সব নাটকেরই এক শ

নাট্যমেলায় শনিবার মঞ্চস্থ ‘টু ইডিয়টস’ নাটকের একটি দৃশ্য
নাট্যমেলায় শনিবার মঞ্চস্থ ‘টু ইডিয়টস’ নাটকের একটি দৃশ্য

এ এক অন্য রকম মেলা, নাটক নিয়ে আয়োজন। ওই সব নাটক, যে নাটকগুলোর সব কটির শততম মঞ্চায়ন হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘শতকে বিদ্যমান সহস্রের আহ্বান’ স্লোগানে নাট্যতীর্থর উদ্যোগে হচ্ছে ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’। ঝড়–বৃষ্টির এই মৌসুমে আয়োজনটি নজর কেড়েছে নাট্যানুরাগীদের। প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাট্যানুরাগীরা ভিড় করছেন এখানে। ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’য় অংশ নিচ্ছে নাট্যতীর্থ, প্রাচ্যনাট, চট্টগ্রামের নান্দীকর ও কক্সবাজার থিয়েটার। 


১ মে ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’র উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যতীর্থের দল প্রধান তপন হাফিজ। উদ্বোধনীতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আয়োজনটির প্রশংসা করেন। ঢাকার বাইরেও নাট্যচর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নাট্যতীর্থ আয়োজিত ‘শত রজনী নাট্যমেলা’ শীর্ষক নাট্যোৎসবে ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরের দুটি নাট্যদল অংশগ্রহণ করছে, যা উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এ আয়োজনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যতিক্রম দিক হলো, এখানে প্রতিটি নাটকের শততম মঞ্চায়ন হচ্ছে। এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব সময় আগ্রহী।

প্রদীপ জ্বালিয়ে ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’র উদ্বোধন করেন অতিথিরা
প্রদীপ জ্বালিয়ে ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’র উদ্বোধন করেন অতিথিরা

উদ্বোধনী সন্ধ্যায় নাট্যতীর্থের ‘নাট্যবন্ধু সম্মাননা’ দেওয়া হয়। এই সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যজন শহীদুল আলম সাচ্চু, এনায়েত মাওলা জিন্নাহ, কামাল উদ্দীন কবির, বৃন্দাবন দাস ও কাজী শিলা সুলতানা।

প্রথম দিন বুধবার প্রাচ্যনাটের ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের নান্দীকারের ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’, তৃতীয় দিন শুক্রবার নাট্যতীর্থের ‘কমলা সুন্দরী’ মঞ্চস্থ হয়।

গতকাল শনিবার ছিল মেলার চতুর্থ দিন। সন্ধ্যায় কক্সবাজার থিয়েটারের ‘টু ইডিয়টস’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। রুশ গল্পকার আন্দ্রে সালতিকভ শ্চেদ্রিনের ছোটগল্প অবলম্বনে প্রখ্যাত নাট্যকার চন্দন সেনের ‘দুই হুজুরের গপ্পো’ নাটকটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন স্বপন ভট্টাচার্য। এর আগে বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘বাংলাদেশের শত রজনী অতিক্রান্ত মঞ্চনাটক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাট্যকার মাহফুজা হিলালী।

নাট্যতীর্থের দলপ্রধান তপন হাফিজের মতে, ‘শত রজনীর নাট্যমেলা’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী এই নাট্যমেলা ইতিমধ্যে জমে উঠেছে।

আয়োজক দল নাট্যতীর্থের ‘কমলা সুন্দরী’ নাটকের শততম মঞ্চায়নের দৃশ্য
আয়োজক দল নাট্যতীর্থের ‘কমলা সুন্দরী’ নাটকের শততম মঞ্চায়নের দৃশ্য

আজ রোববার নাট্যমেলার শেষ দিন। আজ আয়োজকেরা বাংলাদেশের শততম মঞ্চায়ন করেছে এমন নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হতে শততম মঞ্চায়ন পর্যন্ত অংশ নিয়েছে, এমন নাট্যকর্মীদের মধ্য থেকে ১০ জনকে ‘শত রজনী সম্মাননা’ দেওয়া হবে। এ তালিকায় আছেন থিয়েটারের ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটকের মারুফ কবীর, ঢাকা থিয়েটারের ‘কীর্তনখোলা’ নাটকের শতদল বড়ুয়া, নাট্যকেন্দ্রের ‘বিচ্ছু’ নাটকের ইকবাল বাবু, ঢাকা পদাতিকের ‘এই দেশে এই বেশে’ নাটকের দেবাশীষ ঘোষ, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ‘রক্তকরবী’ নাটকের মো. ফকরুজ্জামান চৌধুরী, নাট্যচক্রের ‘ভদ্দরনোক’ নাটকের তুলিকা চৌধুরী, শূন্যনের ‘লাল জমিন’ নাটকের মোমেনা চৌধুরী, নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ নাটকের হৃদি হক, মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘শিখণ্ডী কথা’ নাটকের পলি বিশ্বাস এবং লোক নাট্যদলের ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটকের খাদিজা মোস্তারী। সবশেষে রয়েছে নাট্যতীর্থের ‘দ্বীপ’ নাটকের শততম মঞ্চায়ন।