দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান-এর অজানা তথ্য

>
দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান ছবির পোস্টার
দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান ছবির পোস্টার
দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান কোর্টরুমের ছবি। এক তরুণ তার বাবাকে খুন করেছে—এই নিয়ে বাদী–বিবাদীর সওয়াল–জবাবের পর জুরিরা ঠিক করছেন, ছেলেটি দোষী না নির্দোষ। প্রথমে মনে হয়েছে, এটা একেবারেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ছেলেটিই অপরাধী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জুরিদের ভাবনায় এই স্থির বিশ্বাসে সংশয় আসে এবং কাহিনি পরিবর্তিত হয়ে একেবারে গোয়েন্দা কাহিনিতে রূপ নেয়। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৭ সলের ১০ এপ্রিল। জেনে নেওয়া যাক ছবিটি সম্পর্কে কিছু তথ্য।

ছবির পরিচালক সিডনি লুমেট (লুমে) ছবির শিল্পীদের একটি ঘরে তিন–চার ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন কিন্তু শুটিং করতেন না। এটা এ জন্য করতেন, যেন শিল্পীরা বুঝতে পারেন বদ্ধ জায়গায় একই ধরনের মানুষদের সঙ্গে থাকতে কেমন লাগে।


ছবিটি লাভজনক হয়নি, তাই এ ছবির প্রযোজক ও শিল্পী হেনরি ফন্ডা তাঁর পারিশ্রমিক নেননি। যদিও ছবিটি সাফল্যের মুখ দেখেনি, এরপরও হেনরি ফন্ডা মনে করেন, তাঁর অভিনীত তিনটি সেরা ছবির একটি এটি। অন্য দুটি হলো দ্য গ্রেপস অব র‌্যাথ ও দ্য অক্স বো ইনসিডেন্ট।


সিনেমা হলে বসে ছবি দেখতে পছন্দ করতেন না হেনরি ফন্ডা। তাই পুরো ছবি সিনেমা হলে বসে দেখা হতো না তাঁর। তবে এই ছবি দেখতে গিয়ে মাঝপথে উঠে যাওয়ার সময় পরিচালককে তিনি বলেছিলেন, ‘সিডনি, এটা অসাধারণ এক ছবি।’


চলচ্চিত্রে অভিযুক্ত তরুণ কোন অঞ্চলের মানুষ, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না। ছবির জন্য খুব দরকারি ছিল, সে যেন উত্তর ইউরোপের অধিবাসী না হয় এবং এ ঘটনাই জুরিদের কাউকে উত্তেজিত বা কাউকে অনুত্তেজিত রাখে।


এক নম্বর জুরি, যিনি পেশায় ফোরম্যান, তিনি একবারও ব্যাখ্যা করেননি, কেন তিনি অভিযুক্তকে দোষী বা নির্দোষ বলে মনে করেন। এই চরিত্রটি একটু অন্য রকম। তাকে কেউই জিজ্ঞেস করে না, কেন তিনি এটা করছেন কিংবা কেন তিনি এটা করছেন না। বরং সবাই ভাবেন, তিনি হয়তো ভেবেচিন্তেই বলছেন কথা। পরে যখন তিনি তাঁর রায় পরিবর্তন করেন, তখনো তার কোনো ব্যাখ্যা দেন না। তবে তার মত পরিবর্তনের ব্যাপারটা বোঝা যায় যখন তিনি ‘নির্দোষ’ বলার জন্য হাত ওঠান, তখন তাঁর মুখের অভিব্যক্তিতে।

দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান ছবির দৃশ্য
দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান ছবির দৃশ্য


২০০৮ সালে পৃথিবীর সেরা ‘কোর্টরুম’ বা আদালতবিষয়ক ছবির যে তালিকা করা হয়েছিল, তার মধ্যে সেরা দশটি ছবির দ্বিতীয়টি ছিল টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান।


১২ জন জুরির মধ্যে মাত্র দুজন জুরিকে তাদের নাম দিয়ে চেনা যায়। এ ছাড়া আর কারও নাম বলা হয়নি। এই দুজন হলেন আট নম্বর জুরি, যার নাম মি. ডেভিস এবং ৯ নম্বর জুরি, যার নাম মি. ম্যাককার্ডল। বাকি জুরিদের নাম না বলে তাদের পেশাগত পরিচয়কেই তুলে ধরা হয়েছে। যেমন জুরি নম্বর ১—হাইস্কুল ফুটবল কোচ, জুরি নম্বর ২—ব্যাংক টেলর, জুরি নম্বর ৩—বেক অ্যান্ড কল অথবা ওউনস মেসেঞ্জার সার্ভিস ইত্যাদি। এর সঙ্গে আছে গ্যারেজ মালিক, সেলসম্যান, চিত্রশিল্পী প্রমুখ।


চলচ্চিত্রটির বাজেট ছিল কম। তাই যখন ঘরের কোনো এক কোণে শুটিং হতো, তখন সে প্রান্ত থেকে পরপর কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং একবারেই করে ফেলা হতো। এর অর্থ হলো সংলাপের সময় দুই দিক থেকে নেওয়া সংলাপগুলো ধারণ করা হয়েছে অনেক দিন পর, কখনো তা কয়েক সপ্তাহ ছাড়িয়ে গেছে।


ছবিটি তিনটি বিষয়ে অস্কারে মনোনীত হয়েছিল, কিন্তু দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কোয়াই ছবির কাছে হেরে গিয়েছিল, পুরস্কারগুলো আর পায়নি।

১০
আইএমডিবির তালিকায় সেরা দশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট চলচ্চিত্র হলো দ্য টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান। দুই ঘণ্টার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের ছবি হিসেবে সেখানে শুধু এই ছবিটিই আছে, বাকিগুলোর দৈর্ঘ্য দুই ঘণ্টার বেশি। এটি আইএমডিবির সেরা ৩০টি ছবির মধ্যে একমাত্র ছবি, যার দৈর্ঘ্য এক শ মিনিটের কম।

গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর