সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে, কিন্তু অনুদান পায়নি

Film-Reel
Film-Reel

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন আটজন পরিচালক। তবে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান পায়নি ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটি। এ বঞ্চনার প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হকের নেতৃত্বে ২২টি চলচ্চিত্রকে নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দেখা গেছে, শিশুতোষ শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর ৬৬ দশমিক ২৯ নম্বর পাওয়া নূরে আলমের ‘কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ’ ছবিটিকে অনুদান না দিয়ে ৬২ দশমিক ২৯ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আবু রায়হান মো. জুয়েলের ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’ ছবিটিকে অনুদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

একইভাবে প্রামাণ্যচিত্র শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর (৭৫ দশমিক ৪৩) পাওয়া মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটিকে অনুদান দেওয়া হয়নি। এই শাখায় অনুদান পেয়েছে হুমায়রা বিলকিসের ‘বিলকিস বিলকিস’ ও পূরবী মতিনের ‘মেলাঘর’ ছবি দুটি। বাছাই কমিটি এ ছবি দুটিকে দিয়েছেন যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৭১ এবং ৪৭ দশমিক ৮৬ নম্বর। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। চিঠিতে তিনি জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও অনুদানের প্রতিযোগিতায় শীর্ষে অবস্থান করলে, সে বছরও তাঁকে অনুদান দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান না পাওয়ার এ ঘটনা প্রমাণ করে, প্রক্রিয়াটিতে ঝামেলা রয়েছে।’

তবে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কোনো নম্বরযুক্ত তালিকার ভিত্তিতে অনুদানের সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা। শুরুতে নম্বরযুক্ত তালিকা দেওয়া হলেও সেটার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে চাননি তাঁরা। নম্বর যুক্ত হলে তাঁদের তেমন কিছুই করার থাকে না। নম্বরের বদলে বরং ছবিটি কেন অনুদান পাওয়ার যোগ্য, সেই মন্তব্যসহ বিবেচনার জন্য চূড়ান্ত কমিটিকে দেওয়া যেতে পারে। এ বছর সেভাবেই তাঁদের সামনে দেওয়া হয়েছে।

তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো চলচ্চিত্র এ বছর অনুদান পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, ‘পেয়েছে।’ এ ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রে অনুদান দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বাছাই কমিটির নম্বরের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় চূড়ান্ত কমিটি। তবে এবারই প্রথম নম্বরবিহীন তালিকা চেয়েছিল চূড়ান্ত কমিটি। ফলে তালিকার নিচের দিকে থাকা ছবিও মনোনয়ন পেয়ে গেছে।

অনুদানের সাধারণ শাখায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল তৌকীর আহমেদের ‘অদ্ভুত আঁধারে’ এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ছবি ‘মেকআপ বক্স’। কিন্তু এ ছবি দুটির বদলে অনুদানের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে অষ্টম অবস্থানে থাকা আকরাম খানের ‘বিধবাদের কথা’ ও একাদশ অবস্থানে থাকা হোসনে মোবারক রুমির ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ ছবি দুটি।

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, ‘অনুদানের সিদ্ধান্ত অনেকটা ব্যক্তিনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে অনুদান চালু করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুদানের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। অনুদান দেওয়া উচিত চিত্রনাট্যের মান ও মেধার ভিত্তিতে। চাপের ভিত্তিতে নয়।’

চলচ্চিত্রশিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রধানের উদ্দেশ্যে এ অনুদান চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার।