বাংলা ছবির সংখ্যা কমছেই

যদি একদিন ও ফাগুন হাওয়ায় ছবির পোস্টার
যদি একদিন ও ফাগুন হাওয়ায় ছবির পোস্টার

বছর বছর কমে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা, সেই সঙ্গে কমছে চলচ্চিত্রের সংখ্যাও। চলচ্চিত্র নির্মাণ কমার হার থামছে না কোনোভাবেই। ২০১৭ সালে প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল—এই চার মাসে ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২৪টি। ২০১৮ সালে এসে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫-তে। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত ১২টি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো হলো ফাগুন হাওয়ায়, যদি একদিন, রাত্রির যাত্রী, দাগ হৃদয়ে ইত্যাদি।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে যেসব ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তাতে ভালো গল্প, ভালো নির্মাণের অভাব আছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ ভালো না থাকায় ধারাবাহিকভাবে দর্শকও কমছে। লোকসান গুনতে গুনতে এই ব্যবসায় বিনিয়োগের ঝুঁকি আর নিতে চাইছেন না প্রযোজকেরা। সব মিলিয়ে অবস্থা বেশ সঙিন।

১২ বছর ধরে প্রতি ঈদে ছবি নির্মাণ করে আসছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট প্রোডাকশন। গত বছরও দুই ঈদে সুপারহিরো ও মনে রেখো নামে দুটি ছবি মুক্তি পায় এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু দুটি ছবি থেকেই বড় অঙ্কের টাকার ক্ষতি হয়। তাই এ বছর ঈদে ছবি নির্মাণ করছে না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। এর কর্ণধার তাপসী ফারুকের মতে, হলের সংখ্যা কমে যাওয়া, ঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়মিত ছবি মুক্তি না পাওয়ার কারণে বড় পর্দায় যেসব দর্শক সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাঁরা সরে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর ঈদে বড় বাজেটের দুটি ছবি থেকেই লোকসান হয়েছে। এখন চলচ্চিত্রজগতের যা অবস্থা, তাতে নতুন করে ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা নেই। আগামী ঈদে ছবির ব্যবসার অবস্থা দেখে যা করার করব।’

ভবিষ্যতে ছবির সংখ্যা আরও কমার আশঙ্কাও আছে। এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা ও হলমালিক মিঞা আলাউদ্দিন বলেন, ঢাকার চলচ্চিত্র এখন আর কোনো শৃঙ্খলার মধ্যে নেই। যাঁরা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন, তাঁরাও সঠিক পথে হাঁটছেন না। সত্যি কথা কি, চলচ্চিত্র এখন মৃতপ্রায়, এই ক্ষেত্র নিয়ে কারোর ঠিক ভাবনা নেই। দিন দিন এই অঙ্গনে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে আগামী বছর ছবির সংখ্যা আরও কমবে। হলের সংখ্যাও এক শর নিচে চলে আসবে।

প্রদর্শক সমিতির এই নেতা মনে করেন, এ অবস্থা থেকে বাঁচতে এখন যা প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে। ভারতীয় ছবি এ দেশে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। বিদেশি ছবি আমদানি ও দেশি ছবির রপ্তানির প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরির শর্ত শিথিল করে দিতে হবে। তাঁর মতে, এ ছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর কোনো পথ খোলা নেই।

দিন দিন ছবির সংখ্যা কমে যাওয়ার ব্যাপারে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘প্রযোজকেরাই ছবি নির্মাণ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রযোজকেরা বিনিয়োগ ফেরত আসার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। তাহলে প্রযোজক কেন এখানে টাকা বিনিয়োগ করবেন? আমি মনে করি, এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ছবির সংখ্যা কমতেই থাকবে, ভালো ছবিও নির্মিত হবে না।’