দুই নারীর সত্যজিৎ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন আজ। জন্ম-মৃত্যুর মাঝ বরাবর তাঁর একটি বর্ণিল জীবন আছে। সেখানে আছেন বহু নারী। বেশির ভাগই অভিনেত্রী, যাঁদের তিনি পরিচালনা করেছেন চলমান ক্যামেরার সামনে। অভিনয় করিয়ে নিয়েছেন, খ্যাতিমান হওয়ার পথ করে দিয়েছেন। কিন্তু বিরল প্রতিভার অধিকারী এই নির্মাতার নেপথ্যে ছিলেন দুজন নারী। একজন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আর অন্যজন ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র সমালোচক মারি সিটন।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় ‘পথের পাঁচালী’। এই ছবি দিয়েই ইন্দিরা গান্ধী জানতে পারলেন সত্যজিৎ রায় নামের এক প্রতিভাবান পরিচালকের কথা। সিনেমার ব্যাপারে আগাগোড়াই আগ্রহ ছিল ইন্দিরার। এমনকি ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পেছনে তাঁর ও তাঁর পরিবারের অবদান অনেক। অন্যদিকে, মারি সিটন ছিলেন নেহরু পরিবারের ঘনিষ্ঠ। ‘পথের পাঁচালী’ ছবির প্রশংসা করে ছবিটা সম্পর্কে ইন্দিরাকে জানিয়েছিলেন তিনিই। ছবিটিকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে নিও-রিয়েলিজম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই নারী। যদিও আরেক দল সমালোচক বলতে শুরু করেছিল, সত্যজিৎ রায় ভারতের দারিদ্র্যকে বিদেশে বিক্রি করছেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এসব সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন। রাজনীতির মতো শিল্পাঙ্গনেও তাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতো তখন। সুতরাং সত্যজিৎ জিতে গেলেন।

ইন্দিরা গান্ধী ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ইন্দিরা গান্ধী ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

১৯৪৭ সালে ভারতে শুরু হওয়া ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন পঞ্চাশের দশকের শুরুতে বন্ধ হয়ে যায়। সদস্যরা নিজের সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তির পর কলকাতায় এসে সত্যজিতে মজে গিয়েছিলেন মারি সিটন। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। কারণ, সত্যজিৎ রায়ের ও তাঁর সিনেমার গভীর অনুরাগী ছিলেন তিনি।

শুটিং সেটে সত্যজিৎ রায় ও শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
শুটিং সেটে সত্যজিৎ রায় ও শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সত্যজিৎ রায়ের। তাঁর কাজগুলোকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন ইন্দিরা। ষাট-সত্তরের দশকে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখনো সত্যজিতের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে আসার আগে ১৯৫৯ সালে যখন ‘ফিল্ম সোসাইটিজ অব ইন্ডিয়া’ তৈরি হচ্ছে, যখন তাঁকে সেটার সহসভাপতি পদে যোগ দেওয়ার আহ্বান করা হয়েছিল। অল্প কিছুদিন তিনি ছিলেন সেটার সহসভাপতি। সত্যজিৎ রায় ছিলেন সংস্থাটির সভাপতি। সত্যজিৎ-ইন্দিরার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কারণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল ফিল্ম সোসাইটি। এমনকি সত্যজিতের চিঠি পেয়ে ফিল্ম সোসাইটির সব ছবি থেকে সেন্সরশিপ তুলে নিয়েছিলেন ইন্দিরা। তখন তিনি ছিলেন ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।

মারি সিটন ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত
মারি সিটন ও সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত

দেশের চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব কাদের দেওয়া যায়? এসব নিয়ে ইন্দিরাকে পরামর্শ দিতেন সত্যজিৎ রায়। ওই সময়ে যাত্রা করে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট। ঋত্বিক ঘটককে তার ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ইন্দিরা গান্ধী রাজি হয়েছিলেন।

মারি সিটন
মারি সিটন

এভাবে সত্যজিতের পাশে সব সময় ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। মারি সিটন তো দীর্ঘদিন কলকাতায় থেকে গিয়েছিলেন সত্যজিতের কারণেই। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয় সত্যজিৎকে নিয়ে লেখা তাঁর বই ‘পোর্ট্রেট অব আ ডিরেক্টর: সত্যজিৎ রায়’। সত্যজিতের জীবনী হিসেবে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস