ভুল সামান্য, খেসারত অনেক

ফেরদৌস
ফেরদৌস

হয়তো ভাবতে পারেননি তিনি। ভাবতে পারলে হয়তো তিনি এই সামান্য ভুল করতেন না। এই ভুল যে মহিরুহের আকার নেবে, তা কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। বিষয়টি নিয়ে কখনো গভীরভাবে চিন্তাও করেননি। ভক্তরা ডেকেছেন। তাই ছুটে গেছেন। এর পেছনে যে বিরাট বিপদ অপেক্ষা করছে, তা তো বুঝতে পারেননি তিনি। এখন তিনি নিজের ভাগ্য নিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন। বলছিলাম বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌসের কথা। 

কলকাতায় ছিল ফেরদৌসের বিপুল জনপ্রিয়তা, অবাধ আসা–যাওয়া। ভালোবাসার জায়গা ছিল তাঁর এই কলকাতা। বহু সিনেমা করেছেন এই কলকাতায়, এসেছেনও বারবার। কলকাতার মানুষের সঙ্গে নিবিড় সখ্যও গড়ে ওঠে তাঁর। সংস্কৃতি অঙ্গনের যেখানে ডাক পেয়েছেন, সেখানেই তিনি ছুটে গিয়েছেন। বোঝেননি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এই ছুটে যাওয়া তাঁর জন্য কাল হয়ে যাবে!

রাজনীতির পেছনটা তিনি তাকিয়ে দেখেননি। বন্ধুরা ডেকেছেন। তাই সাড়া দিয়েছেন। ছুটে গেছেন তাঁদের ডাকে। শিল্পী মানুষ। সোজা সরল অঙ্ক নিয়ে এগিয়েছেন। ভুলটা হয়েছে এখানে কেন তিনি একজন বিদেশি হয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে গেলেন? হয়তো তিনি সেই মুহূর্তে ভেবে ওঠেননি যে এই মিছিলে যাওয়া তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে? ভারতে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে? ভারতীয় ভিসা বাতিল হবে। ভারতের খাতার কালো দাগ পড়বে। কালো তালিকায় নাম উঠবে!

সত্যিই তাই হয়ে গেল দুই দেশের জনপ্রিয় চিত্রতারকা ফেরদৌসের ভাগ্যে। গত রোববার ফেরদৌস তৃণমূলের এক প্রার্থীর প্রচারে গিয়ে যে ভুলটি করলেন, তা ফেরদৌসকে ভারতে আসার পথ বন্ধ করে দিল। তিনি ভারতের খাতায় কালো তালিকাভুক্ত হলেন। তাঁর সেই ২০২২ সাল পর্যন্ত থাকা ভিসাও বাতিল করে দিল ভারত সরকার।

ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার ফেরদৌস আহমেদের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিলে গতকাল রাতেই ফিরে গেছেন বাংলাদেশে। তাঁর ভিসা বাতিল হয়েছে। আপাতত তিনি আসতে পারবেন না ভারতে। অংশ নিতে পারবেন না শুটিংয়েও। এখন ভারতের কালো তালিকাভুক্ত তিনি।

ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অভিযোগ, তিনি ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে গত রোববার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসনের তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। ফেরদৌসের ব্যবসায়ী ভিসার শর্ত ছিল, তিনি ভারতে এসে চলচ্চিত্রে শুটিং করতে পারবেন, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সেই শর্ত ভেঙে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেন। এটাই তাঁর ভুল। আর এ ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এলে বিজেপি তীব্র প্রতিবাদ করে। তারা প্রশ্ন তোলে, কীভাবে একজন বিদেশি ভারতের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন? এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় কলকাতার অভিবাসন দপ্তর ও বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন দপ্তরে। পাশাপাশি প্রতিবেদন চাওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছেও। অভিবাসন দপ্তর থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকালই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ–সংক্রান্ত নির্দেশ পাঠানো হয় উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে। তারপরেই ফেরদৌস গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ফিরে যান।

আরও পড়ুন: