নতুন নতুন ফারিয়া

>

শবনম ফারিয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ
শবনম ফারিয়া, ছবি: সুমন ইউসুফ

এই বৈশাখ আর সেই বৈশাখের মধ্যে তফাত আছে। গত বৈশাখে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ছিলেন একা। এবার অপুর সঙ্গে জোড় বেঁধেছেন, হয়েছেন সংসারী। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের নতুন বাড়ি সাজাতেও দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে আছেন তিনি। এত সবের ফাঁকেও আমাদের জন্য সময় বের করলেন ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রী ফারিয়া।

আদর রহমান

১ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। বর হারুনুর রশীদ, সবার কাছে পরিচিত অপু নামে। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি আর ভিডিও ফেসবুকে অনেক আলোচিত হয়। এখনো বিয়ের পরের সেই ‘নতুন নতুন’ আমেজটা কাটেনি। নতুন সংসারে নতুন বাড়ি গোছানোর ঘোরে সারা দিন অস্থির হয়ে আছেন ফারিয়া। কাজের ফাঁকেও মাথায় ঘোরে তাঁর কোন ঘরটা কীভাবে সাজাবেন। কেমন হবে তার ক্লজেট। ফারিয়ার এসব ভাবনার কথা জানতেই তাঁর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলাম আমরা। গত রোববার তিনি বৈশাখী সাজে হাজির হয়েছিলেন প্রথম আলোর কার্যালয়ে।

আগে ও পরে

আড্ডার শুরুতেই শবনম ফারিয়ার কাছে জানতে চাই, বিয়ের পর কতটা বদলেছেন তিনি, কতটা বদলেছে তাঁর জীবন। এককথায় ফারিয়ার জবাব, ‘কিছুই বদলায়নি।’ আমাদের কথা চালাচালির পর্ব শুরুতেই থেমে যায়। আমাদের ভাবনায় ছিল, হয়তো বদলে যাওয়ার তালিকাটা লম্বা হবে। তখন আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই তালিকার ব্যবচ্ছেদ করব। কিন্তু ফারিয়ার অপ্রত্যাশিত জবাব আড্ডার মোড়ই ঘুরিয়ে দিল। আমরা তাই আলাপের বাঁক বদলে যাই অন্য দিকে। প্রশ্ন করি, ‘বদলায়নি কেন?’ ফারিয়া এবার কথার ঝাঁপি খুলে বসেন। একে একে বলতে থাকেন। বিয়ের আগে তিনি ছিলেন বাড়ির আদুরে ছোট মেয়ে। ঘুম ভাঙলেই দেখতেন, মা টেবিলে নাশতা সাজিয়ে বসে আছেন। এখন ঘুম ভেঙে দেখেন শাশুড়ি নাশতা নিয়ে টেবিলে তৈরি। আগেও টানা কাজ করে যেতেন, এখনো সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। ফেব্রুয়ারিতে বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত তো কোনো ছুটিও নেননি। তাই সময় করে কী বদলেছে আর কী বদলায়নি, সেই তালিকা নিয়ে বসা হয়নি ফারিয়ার।

এবারের বৈশাখ

যেহেতু বিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনেই বদল আনতে পারেনি, তাই বৈশাখেও সব অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানালেন শবনম ফারিয়া। প্রতিবার নিয়ম করে সকালের নাশতা পরিবারের সঙ্গে করতেন, এবারও তেমনটা করার আশা ফারিয়ার। দুপুরের দিকটা কাটাবেন সহকর্মীদের সঙ্গে টিভি নাটকের শিল্পী ও কুশলীদের সংগঠন এফটিপিও আর টেলিহোমের বৈশাখী অনুষ্ঠানে। সেটাও শবনম ফারিয়ার প্রতি বৈশাখের রীতি। আর দিন শেষে বরের সঙ্গে বন্ধুদের আড্ডায় যোগ দেবেন।

পয়লা বৈশাখে বিশেষ কী

শবনম ফারিয়া জানালেন, তাঁর মায়ের হাতের সবজি রান্নায় একটা বিশেষত্ব আছে। সেই সবজিটাই তাঁর বৈশাখের বিশেষ পাওয়া। ছেলেবেলায়ও পয়লা বৈশাখ মানেই ছিল মায়ের হাতে সেই সবজি রান্না। এখনো সেটা অপরিবর্তিত। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফারিয়া এবারের বৈশাখের একটা বিশেষ ব্যাপার খুঁজে পেলেন। সেটা হলো, এ বছর তিনি বর অপুকে নিয়ে অংশ নেবেন দুটি টেলিভিশন লাইভে। গত বৈশাখে তো অপু ছিলেন না ফারিয়ার সঙ্গে। এবার সঙ্গী পাওয়ায় এটা অবশ্যই ফারিয়ায় তালিকায় নতুন কিছু যোগ করতে যাচ্ছে।

