শুরু হোক যুদ্ধের আগের প্রস্তুতি

‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজে ডেনেরিস টারগেরিয়ান চরিত্রে এমিলিয়া ক্লার্ক
‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজে ডেনেরিস টারগেরিয়ান চরিত্রে এমিলিয়া ক্লার্ক

‘হোল্ড দ্য ডোর’—বাক্যটির সঙ্গে ‘গেম অব থ্রোনস’ ভক্তদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে! এইচবিওর দুনিয়া কাঁপানো এই সিরিজের গত সাতটি কিস্তি নিয়ে আজকের এই লেখা। কারণ, সামনেই আসছে এই সিরিজের আট নম্বর সিজন। যাঁরা এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন গত কিস্তিগুলো, এর মধ্যে দিয়ে তাঁদের স্মৃতি আবার তরতাজা হয়ে উঠবে। আর যাঁরা এখনো দেখেননি, এক ফাঁকে পড়ে নিতে পারেন লেখাটি, প্রস্তুত হয়ে যেতে পারেন নতুন মৌসুমের জন্য।

আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার জর্জ আর আর মার্টিনের লেখা ‘আ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার’ উপন্যাস সিরিজের প্রথম বইটির নাম গেম অব থ্রোনস, যা প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। টিভি সিরিজটি আসে চিত্রনাট্যকার, টিভি প্রযোজক ও লেখক ডেভিড বেনিওফ এবং ডি বি ওয়েসের হাত ধরে। ২০১১ সালে মুক্তি পায় সিরিজটির প্রথম সিজন।

ঘটনাপ্রবাহ

ওয়েস্টরোস ও এসোস নামের দুটি কাল্পনিক মহাদেশ। ঋতুগুলো বছরব্যাপী স্থায়ী হয় সেখানে। প্রথম সিজনের শুরুতেই এক দশকের মতো স্থায়ী হওয়া গ্রীষ্মকাল শেষ হতে চলেছে। যার পরে আসবে শীত। দীর্ঘস্থায়ী হবে অন্যান্যবারের চেয়েও। সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে ‘আয়রন থ্রোন’কে কেন্দ্র করে ওয়েস্টরোসের যুদ্ধ। সেই ‘থ্রোন’ বা সিংহাসন নিয়ন্ত্রণ করে সাতটি রাজত্বকে।

সিরিজটিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হলো ওয়েস্টরোসের লর্ডদের মধ্যকার যুদ্ধ। বিশেষ করে বারাথিয়ন, ল্যানিস্টার এবং স্টার্ক পরিবারের আইরন থ্রোনকে নিয়ে যুদ্ধগুলো। এরপর আছে ডেনেরিস টারগেরিয়ানের উত্থান। টারগেরিয়ান বংশের পতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে রবার্ট বারাথিয়ন। সেই হিসেবে টারগেরিয়ান বংশের উত্তরসূরি ডেনেরিস। ‘গেম অব থ্রোনস’–এর গল্পে যেমন রয়েছে বাস্তবসম্মত সব বিষয়, আবার কাল্পনিক অনেক কিছুও এই সিরিজের প্রাণ। যেমন ডেনেরিস টারগেরিয়ান তিনটি ড্রাগন জন্ম দেন। যদিও সে সময়ের প্রেক্ষাপটে ড্রাগন আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে ডেনেরিসের স্পর্শেই হাজার বছরের পুরোনো ডিম থেকে আবার জন্ম নেয় ড্রাগন।

তৃতীয় ভাগটি হলো নাইটস ওয়াচ। একটি সশস্ত্র বাহিনী ৩০০ মাইল লম্বা ও ৭০ ফুটের উচ্চতার এক দেয়ালকে রক্ষা করে চলেছে মহাদেশের বাইরে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন পৌরাণিক প্রাণীদের থেকে। একদল বন্য মানুষও থাকে এই দেয়ালের বাইরে, যারা কোনো রাজার কাছে মাথা নোয়াতে রাজি নয়। এ ছাড়াও ‘গেম অব থ্রোনস’–এর শুরু থেকেই বিভিন্ন সংলাপে ‘হোয়াইট ওয়াকার’–এর নাম সংযুক্ত করা হয়। অনেকে মনে করে, হোয়াইট ওয়াকার বলে কোনো কিছু নেই, পৌরাণিক কাহিনিমাত্র। আবার অনেকে মনে করে, ওরা আসছে। শীত এলেই ওরা হানা দেবে।

কেন ‘গেম অব থ্রোনস’ এত জনপ্রিয়?

প্রথমবার সম্প্রচারিত হওয়ার পর থেকে ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজ হিসেবে সেরার তালিকার ওপরেই উঠে চলছে। এমনকি যাঁরা জর্জ আর আর মার্টিনের মূল বইটি পড়েছেন, তাঁরাও প্রতিটি অ্যাপিসোডের জন্য অপেক্ষা করেন। কীভাবে এই সিরিজের জনপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেল বা এমন কী আছে এখানে যে সিরিজটি নিয়ে ভক্তদের এত প্রত্যাশা, অনেকের মনে সেই প্রশ্ন আসতেই পারে।

লেখক জর্জ আর আর মার্টিন আর নির্মাতা ডেভিড বেনিওফ এবং ডি বি ওয়েস এমন এক গল্প বুনেছেন, যেখানে প্রতিটি চরিত্রের প্রতি দর্শকদের বিশেষ এক অনুভূতি কাজ করে। জোফরি, যে কিনা সবচেয়ে খারাপ রাজাদের একজন, তার প্রতি ভক্তদের চরম ঘৃণা কাজ করে। আবার বামন টিরিয়ন ল্যানিস্টারের প্রতি দর্শকদের একধরনের সহানুভূতিও কাজ করে। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি এভাবে একধরনের টান অনুভব করাতে সক্ষম হয়েছেন নির্মাতারা।

‘রেড ওয়েডিং’ হলো ‘গেম অব থ্রোনস’–এর সিজন ৩–এর ৯ নম্বর অ্যাপিসোড। যেখানে দেখানো হয় কীভাবে স্টার্ক পরিবার ধোঁকার শিকার হয়। অ্যাপিসোডটি এতই হৃদয়বিদারক ছিল যে লেখক জর্জ আর আর মার্টিন এখনো এ নিয়ে চিঠি পান। তাঁকে ধীক্কার জানান অনেক ভক্তই।

‘গেম অব থ্রোনস’–এ মৃত্যু আর আগামী দিনে কী ঘটবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেখতে দেখতে আপনি আগামী অ্যাপিসোডের কাহিনি অনুমান করবেন ঠিকই, কিন্তু তা না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। চোখের পলকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আপনাকে অবশ্যই চমকে দেবে। সিরিজের প্রতিটি অ্যাপিসোডের শেষের সব চমক আপনাকে পরের অ্যাপিসোড দেখার আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

প্রিয় চরিত্রটির সঙ্গে হুট করে বিয়ে হয়ে যেতে পারে আপনার সবচেয়ে অপছন্দের চরিত্রটির বা ঘটনাপ্রবাহে আপনার মনে হতে পারে, আগামী কিছুক্ষণ হয়তো এই চরিত্রটি মারা যাচ্ছে না। অপঘাতে হোক আর যেভাবেই হোক, মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। পরের অ্যাপিসোডে গিয়েই হয়তো দেখবেন সে মারা গেছে!

‘গেম অব থ্রোনস’–এর চরিত্রসংখ্যা আর ঘটনাপ্রবাহ অনেক বড়। এত বড় ঘটনা আপনি কাউকে বলে বোঝাতে গেলে আপনি তো পাগল হবেনই, সামনের জনও হয়ে যেতে পারে!