অপেক্ষায় থাকি কখন ঢাকায় আসব: অনুপম

গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ফিকি) ৫৫ বছরের যাত্রা উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে গান গাইতে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শিল্পী অনুপম রায়। বিশ্রামকক্ষের আলাপচারিতায় উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ। এই লেখায় সেই আড্ডার চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন মোছাব্বের হোসেনগোলাম রব্বানী। টানা ১০টি গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নামলেন অনুপম রায়। সহযোগীর হাতে গিটার গছিয়ে দিয়ে দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে নিতে বললেন। ‘প্রথম আলো থেকে এসেছি, মিনিট দশেক আড্ডা দিতে চাই’ শুনেই স্বভাবজাত মুচকি হাসি। এরপর একের পর এক প্রশ্নের উত্তর।
ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৫ বছর উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে গাইছেন অনুপম। ছবি: প্রথম আলো
ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৫ বছর উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে গাইছেন অনুপম। ছবি: প্রথম আলো

প্রথম ঢাকায় আসা…
ঢাকার কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। শাহবাগ, টিএসসি, এখানকার খাওয়া-দাওয়া, আতিথেয়তার কথা বড়দের কাছ থেকে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। প্রথম আসাটা ২০১১ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেছিলাম। সেই স্মৃতি…এত আনন্দ করেছি…ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। এখন তো নিয়মিত আসা হয়। অপেক্ষায় থাকি, কখন ঢাকায় আসব! কারণ, এখানকার সবকিছুই মুগ্ধ করে আমাকে। এখন আমি অনেক রাস্তা চিনি। গুলশান–বানানীতে একা একা ঘুরে বেড়াতে পারি।

সুমন, অঞ্জন, নচিকেতা…
কবীর সুমন, অঞ্জন, নচিকেতা—তাঁরা আমাদের শৈশবের নায়ক। বড় হয়েছি তাঁদের গান শুনে। এই প্রজন্মটা গান গেয়েছিল বলেই আমরা সাহস পেয়েছি গান গাওয়ার। আমাদের একটা লক্ষ্য হয়ে গিয়েছিল যে তাঁদের মতো যদি গান গাইতে পারি।

মাইলস থেকে জেমস
আমার শৈশব–কৈশোরে বাংলাদেশের শিল্পীরাও দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। স্কুলে যখন পড়তাম, তখন থেকেই মাইলস, এলআরবি, সোলস, জেমস—তাঁদের গান শুনতাম। এখন যাঁরা ভালো গাইছেন, তাঁদের গানও শোনা হয়।

গাওয়া ও লেখা
গান গাওয়া ও লেখা—দুটোই খুব উপভোগ করি। কোনটা বেশি প্রিয়, ঠিক বলতে পারব না। মানুষের বিশেষ অনুভূতি নিয়েও আমি গান লিখি।

প্রসঙ্গ শ্রীজাত…
বাংলা ভাষার আধুনিক যুগের কবিদের মধ্যে শ্রীজাত অন্যতম। শ্রীজাতকে আমি সম্মান করি। খুবই ভালো সম্পর্ক আমাদের। তিনি বহুদিন থেকে কবিতা লিখছেন। শ্রীজাতর সব থেকে আলাদা দিক, প্রতিনিয়ত প্রচুর কবিতা আসে তাঁর মাথায়। ভিঞ্চিদা ছবির গান বের হওয়ার পর তিনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। অনেক কথা হয়েছে। সেখানে টাইটেল গানের মধ্যে ‘বুকের ভেতর লালন সাঁই’ লাইনটির বিশেষ প্রশংসা পেয়েছি তাঁর কাছ থেকে।

আমার সেরা গান

সেরা গানের প্রেক্ষিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায়। সম্প্রতি কণ্ঠ নামে একটি সিনেমা হচ্ছে কলকাতায়। জয়া আহসান অভিনয় করেছেন। কণ্ঠ খুব অদ্ভুত ধরনের ছবি। একজন ক্যানসার সার্ভাইভারকে নিয়ে। সেই ছবির গান আমি করেছি। ‘আলোতে আলোতে ঢাকা’ শিরোনামে একটা গানও প্রকাশিত হয়েছে। এ রকম গান আমি লিখিনি আগে। গানটা শুনে মানুষও খুব সাড়া দিচ্ছে।

বাংলাদেশের নোবেল…

জি বাংলার সারেগামাপা অনুষ্ঠানে গান গাইছে বাংলাদেশের নোবেল। নোবেল খুব প্রতিভাবান শিল্পী। মন-প্রাণ দিয়ে গান করছে। আশা করছি, সে খুব ভালো করবে। ভিঞ্চিদা ছবিতে আমার সুরে সে একটা গানও গেয়েছে। নোবেলের যদি কোনো রকম সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমি আছি তার পাশে।

বারবার ছুটে আসা

দেশে বা দেশের বাইরে আমার গান কেউ গাইছে, শুনলে খুব ভালো লাগে। গান দিয়ে মানুষকে ছুঁতে পাওয়া...। অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসায়, এখানকার আতিথেয়তায় বাংলাদেশে বারবার ছুটে আসি।

শিল্পী মানুষকে যুক্ত করে

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা আমার মনকে প্রচণ্ড স্পর্শ করেছে। আমি চাই, এমন ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে। শিল্পীমাত্রই সারা জীবন শান্তির কথা বলেছেন, মিলনের কথা বলেছেন। সবাই একসঙ্গে থাকব, শান্তিতে থাকব—লালন থেকে শুরু করে সবাই এই কথাই বলেছেন। কিন্তু তারপরও বারবার বাধা আসে, আঘাত আসে। তাই বলে আমরা তো ভেঙে যাইনি। আমি মনে করি, মনুষ্যত্বের জয় এখানেই।