নতুন বাড়ি

ফারিয়া আর অপু তাঁদের নতুন বাড়ি গোছাচ্ছেন এখন। ইচ্ছা ছিল বৈশাখের আগেই নতুন বাসায় উঠবেন। কিন্তু কাজের চাপে আর সময় করে উঠতে পারেননি। নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছিলেন। বাসা খোঁজার দায়িত্ব ছিল অপুর ওপর, আর সেটা দেখেশুনে যাচাই–বাছাইয়ের কাজ ছিল ফারিয়ার। নতুন সংসারের ভারী জিনিসপত্র কেনার ভার অপুর কাঁধে ছিল, আর ফারিয়ার কাজ সেগুলো দিয়ে ঘর সাজানো। কিন্তু বর–বউ দুজনই ক্যারিয়ার নিয়ে এত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন যে সময়ের সঙ্গে তাঁরা পেরে উঠতে পারেননি। তাই নতুন বাড়িতে ওঠার দিনক্ষণ বদলাতে হয়েছে। এখন রোজার আগে নতুন বাসায় ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। যদিও অপুর লাগবে একটা গেমিং রুম আর ফারিয়ার একটা ড্রেসিং রুম—এ নিয়ে তাঁদের মধ্য খুনসুটি এখনো চলছে।

শবনম ফারিয়া
শবনম ফারিয়া

নানা দিকের নানা চাপ

নতুন বাড়ি গোছানো তো একটা চাপই বটে, তার ওপর সামনে আসছে ঈদ। ঈদের ‘বিশেষ’ নাটকের কাজ শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই। এত দিন একটানা করলেন পয়লা বৈশাখের নাটকের কাজ। নিশ্বাস নেওয়ারই ফুরসত পাননি শবনম ফারিয়া। চাপের মাত্রা বোঝা যায় ফারিয়ার কথাতেই। সব সময় চটপটে আর ফুরফুরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘ইদানীং খুব প্রেশার যাচ্ছে। এ মাসের ২৭ তারিখে আবার দেশের বাইরে যাচ্ছি শুটিংয়ে। ফিরব আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের পর। কী করে যে সব গোছাব। হয়তো নতুন বাসায় উঠলেও সব সামলে উঠতে পারব একেবারে ঈদের পর।’

ফারিয়া নিজের আরেকটা চাপের কথাও আমাদের জানালেন। সেই চাপ হলো মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের চাপ! দুটো বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন শবনম ফারিয়া। একটি সেরা অভিনেত্রী, অন্যটি সেরা নবীন শিল্পী। দুটোই ফারিয়া পেয়েছেন তাঁর প্রথম সিনেমা দেবীর জন্য। ফারিয়া তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন একটা গল্প বলে, ‘আমার মা তো আমার মনোনয়নের কুপন কেটে কেটে ভোট দিচ্ছে। আমি বাসায় গিয়ে দেখি অনেকগুলো কুপন। মায়ের কাছে জানতে চাইলাম, এতগুলো তুমি কোথায় পেলে? তখন মা জানাল, আমাদের বিল্ডিংয়ের ১৭টা ফ্ল্যাটে গিয়ে গিয়ে প্রথম আলোর পাতায় দেওয়া কুপন সে নিজে দাঁড়িয়ে পূরণ করিয়ে এনেছে। এরপর সেটা আমাদের ড্রাইভারকে দিয়ে প্রথম আলোয় পাঠিয়েছে। আমার চেয়ে আমার পরিবারের সবাই এই মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজিত।’

নতুন কাজ

পয়লা বৈশাখ আর ঈদ ঘিরে এখন ব্যস্ততার অন্ত নেই। একটানা ছুটি ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের জানালেন একটা ছোট্ট বিচ্ছেদের কাহিনিও, ‘জানেন, আগামী পাঁচ দিন আমার সঙ্গে আমার বরের দেখা হবে না। কাল আমি পুবাইল চলে যাচ্ছি শুটিংয়ে।’ এমন টুকটাক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে ফারিয়া আর অপুর সংসার একটু একটু করে ভালোই জমে উঠছে। তবে কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। ফারিয়া জানালেন, নতুন কাজের মধ্যে তিনি সম্প্রতি ‘সুপার মম’ নামের একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। সচরাচর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন না তিনি। কারণ, এ বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে তাঁর। ফারিয়া বলেন, ‘আমি যে পণ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারি না, সেটার জন্য আমি কোনো কাজ করতে চাই না। সুপার মম–এর থিমটা আমার খুব ভালো লেগেছে। সন্তানকে বড় করার দায়িত্ব শুধু একজন মায়ের না—এই বার্তাটা দিচ্ছে তারা। তাই এর সঙ্গে আমার যুক্ত হতে আপত্তি ছিল না।’