুবা নিমতলী বা চকবাজার—এই রকম আরও শত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

রক্ত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টেলিভিশন তারকা ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর লিখেছেন, ‘এ মুহূর্তে যাঁরা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা এর আশপাশে অবস্থান করছেন, তাঁরা দয়া করে ঢাকা মেডিকেলে চলে যান। চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের জন্য প্রচুর রক্ত লাগছে। চলুন অর্জিত এই ভাষা দিবসে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাই। সবার কাছে অনুরোধ করছি।’ এ ছাড়া রক্ত চেয়ে দেওয়া একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন স্তম্ভিত কণ্ঠশিল্পী ও চিরকুট দলের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমী। সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এক পোস্টে লিখেছেন, চকবাজারের আগুনে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, ঈশ্বর যেন সবাইকে ওপারে শান্তিতে রাখেন এই কামনা করি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো মৃত্যুই কখনো কাম্য নয়। সত্যি ভীষণভাবে শোকাহত।’

চকবাজার ট্র্যাজেডির কিছু ঘটনা ও খবরের শিরোনাম সাধারণ মানুষের মতো তারকাদেরও স্পর্শ করেছে। সেগুলোর মধ্যে—“গর্ভবতী স্ত্রী নামতে পারেননি; তাই স্বামীও নামেননি”, “চার বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন প্রতিদিনের মতো। চারটি মাথার পোড়া খুলি পড়ে আছে”, “বাবার কাছে সন্তান বিরিয়ানি খেতে চেয়েছে। বাবা বিরিয়ানি নিয়ে ফিরে এসে এখনো পাননি সন্তানকে”, “যমজ সন্তানদের বয়স ১ বছরের মতো। মর্গে বাবাকে খুঁজছে!”, “দুই ভাইয়ের জড়াজড়ি করা লাশ আলাদা করা যাচ্ছে না। আলাদা করার পর তাদের বুকে জড়িয়ে ধরা শিশুর লাশ। শিশুকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছিলেন দুই ভাই।”, “ছেলে নর্থ সাউথে পড়ে, সন্তানের লাশ চাচ্ছে মা। একটু মাংসের দলা হলেও চলবে, তিনি শেষবার বুকে জড়িয়ে ধরবেন”। শিরোনাম ও বাস্তব পরিস্থিতির এই চিত্রগুলো তুলে ধরে অভিনয়শিল্পী সাদিয়া জাহান প্রভা লিখেছেন, কতটা দুর্বিষহ, কতটা তুচ্ছ জীবনটা। আদরে জিইয়ে রাখা শরীরটা এভাবে বলি হয়ে যায়! ভাবা যায় না! একদম ভাবা যায় না! মনে করতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে বারবার! কারণ এরই নাম জীবন।