'নোলক' সিনেমার কাটতে হবে দৃশ্য

‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খান ও ববির লুক
‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খান ও ববির লুক

অনেক বিতর্কের জন্ম দেওয়া ‘নোলক’ ছবিটি দেখেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড সদস্যরা। ছবির তিনটি দৃশ্য বাদ দেওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন তাঁরা। সেসব দৃশ্য বাদ দিয়ে জমা দিলে তবেই ছবিটির ছাড়পত্র দেওয়া হবে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানালেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মুমিনুল হক।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছবিটি দেখেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা। ছবিটি দেখে তাঁরা তিনটি দৃশ্য কর্তনের ব্যাপারে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির অন্যতম সদস্য খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমরা ছবিটি দেখেছি। আমরা কয়েকটি দৃশ্যের ব্যাপারে আমাদের অবজারবেশন (পর্যবেক্ষণ) তুলে ধরেছি। দৃশ্যগুলো কর্তন করার পর ছবিটির ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’

ছাড়পত্রের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়ার আগে ‘নোলক’ সিনেমা নিয়ে পরিচালক ও প্রযোজকের দ্বন্দ্বের খবর জানা গেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতারা একসঙ্গে কয়েক দফা বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। ওই সভায় ছিলেন খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘ছবিটি নিয়ে প্রযোজক ও পরিচালকের দ্বন্দ্বের খবরটি আমরা জানি। পরিচালক রাশেদ রাহা ও প্রযোজক সাকিব ইরতেজা সনেট সমস্যার কথা জানাতে প্রযোজক সমিতি ও পরিচালক সমিতির নেতাদের কাছে আসেন। লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত জানাই। কিন্তু পরিচালক ও প্রযোজক কেউ সিদ্ধান্ত মানেননি। তাঁরা চাইলে আইনগত সহায়তা নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এ বিষয়ে আমাদের আর কিছু করার নেই। পরিচালক ও প্রযোজক যা ভালো মনে করবেন, তা–ই করবেন।’

২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের হায়দরাবাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিং শুরু হয়। শুটিং শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর ছবির নায়ক শাকিব খানের ‘ফার্স্ট লুক’ প্রকাশ করেন পরিচালক রাশেদ রাহা। রামোজি ফিল্ম সিটিতে টানা ২৮ দিন শুটিংয়ে অংশ নেন শাকিব খান, ববি, ওমর সানী, মৌসুমী, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান ও রেবেকা এবং কলকাতার রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত ও অমিতাভ ভট্টাচার্য। শুটিংয়ের আগে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বি-হ্যাপি এন্টারটেইনমেন্টের এই ছবির পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ছবির দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ের সময় পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত বছর জুলাইয়ে ছবির পরবর্তী অংশের শুটিং করতে মৌসুমী, ওমর সানী, ববি, তারিক আনাম খানকে নিয়ে কলকাতায় যান সাকিব ইরতেজা সনেট। তখন জানা যায়, ছবিটি প্রযোজক নিজেই পরিচালনা করবেন। ঘটনা জানিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন ছবির পরিচালক রাশেদ রাহা। কলকাতায় শুটিং শেষ করে সাকিব ইরতেজা সনেট দেশে ফেরার পর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি থেকে তাঁকে ডাকা হয়। এ সময় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন সাকিব ইরতেজা সনেট।

‘নোলক’ ছবির পরিচালকের স্বত্ব নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতেও। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যেন ছবিটির ছাড়পত্র না দেয়, তাই পরিচালক রাশেদ রাহা একটি চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেলে ছবিটি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দেখেছেন। এত কিছুর পর ছবিটি নিয়ে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব আর সদস্যদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালক রাশেদ রাহা ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, চলচ্চিত্রের সবাই জানেন, এই ছবির পরিচালক রাশেদ রাহা। প্রযোজক নিজেই পাঁচ তারকা হোটেলে সবার সামনে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। শুনেছি শুটিং সময়ে পরিচালক ও প্রযোজকের মধ্যে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এরপর প্রযোজক নিজেই পরিচালক সেজে ছবি ছাড়পত্রের জন্য জমা দেবেন, এটা তো হতে পারে না! চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাও জানেন বিষয়টি অমীমাংসিত। এখন পরিচালক যদি তাঁর পরিচালকের অধিকার ফিরে পেতে মামলা করেন, তাহলে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি তাঁকে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে।

‘নোলক’ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। তিনি বলেন, কাজ শেষ করার আগে ছাড়পত্রের জন্য সেন্সর বোর্ডে ছবি জমা দেওয়ার মানে কী! বিষয়টা মোটেও ঠিক হলো না।

এদিকে পরিচালক রাশেদ রাহার ব্যাপারে অভিযোগ ও আপত্তির কথা তুলে ধরে প্রযোজক সাকিব ইরতেজা সনেট বলেন, ‘পরিচালক রাশেদ রাহা তাঁর সঙ্গে অসততা করেছেন। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর আমার ছবির পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহাকে পরিচয় করিয়ে দিলেও শুটিংয়ের প্রথম দিন থেকে তিনি সেই ভরসার মান রাখতে পারেননি। তাই চুক্তিপত্র অনুযায়ী পরিচালক হিসেবে নিজের নাম দাবি করার অধিকার তিনি হারিয়েছেন।’

সাকিব ইরতেজা সনেট জানান, ছবিতে পরিচালক হিসেবে তিনি সাকিব সনেট অ্যান্ড টিম ব্যবহার করেছেন।