‘বদলা’ ছবির জন্য কি আপনার অডিশন দিতে হয়েছে?
–না। এখানে অডিশন দিতে হয়নি। আর সত্যি বলতে আমি বেঁচে গেছি। কারণ, আমি যখনই অডিশন দিয়েছি তখনই পাস করতে পারিনি।
আবার বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করলেন। সুজিত সরকারের পর সুজয় ঘোষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
–আমি যখন ছবির প্রস্তাব পাই তখন সুজয় ঘোষ, অমিতাভ বচ্চন কেউ এই ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তখন ছবির পরিচালক আর অন্যান্য চরিত্রের জন্য অভিনয়শিল্পীর খোঁজ চলছিল। ছবির চিত্রনাট্য পড়ার পর পরিচালক হিসেবে শুরুতেই আমার সুজয়ের কথা মাথায় এসেছিল। আমার মনে হয়েছিল এই ধরনের সাসপেন্স থ্রিলারের জন্য সুজয় একদম উপযুক্ত। তার ওপর এই ছবিতেও নারী চরিত্রটি খুবই শক্তিশালী। আমি সুজয়কে ফোন করে ছবিটি পরিচালনা করার জন্য বলি। সুজয় আমার কাছে চিত্রনাট্য শুনে না করে দেয়। ও বলে যে বদলা ছবিটা ওর ঘরানার নয়। এর এক মাস পর আমাকে প্রযোজক ফোন করে বলেন, সুজয়ই ছবিটি পরিচালনা করবে। আমি তো সেটা শুনে খুব রেগে যাই। আমাকে না করে দিয়ে প্রযোজকের কথায় রাজি হয়ে গেলে! আজও আমি সুজয়কে এ নিয়ে খুব খোঁটা দিই।
‘বদলা’ ছবিতে পরকীয়া প্রেম দেখানো হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
–আমি শুধু বলতে চাই, স্বামী–স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে যদি খুশি না থাকেন, প্লিজ ডিভোর্সের আবেদন করুন। অন্যের জীবন নষ্ট না করা ভালো। নিজের জীবনও খারাপ কোরো না। জীবনে এগিয়ে যাও।
ছবির পোস্টারে একটা সংলাপ আছে ‘মাফ করা দেনা হর বার সহি নেহি হোতা’ (প্রতিবারই ক্ষমা করে দেওয়া ঠিক না)– এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
–দেখুন, আমরা তো আর ঈশ্বর নই। রক্তমাংসের মানুষ। আমাদের সবার মনে বদলা নেওয়ার ভাবনা আসে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবনায় পরিবর্তন আসে। আমি ১০ বছর বয়সে যেভাবে বদলা নেওয়ার কথা ভাবতাম, ৩০ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে সেভাবে ভাবি না। তবে কিছু মহান ব্যক্তি আছেন যাঁরা ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ভাবেন। আমি সেই তালিকায় নেই।
‘পিঙ্ক’-এর পর আবার এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করলেন। নিশ্চয় তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করাটা একটু সহজ হয়ে গিয়েছিল?
–নিশ্চয়। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একবার কাজ করার পর বোঝাপড়ার মাত্রাটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। আগের ছবি থেকে এই ছবিতে তাঁর সঙ্গে অনেক বেশি দৃশ্য আছে। পুরো পৌনে ২ ঘণ্টার ছবিতে আমাদের দুজনের জেরার দৃশ্যই আছে বেশি। তাই একে অপরের মধ্যে রসায়ন থাকাটা খুব জরুরি ছিল। আমরা যেহেতু আগেই একসঙ্গে কাজ করেছিলাম, সেই সুবাদে একে অপরের কাজের ধরন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম। তাই খুব সহজেই আমরা ছবিটা শেষ করতে পেরেছি।
শুনেছি, অমিতাভ বচ্চনের বারবার রিহার্সেল দেওয়ার অভ্যাস আছে। এই ছবির ক্ষেত্রেও কি তাই হয়েছে?
–একদম ঠিক শুনেছেন। এই ছবির ক্ষেত্রেও তিনি প্রচুর মহড়া করেছেন। আমি একদম মহড়া করতে পছন্দ করি না। আমি সুজয়কে বলতাম যে স্যারের (অমিতাভ বচ্চন) রিহার্সেল হয়ে গেলে আমাকে ডাকতে। অমিতাভ বচ্চন পিঙ্ক ছবি থেকেই জানেন যে মহড়া আমার খুব অপছন্দের। তিনি মাঝেমধ্যে বলতেন যে অন্তত একবার যেন তাঁর সঙ্গে রিহার্স করি। তবে আমি খুব কমই করতাম। রিহার্সেলের সময় নিজের এনার্জি পুরোপুরি দিতাম না। এখনো কাজের প্রতি অমিতাভ বচ্চনের বাচ্চাদের মতো উত্তেজনা। তিনি মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমান। আর বাকি সময় কাজ করেন। অমিতাভ বচ্চনের মতো বয়সে গিয়ে তাঁর অর্ধেক এনার্জি পেলেই আমি সফল হব আশা করি।
ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কেউ আছেন, যাঁর ওপর আপনি বদলা নিতে চান?
–কোনো মানুষের প্রতি তিক্ততা রাখলে নিজেরই ক্ষতি হয়। বিশেষ করে নিজের শরীরের ক্ষতি হয়। অনেকের ওপরই বদলা নিতে ইচ্ছে করে। একদিন নিশ্চয় নেব। আমার সাফল্যই হবে তাঁদের প্রতি বদলা। সফলতার মাধ্যমেই আমি তাঁদের থাপ্পড় মারতে চাই! একদিন আমাকে অন্যায়ভাবে ছবি থেকে বাদ দিয়েছিলেন তাঁরা। আমি চাই আজ তাঁরা যেন চিত্রনাট্য নিয়ে আমার দরজায় আসেন। এটাই আমার বদলা বলতে পারেন।
‘বদলা’ ছবির মধ্য দিয়ে শাহরুখ খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট’-এ আপনার অভিষেক হলো। ছবির ট্রেলার বা অংশবিশেষ দেখে শাহরুখের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
–আমার কাজ তাঁর ভালো লেগেছে। তিনি সবার কাছে আমার কাজের প্রশংসা করেছেন।
শেষ সাক্ষাৎকারে আপনি আমাকে বলেছিলেন যে আপনি নিজেকে প্রথম সারির অভিনেত্রী বলে মনে করেন না। এখনো কি আপনার চিন্তাভাবনা একই আছে?
–আমি এখনো নিজেকে তারকা মনে করি না। আমি প্রথম সারির অভিনেত্রীও নই। যেদিন দর্শক আমার অভিনয়ের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখবেন, শুধু আমার জন্য টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে হলে যাবেন, দর্শক মনে করবেন আমার ছবি দেখে তিন ঘণ্টায় পয়সা উশুল হয়, তখনই আমি নিজেকে ‘স্টার’ বলে মনে করব।